আজাদী সৈনিকের ডায়েরী/আজাদ হিন্দ গেজেট

২০শে ডিসেম্বর ১৯৪৩:

 আজাদ হিন্দ্ গেজেটের মাসিক সংখ্যায় একটি ঘোষণা আছে—

 ‘পূর্ব এশিয়ার ভারতীয়গণ এক্ষণে আর কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রজা নয়। তাঁহারা আজ অস্থায়ী আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্টের প্রজা বলিয়া গর্ব অনুভব করিতে পারেন। মালয়ের প্রত্যেক ভারতীয়কে এক কথাটি বুঝাইয়া দিতে হইবে। আমাদের দেশবাসীগণের মধ্যে এই নূতন মর্য্যাদার দায়িত্ববোধ জাগ্রত করিবার জন্য স্থির করা হইয়াছে যে ইণ্ডিয়ান হণ্ডিপেণ্ডেন্স্ লীগের প্রত্যেক সভ্যকে অস্থায়ী আজাদ হিন্দ্ গভর্ণমেণ্টের নিকট অনুগত্যের শপথ গ্রহণ করিতে হইবে।’

 আজ সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরে আমাদের নিজস্ব আজাদ হিন্দ্ রেডিওর বেতার বক্তৃতা শুনিলাম।

২১শে ডিসেম্বর ১৯৪৩:

 আজ সন্ধ্যায় কিছু ভালো লাগিতেছে না। পশ্চিমের আকাশে সুর্য্যাস্তের রঙের খেলা চলিয়াছে—তাহারই খানিকটা ঘরের ভিতরে সমস্ত জিনিষের উপর রঙ্ ফলাইয়া দিয়াছিল। এমন সুন্দর সন্ধ্যা—যদি জানকী আসিত।

 এমন সময় দরজার পর্দা সরিয়া গিয়া দেখা দিল, দুটি চঞ্চল চোখ। জানকী আসিয়াছে। গতিভঙ্গীমায় উচ্ছ্বলিত লাবণ্যের তরঙ্গ তুলিয়া ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল।

 ‘তোমার কথাই ভাবিতেছিলাম।’

 ‘মিথ্যা কথা বলো না—কাহার কথা ভাবিতেছিলে কে জানে?’

 তাহার চোখে রহস্যের কুহেলিকা।

 ‘কি দেখিতেছ?’

 ‘তোমাকে। আমি ভাবিতেছিলাম—তোমার চোখের চাহনি, তোমার বন্দুকের গুলির অপেক্ষা কম শক্তিশালী কখনই নয়।’

 উজ্জ্বল হাসির ধারায় অভিষিক্ত করিয়া সে বিছানার উপর আমার পাশে আসিয়া বসিল।

 আমি বলিলাম—‘জানকী, তোমার গান শুনাইবে বলিয়াছিলে। আজ গাহিতে হইবে।’

 ‘আমি তো গান ভাল জানি না। আমাদের নূতন জাতীয় সঙ্গীত শুনিয়াছ কি?’

 ‘তাহাই গাও।’

 জানকী গাহিল।