কথামালা (১৮৮৫)/শিকারি কুকুর



শিকারি কুকুর

এক ব্যক্তির একটি অতি উত্তম শিকারি কুকুর ছিল। তিনি যখন শিকার করিতে যাইতেন, কুকুরটি সঙ্গে থাকিত। ঐ কুকুরের বিলক্ষণ বল ছিল; শিকারের সময়, কোনও জন্তুকে দেখাইয়া দিলে, সে সেই জন্তুর ঘাড়ে এমন কামড়াইয়া ধরিত যে, উহা আর পলাইতে পারিত না। যত দিন তাহার শরীরে বল ছিল, সে, এই রূপে, আপন প্রভুর যথেষ্ট উপকার করিয়াছিল।

 কালক্রমে, ঐ কুকুর, বৃদ্ধ হইয়া, অতিশয় দুর্ব্বল হইয়া পড়িল। এই সময়ে, তাহার প্রভু, এক দিন, তাহাকে সঙ্গে লইয়া, শিকার করিতে গেলেন। এক শূকর, তাঁহার সম্মুখ হইতে, দৌড়িয়া পলাইতে লাগিল। শিকারি ব্যক্তি ইঙ্গিত করিবা মাত্র, কুকুর, প্রাণপণে দৌড়িয়া গিয়া, শূকরের ঘাড়ে কামড়াইয়া ধরিল; কিন্তু, পূর্ব্বের, মত বল ছিল না, এজন্য, ধরিয়া রাখিতে পারিল না; শূকর অনায়াসে ছাড়াইয়া চলিয়া গেল।

 শিকারি ব্যক্তি, ক্রোধে অন্ধ হইয়া, কুকুরকে তিরস্কার ও প্রহার করিতে আরম্ভ করিলেন। তখন কুকুর কহিল, মহাশয়! বিনা অপরাধে, আমায় তিরস্কার ও প্রহার করেন কেন। মনে করিয়া দেখুন, যত দিন আমার বল ছিল, প্রাণপণে, আপনকার কত উপকার করিয়াছি। এক্ষণে, বৃদ্ধ হইয়া, নিতান্ত দুর্ব্বল ও অক্ষম হইয়া পড়িয়াছি বলিয়া, তিরস্কার ও প্রহার করা উচিত নহে।