কপালকুণ্ডলা (১৮৭০)/দ্বিতীয় খণ্ড/চতুর্থ পরিচ্ছেদ

চতুর্থ পরিচ্ছেদ।

শিবিকারোহণে।

——————খুলিনু সত্বরে
কঙ্কন, বলয়, হার, সিঁথি, কণ্ঠমালা,
কুণ্ডল, নূপুর, কাঞ্চি।

মেঘনাদ বধ।

গহনার দশা কি হইল বলি শুন। মতিবিবি গহনা রাখিবার জন্য একটী রৌপ্যজড়িত হস্তিদন্তের কৌটা পাঠাইয়া দিলেন। দস্যুরা তাঁহার অল্প সামগ্রীই লইয়াছিল—নিকটে যাহা ছিল তদ্ব্যতীত কিছুই পায় নাই।

 নবকুমার দুই এক খানি গহনা কপালকুণ্ডলার অঙ্গে রাখিয়া অধিকাংশ কৌটায় তুলিয়া রাখিলেন। পরদিন প্রভাতে মতি বিবি বর্দ্ধমানাভিমুখে, নবকুমার সপত্নী সপ্তগ্রামাভিমুখে, যাত্রা করিলেন। নবকুমার কপালকুণ্ডলাকে শিবিকাতে তুলিয়া দিয়া তাঁহার সঙ্গে গহনার কৌটা দিলেন। বাহকেরা সহজেই নবকুমারকে পশ্চাৎ করিয়া চলিল। কপালকুণ্ডলা শিবিকাদ্বার খুলিয়া চারি দিক্ দেখিতে দেখিতে যাইতেছিলেন; এক জন ভিক্ষুক তাঁহাকে দেখিতে পাইয়া ভিক্ষা চাহিতে চাহিতে পালকির সঙ্গে সঙ্গে চলিল।

 কপালকুণ্ডলা কহিলেন, “আমার ত কিছু নাই, তোমাকে কি দিব?”

 ভিক্ষুক কপালকুণ্ডলার অঙ্গে যে দুই এক খানা অলঙ্কার ছিল, তৎপ্রতি অঙ্গুলি নির্দ্দেশ করিয়া কহিল, “সে কি মা! তোমার গায়ে হীরা মুক্তা—তোমার কিছু নাই?”

 কপালকুণ্ডলা জিজ্ঞাসা করিলেন, “গহনা পাইলে তুমি সন্তুষ্ট হও?”

 ভিক্ষুক কিছু বিস্মিত হইল। ভিক্ষুকের আশা অপরিমিত। ক্ষণমাত্র পরে কহিল, “হই বই কি?”

 কপালকুণ্ডলা অকপটহৃদয়ে কৌটা সমেত সকল গহনা গুলিন ভিক্ষুকের হস্তে দিলেন। অঙ্গের অলঙ্কার গুলিনও খুলিয়া দিলেন।

 ভিক্ষুক ক্ষণেক বিহ্বল হইয়া রহিল। দাস দাসী কিছুমাত্র জানিতে পারিল না। ভিক্ষুকের বিহ্বল ভাব ক্ষণিক মাত্র। তখনই এ দিক্ ও দিক্ চাহিয়া ঊর্দ্ধশ্বাসে গহনা লইয়া পলায়ন করিল। কপালকুণ্ডলা ভাবিলেন, ভিক্ষুক দৌড়াইল কেন?