চাঁদের পাহাড়/দশম পরিচ্ছেদ


দশ

 সে দিন সে রাত্রিও কেটে গেল। শঙ্কর এখন দুঃসাহসে মরীয়া হয়ে উঠেচে। যদি তাকে প্রাণ নিয়ে এ ভীষণ অরণ্য থেকে উদ্ধার পেতে হয়, তবে তাকে ভয় পেলে চলবে না। দুদিন সে কোথাও না গিয়ে তাঁবুতে বসে মন স্থির করে ভাববার চেষ্টা করলে, সে এখন কি করবে। হঠাৎ তার মনে হোল, আলভারেজের সেই কথাটা - সলসবেরি...এখান থেকে পূব-দক্ষিণ কোণে আন্দাজ ছশো মাইল...

 সলসবেরি।...দক্ষিণ রোডেশিয়ার রাজধাণী সলসবেরি। যে করে হোক, পৌঁছুতেই হবে তাকে সলসবেরিতে। সে এখনও অনেকদিন বাঁচবে, তার জন্মকোষ্ঠীতে লেখা আছে। এ জায়গায় বেঘোরে সে মরবে না।

* * * *
* * *

 শঙ্কর ম্যাপগুলো খুব ভালো করে দেখলে। পর্টুগিজ গবর্ণমেণ্টের ফরেষ্ট সার্ভের ম্যাপ, ১৮৭৩ সালের রয়েল মেরিন সার্ভের তৈরী উপকূলের ম্যাপ, ভ্রমণকারী স্যার ফিলিপো ডি ফিলিপির ম্যাপ, এ বাদে আলভারেজের হাতে আঁকা ও জিম কার্টারের সইযুক্ত একখানা জীর্ণ, বিবর্ণ খসড়া নক্সা। আলভারেজ বেঁচে থাকতে সে এই সব ম্যাপ বুঝতে একবারও ভাল করে চেষ্টা করেনি, এখন এদের বোঝার ওপর তার জীবন মরণ নির্ভর করচে। সলসবেরির সোজা রাস্তা বার করতে হবে। এ স্থান থেকে তার অবস্থিতি রিন্দুর দিক নির্ণয় করতে হবে, রিখটারসভেল্ড অরণ্যের এ গোলোক ধাঁধা থেকে তাকে উদ্ধার পেতে হবে - সবই এই ম্যাপগুলির সাহায্যে।

 অনেক দেখবার শুনবার পরে ও বুঝতে পারলে এই অরণ্য ও পর্ব্বতমালার সম্বন্ধে কোনো ম্যাপেই বিশেষ কিছুই দেওয়া নেই - এক আলভারেজের ও জিম কার্টারের খসড়া ম্যাপখানা ছাড়া। তাও এত সংক্ষিপ্ত এবং তাতে এত সাঙ্কেতিক ও গুপ্তচিহ্ন ব্যবহার করা হয়েচে যে, শঙ্করের পক্ষে তা প্রায় দুর্ব্বোধ্য। কারণ এদের সব সময়েই ভয় ছিল যে ম্যাপ অপরের হাতে পড়লে, পাছে আর কেউ এসে ওদের ধণে ভাগ বসায়।

 চতুর্থ দিন শঙ্কর সে স্থান ত্যাগ করে আন্দাজ মত পূবদিকে রওনা হোল। যাবার আগে কিছু বনের ফুলের মালা গেঁথে আলভারেজের সমাধির ওপর অর্পণ করলে।

 ‘বুশ ক্র্যাফট’ বলে একটা জিনিষ আছে। সুবিস্তীর্ণ, বিজন, গহন অরণ্যানীর মধ্যে ভ্রমণ করবার সময়ে এ বিদ্যা জানা না থাকলে বিপদ অবশ্যম্ভাবী। আলভারেজের সঙ্গে এতদিন ঘোরাঘুরি করার ফলে, শঙ্কর কিছু কিছু ‘বুশ ক্র্যাফট’ শিখে নিয়েছিল, তবুও তার মনে সন্দেহ হোল যে, এই বন একা পাড়ি দেবার যোগ্যতা সে কি অর্জ্জন করেচে? শুধু ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে তাকে চলতে হবে, ভাগ্য ভাল হয় বন পার হতে পারবে, ভাগ্য প্রসন্ন না হয় - মৃত্যু।

 দুটো তিনটে ছোট পাহাড় সে পার হয়ে চলল। বন কখনো গভীর,কখনো পাতলা। কিন্তু বৃহৎ বৃহৎ বনস্পতির আর শেষ নেই। শঙ্করের জানা ছিল যে, দীর্ঘ এলিফ্যাণ্ট ঘাসের জঙ্গল এলে বুঝতে হবে যে বনের প্রান্তসীমায় পৌছানো গিয়েচে। কারণ গভীর জঙ্গলে কখনো এলিফ্যাণ্ট বা টুসক্ ঘাস জন্মায় না। এলিফ্যাণ্ট ঘাসের চিহ্ন নেই কোনোদিকে - শুধুই বনস্পতি আর নীচু বনঝোপ।

 প্রথম দিন শেষ হোল এক নিবিড়তর অরণ্যের মধ্যে। শঙ্কর জিনিসপত্র প্রায় সবই ফেলে দিয়ে এসেছিল, কেবল আলভারেজের মানলিকার রাইফেলটা, অনেকগুলো টোটা, জলের বোতল, টর্চ্চ, ম্যাপগুলো, কম্পাস, ঘড়ি, একখানা কম্বল ও সামান্য কিছু ঔষধ সঙ্গে নিয়েছিল — আর নিয়েছিল একটা দড়ির দোলনা। তাঁবুটা যদিও খুব হালকা ছিল, কিন্তু তা সে বয়ে আনা অসম্ভব বিবেচনায় ফেলেই এসেচে।

 দুটো গাছের ডালে মাটী থেকে অনেকটা উঁচুতে সে দড়ির দোলনা টাঙালে এবং হিংস্র জন্তুর ভয়ে গাছতলায় আগুন জ্বালালে। দোলনায় শুয়ে বন্দুক হাতে জেগে রইল কারণ ঘুম অসম্ভব একে ভয়ানক মশা, তার ওপর সন্ধ্যার পর থেকে গাছতলার কিছুদূর দিয়ে একটা চিতাবাঘ যাতায়াত সুরু করলে। গভীর অন্ধকারে তার চোখ জ্বলে যেন দুটো আগুনের ভাঁটা, শঙ্কর টর্চ্চের আলো ফেলে, পালিয়ে যায়, আবার আধঘণ্টা পরে ঠিক সেইখানে দাঁড়িয়ে ওর দিকে চেয়ে থাকে। শঙ্করের ভয় হোল, ঘুমিয়ে পড়লে হয়তো বা লাফ দিয়ে দোলনায় উঠে আক্রমণ করবে। চিতাবাঘ অতি ধূর্ত্ত জানোয়ার। কাজেই সারারাত্রি শঙ্কর চোখের পাতা বোজাতে পারলে না। তার ওপর চারিধারে নানা বন্য-জন্তুর রব। একবার একটু তন্দ্রা এসেছিল, হঠাৎ কাছেই কোথাও একদল বালকবালিকার খিলখিল হাসির রবে তন্দ্রা ছুটে গিয়ে ও চমকে জেগে উঠল। ছেলেমেয়েরা হাসে কোথায়? এই জনমানবহীন অরণ্যে বালকবালিকাদের যাতায়াত করা বা এত রাত্রে হাসা উচিত নয় তো? পরক্ষণেই তার মনে পড়ল একজাতীয় বেবুনের ডাক ঠিক ছেলেপুলের হাসির মত শোনায়, আলভারেজ একবার গল্প করেছিল। প্রভাতে সে গাছ থেকে নেমে রওনা হোল। বৈমানিকরা যাকে বলেন 'ফ্লাইঙ্গি ব্লাইণ্ড' - সে সেইভাবে বনের মধ্য দিয়ে চলচে, সম্পুর্ণ ভাগ্যের ওপর নির্ভর করে, দু চোখ বুঁজে। এই দুদিন চলেই সে সম্পূর্ণভাবে দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েচে - আর তার উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম জ্ঞান নেই। সে বুঝলে কোনো মহারণ্যে দিক ঠিক রেখে চলা কি কঠিন ব্যাপার। তোমার চারিপাশে সব সময়েই গাছে গুঁড়ি, অগণিত, অজস্র, তার লেখাজোখা নেই। তোমার মাথার ওপর সব সময় ডালপালা লতাপাতায় চন্দ্রাতপ। নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য্য দৃষ্টিগোচর হয় না। সূর্য্যের আলোও কম, সব সময়েই যেন গোধূলি। ক্রোশের পর ক্রোশ যাও, ঐ একই ব্যাপার। এদিক কম্পাস অকেজো, কি করে দিক ঠিক রাখা যায়?

* * * *
* * *

 পঞ্চম দিনে একটা পাহাড়ের তলায় এসে সে বিশ্রামের জন্যে থামল। কাছেই একটা প্রকাণ্ড গুহার মুখ, একটা ক্ষীণ জলস্রোত গুহার ভেতর থেকে বেরিয়ে বনের মধ্যে এঁকে বেঁকে অদৃশ্য হয়েচে।

 অতবড় গুহা কখনো না দেখার দরুণ, একটা কৌতূহলের বশবর্ত্তী হয়েই সে জিনিষপত্র বাইরে রেখে গুহার মধ্যে ঢুকলো। গুহার মুখে খানিকটা আলো - ভেতরে বড় অন্ধকার, টর্চ্চ জ্বেলে সন্তর্পনে অগ্রসর হয়ে, সে ক্রমশঃ এমন এক জায়গায় এসে পৌঁছুলো, যেখানে ডাইনে বাঁয়ে আর দুটো মুখ। ওপরের দিকে টর্চ্চ উঠিয়ে দেখলে, ছাদটা অনেকটা উচুঁ। সাদা শক্ত নুনের মত ক্যালসিয়াম কার্ব্বোনেটের সরু মোটা ঝুরি ছাদ থেকে ঝাড় লণ্ঠনের মত ঝুলচে।

 গুহার দেওয়ালগুলো ভিজে, গা বেয়ে অনেক জায়গায় জল খুব ক্ষীণধারায় ঝরে পড়চে। শঙ্কর ডাইনের গুহায় ঢুকলো, সেটা ঢুকবার সময় সরু, কিন্তু ক্রমশঃ প্রশস্ত হয়ে গিয়েচে। পায়ে পাথর নয়, ভিজে মাটী। টর্চ্চের আলোয় ওর মনে হোল, গুহাটা ত্রিভুজাকৃতি। ত্রিভূজের ভূমির এক কোণে আর একটা গুহামুখ। সেটা দিয়ে ঢুকে শঙ্কর দেখলে সে যেন দুধারে পাথরের উঁচু দেওয়াল-ওয়ালা একটা সংকীর্ণ গলির মধ্যে এসেচে। গলিটা আঁকা বাঁকা, একবার ডাইনে একবার বাঁয়ে সাপের মত এঁকে বেঁকে চলেচে - শঙ্কর অনেক দূর চলে গেল গলিটা ধরে।

 ঘণ্টা দুই এতে কাটলো। তারপর সে ভাবলে, এবার ফেরা যাক। কিন্তু ফিরতে গিয়ে সে আর কিছুতেই সেই ত্রিভুজাকৃতি গুহাটা খুঁজে পেল না। কেন, এই তো সেই গুহা থেকেই এই সরু গুহাটা বেরিয়েচে, সরু গুহা তো শেষ হয়েই গেল - তবে সে ত্রিভুজ গুহা কৈ?

 অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরে শঙ্করের হঠাৎ কেমন আতঙ্ক উপস্থিত হোল। সে গুহার মধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেনি তো? সর্ব্বনাশ।

 সে বসে আতঙ্গঙ্ক দূর করবার চেষ্টা করলে, ভাবলে - না ভয় পেলে তার চলবে না। স্থির বুদ্ধি ভিন্ন এ বিপদ থেকে উদ্ধারের উপায় নেই। মনে পড়ল, আলভারেজ তাকে বলে দিয়েছিল, অপরচিত স্থানে বেশীদূর অগ্রসর হবার সময়ে পথের পাশে সে যে কোন চিহ্ন রেখে যায়, যাতে আবার সেই চিহ্ন ধরে ফিরতে পারে। এ উপদেশ সে ভুলে গিয়েছিল। এখন উপায়?

 টর্চ্চের আলো জ্বালতে তার আর ভরসা হচ্ছে না। যদি ব্যাটারি ফুরিয়ে যায়, তবে নিরুপায়। গুহার মধ্যে অন্ধকার সূচীভেদ্য। সেই দুর্ণিবীক্ষ্য অন্ধকারে এক পা অগ্রসর হওয়া অসম্ভব। পথ খুঁজে বার করা তো দূরের কথা।

 সারাদিন কেটে গেল - ঘড়িতে সন্ধ্যা সাতটা। এদিকে টর্চ্চের আলো রাঙা হয়ে আসচে ক্রমশঃ। ভীষণ গুমট গরম গুহার মধ্যে তা' ছাড়া পানীয় জল নেই। পাথরের দেওয়াল বেয়ে যে জল চুঁয়ে পড়চে, তা' আস্বাদ কষা, ক্ষার, ঈষৎ লোনা। তার পরিমাণও বেশী নয়। জিব দিয়ে চেটে খেতে হয় দেওয়ালের গা থেকে।

 বাইরে অন্ধকার হয়েচে নিশ্চয়ই, সাড়ে সাতটা বাজলো। আটটা, নটা, দশটা। তখনও শঙ্কর পথ হাতড়াচ্চে। টর্চ্চের পুরোণো ব্যাটারি জ্বলচে সমানে বেলা তিনটে থেকে, এইবার সে এত ক্ষীণ হয়ে এসেচে যে, শঙ্কর ভয়ে আরও উন্মাদের মত হয়ে উঠল। এই আলো যতক্ষণ, তার প্রাণের ভরসাও ততক্ষণ - নতুবা এই রৌরব নরকের মত মহা অন্ধকারে পথ খুঁজে পাবার কোনো আশা নেই - স্বয়ং আলভারেজও পারতো না।

 টর্চ্চ নিবিয়ে, ও চুপ করে একখানা পাথরের ওপর বসে রইল। এ থেকে উদ্ধার পাওয়া যেতেও পারতো, যদি আলো থাকতো - কিন্তু অন্ধকারে সে কি করবে এখন? একবার ভাবলে, রাত্রিটা কাটুক না, দেখা যাবে এখন। পরক্ষণেই মনে হোল - তাতে আর কি সুবিধে হবে? এখানে দিন রাত্রি সমান। অন্ধকারেই সে দেওয়াল ধরে ধরে চলতে লাগলো। হায়, হায়, কেন গুহায় ঢুকবার সময় দুটো নতুন ব্যাটারি সঙ্গে নেয় নি! অন্ততঃ একটা দেশলাই।

 ঘড়ি হিসেবে সকাল হোল। গুহার চির অন্ধকারে আলো জ্বললো না। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় শরীর অবসন্ন হয়ে আসচে ওর। বোধ হয়, এই গুহার অন্ধকারে ওর সমাধি অদৃষ্টে লেখা আছে, দিনের আলো আর দেখতে হবে না। আলভারেজের বলি গ্রহণ করে আফ্রিকার রক্ততৃষ্ণা মেটেনি, তাকেও চাই।

 তিন দিন তিন রাত্রি কেটে গেল। শঙ্কর জুতোর সুকতোলা চিবিয়ে খেয়েচে, একটা আরসুলা কি ইঁদুর, কি কাঁকড়াবিছে - কোনো জীব নেই গুহার মধ্যে যে সে ধরে খায়। মাথা ক্রমশঃ অপ্রকৃতিস্থ হয়ে আসচে, তার জ্ঞান নেই সে কি করচে বা তার কি ঘটচে - কেবল এইটুকু মাত্র জ্ঞান রয়েচে যে, তাকে এ গুহা থেকে যে করে হোক বেরুতেই হবে, দিনের আলোর মুখ দেখতেই হবে। তাই সে অবসন্ন নির্জ্জীব দেহেও অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়েই বেড়াচ্ছে, হয়ত মরণের পূর্ব্ব মুহূর্ত্ত পর্যন্ত্য ওইরকমই হাতড়াবে।

 একবার সে অবসন্ন দেহে ঘুমিয়ে পড়লো। কতক্ষণ পরে সে জেগে উঠল, তা সে জানে না; দিন, রাত্রি, ঘণ্টা, ঘড়ি, দণ্ড, পল মুছে গিয়েচে এই ঘোর অন্ধকারে। হয়তো বা তার চোখ দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েচে, কে জানে?

 ঘুমুবার পরে সে যেন একটু বল পেল। আবার উঠল, আবার চলল, আলভারেজের শিষ্য সে, নিশ্চেষ্ট ভাবে হাত পা কোলে করে বসে কখনই মরবে না।...সে পথ খুঁজবে, খুঁজবে, যতক্ষণ বেঁচে আছে।

 আশ্চর্য্য, সে নদীটাই বা কোথায় গেল?...গুহার মধ্যে গোলোকধাঁধাঁয় ঘুরবার সময়ে জলধারাকে সে কোথায় হারিয়ে ফেলেচে। নদী দেখতে পেলে হয় তো উদ্ধার পাওয়াও যেতে পারে, কারণ তার এক মুখ যেদিকেই থাক, একটা মুখ আছে গুহার বাইরে। কিন্তু নদী তো দূরের কথা, একটা অতি ক্ষীণ জলধারার সঙ্গেও আজ তিন দিন পরিচয় নেই! জল অভাবে শঙ্কর মরতে বসেচে, কষা, লোনা, বিস্বাদ জল চেটে চেটে তার জিব ফুলে উঠেচে, তৃষ্ণা তাতে বেড়েচে ছাড়া কমে নি।

 পাথরের দেওয়াল হাতড়ে শঙ্কর খুঁজতে লাগলো, ভিজে দেওয়ালের গায়ে কোথাও শেওলা জন্মেছে কি না - খেয়ে প্রাণ বাঁচাবে। না তাও নেই! পাথরের দেওয়াল সর্ব্বত্র অনাবৃত - মাঝে মাঝে ক্যালসিয়াম কার্ব্বোনেটের পাতলা সর পড়েচে, একটা ব্যাঙের ছাতা, কি শেওলাজাতীয় উদ্ভিদও নেই। সূর্য্যের আলোর অভাবে উদ্ভিদ এখানে বাঁচতে পারে না।

 আরও একদিন কেটে রাত এল। এত ঘোরাঘুরি করেও কিছু সুবিধে হচ্চে বলে তো বোধ হয় না। ওর মনে হতাশা ঘনিয়ে এসেচে। আরও সে কি চলবে, কতক্ষণ চলবে? এতে কোন ফল নেই, এ চলার শেষ নেই। কোথায় সে চলচে এই গাঢ় নিকষকৃষ্ণ অন্ধকারে, এই ভয়ানক নিস্তব্ধতার মধ্যে! উঃ কি ভয়ানক অন্ধকার আর কি ভয়ানক নিস্তব্ধতা! পৃথিবী যেন মরে গিয়েচে, সৃষ্টিশেষের প্রলয়ে সোমসূর্য্য নিবে গিয়েচে, সেই মৃত পৃথিবীর জনহীন, শব্দহীন, সময়হীন, শ্মশানে সেই একমাত্র প্রাণী বেঁচে আছে।

 আর বেশীক্ষণ এ-রকম থাকলে সে ঠিক পাগল হয়ে যাবে।