চিঠিপত্র (দশম খণ্ড, ১৯৬৭)/দীনেশচন্দ্র সেনকে লিখিত/১৩

১৩

[এপ্রিল ১৯০৩]

ওঁ

হাজারীবাগ

বন্ধুবরেষু

 পত্রে আপনার চোখের কথা শুনিয়া অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হইতেছি। আশা করি আপনার দর্শন শক্তির কোন স্থায়ী ব্যাঘাত হইবেনা।

 আমি এখানে আসিয়া রুগ্ন হইয়া পড়িয়াছি। এখন এখানে ইন্‌ফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাব হওয়াতে একে একে আমাদের সকলকেই শয্যাশায়ী করিয়াছে। ঐ রোগটার দোষ এই যে উহার লঙ্কাকাণ্ডের অপেক্ষা উত্তর কাণ্ডই বেশি নিদারুণ। কাশি দুর্ব্বলতা অরুচি মন্দাগ্নি, প্রভৃতি উপসর্গ কিছুতেই দখল ছাড়িতে চায় না।

 বিদ্যালয়ে ফিরিবার জন্য আমার চিত্ত উৎসুক হইয়াছে— আধি ব্যাধির হাত হইতে কোনমতে একটুখানি ছুটি পাইলেই আমি আমার বালখিল্যগুলির আশ্রমে গিয়া উপস্থিত হইব। সেখানে ইংরাজি শিক্ষা দিবার জন্য একজন ইংরাজ শিক্ষক রাখিয়াছি কিন্তু তাহার কাজ দেখিয়া আসিতে পারি নাই সেজন্য মন উদ্বিগ্ন আছে। শীঘ্র সেখানে একটি কারখানা খুলিবার সংকল্প আছে সেজন্যও আমার উপস্থিতি আবশ্যক। ঈশ্বরের প্রতি একান্ত নির্ভর করিয়া, আমার কর্তব্যকে সম্পূর্ণ করিবার জন্য আমি সমস্ত ভারই নির্বিচারে বহন করিতে প্রস্তুত হইয়াছি। তিনি ক্রমশই ইহাকে সফলতার পথে অগ্রসর করিয়া দিতেছেন তাহা প্রত্যহ উপলব্ধি করিতেছি।

 কলিকাতায় প্লেগের যেরূপ উপদ্রব তাহাতে গ্রীষ্মের অবকাশে শ্রীমান অরুণকে সেখানে পাঠানো কোনমতেই সঙ্গত হইবেনা। যদি আপত্তি না করেন, ছুটির সময় তাহাকে আশ্রমে রাখিয়াই তাহার পুরাতন পাঠ অভ্যাস করাইয়া লইব। সে সময় যদি কোন সুযোগ করিতে পারি তবে আপনাদিগকেও আনাইয়া লইবার চেষ্টা করিব। আমি সম্ভবত আর দিন পনেরোর মধ্যে বোলপুরে যাইব— কোন বাধা মানিবনা। ছুটির পূর্ব্বে আমি না গেলে নয়।

 যতদিন বাঁচিয়া আছি আপনারা আমাকে আপনাদেরই কাজে এবং আপনাদেরই নিকটে পাইবেন; বাল্যকালে স্কুল পালাইয়াছি— প্রৌঢ় বয়সে আমার বিদ্যালয় হইতে পলাতক হইবনা।

 সাহিত্য পরিষদের সভাপতি হওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। আমি আর আমার চিন্তা ও চেষ্টাকে নানা দিকে বিক্ষিপ্ত হইতে দিবনা। কর্ত্তব্য সঙ্কোচ না করিলে কর্তব্য পালন করা যায়না কেবল বৃথা ভ্রাম্যমাণ হইতে হয়। নিষ্কৃতি প্রার্থনা করিয়া হীরেন্দ্রবাবু ও যতীন্দ্রবাবুকে পত্র লিখিয়াছি। Easterএর ছুটির সময় হীরেন্দ্রবাবু বোলপুরে যাইবার ইচ্ছা করিয়াছেন। আমি থাকি বা না থাকি তিনি গেলে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হইব একথা তাঁহাকে বিশেষ করিয়া। জানাইবেন এবং আপনিও তাঁহার সাথী হইবার চেষ্টা করিবেন। আপনাদের নিরাময় সংবাদ দিয়া আমাকে নিশ্চিন্ত করিবেন। ইতি ১৯শে চৈত্র ১৩০৯।

ভবদীয়
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর