জাতীয় আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ/স্বদেশী যুগের ঊষা

স্বদেশী যুগের ঊষা

 ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের আদেশের পর স্বদেশী আন্দোলন আরম্ভ হয়। কিন্তু এই আন্দোলন সহসা আবির্ভূত হইয়াছিল কোন ঐতিহাসিক এমন কথা বলিবেন না। কোন জাতির জীবনেই কোন বৃহৎ ঘটনা, কোন প্রচণ্ড যুগান্তকারী আন্দোলন অকস্মাৎ হয় না, তাহার পশ্চাতে দীর্ঘকালব্যাপী একটা সাধনার ইতিহাস নিশ্চয়ই থাকে। বাঙলার যুগান্তকারী স্বদেশী আন্দোলনের পশ্চাতেও যে এমনই একটা ইতিহাস আছে, তাহার পরিচয় ইতিপুর্বেই আমরা কিছু দিয়াছি। এইবার স্বদেশী আন্দোলনের অব্যবহিত পূর্বের কথা—বিশেষভাবে ১৯০০—১৯০৫ এই কয়েক বৎসরের কথা বলিব। এই যুগের নাম দেওয়া যাইতে পারে ‘স্বদেশী যুগের ঊষা’। সূর্যোদয়ের পূর্বে ঊষার আগমন, তখনও রাত্রির অন্ধকার ভাল করিয়া কাটে নাই, লোককোলাহল ভাল করিয়া জাগে নাই। তবে উদ্যোগপর্বের একটা সাড়া পড়িয়া গিয়াছে, পাখীর কাকলী শোনা যাইতেছে, পূর্বাকাশে অরুণের রেখা কেবল দেখা দিতেছে। বাঙলা দেশেও ১৯০০—১৯০৫ সাল এমনই একটা উদ্যোগ-পর্বের যুগ। এই যুগে রবীন্দ্রনাথ অন্যতম প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাঁহার সঙ্গে যোগ দিয়াছিলেন আরও কয়েকজন শক্তিমান পুরুষ।

 কিন্তু ইহাদের কথা বলিবার পূর্বে আর একজন লোকোত্তর মহাপুরুষ—যুগনায়কের কথা বলা একান্ত প্রয়োজন। আমরা স্বামী বিবেকানন্দের কথা বলিতেছি। বঙ্কিমচন্দ্রের দেশমাতৃকার আদর্শ, আত্মত্যাগ ও কর্মযোগের সাধনা—যাঁহাদের মনের উপর অপরিসীম প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, তাঁহাদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বঙ্কিমচন্দ্রের ‘আনন্দমঠে’র আদর্শে অনুপ্রাণিত হইয়া স্বামী বিবেকানন্দ দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করিয়াছিলেন, একথা বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। স্বামী বিবেকানন্দ বিশ্বজয়ী ধর্মপ্রচারক, হিন্দু-সভ্যতার বার্তা তিনি পাশ্চাত্য জগৎকে শুনাইয়াছিলেন, বেদান্তের ভেরী-নির্ঘোষে ভারতবাসীর বহির্মুখী মন তিনি অন্তর্মুখী করিয়াছিলেন, কর্মযোগ ও সেবাধর্মের মহিমা জাতির মধ্যে প্রচার করিয়াছিলেন, এসব কথা সুবিদিত। কিন্তু স্বামীজীর জীবনের আর একটা দিক তাঁহার স্বদেশবাসীরা এখনও ভাল করিয়া উপলব্ধি করিয়াছেন কিনা সন্দেহ। তিনি ছিলেন স্বাধীনতার উপাসক—বীর্যবান স্বদেশপ্রেমিক। তাঁহার ভিতরে যে তীব্র স্বদেশপ্রেম ছিল তাহার তুলনা নাই—যেন অগ্নিগর্ভ আগ্নেয়গিরি। বিরাট কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়া সেই আগুন তিনি সংযত করিয়া রাখিতেন, কিন্তু তবুও নানাভাবে তাহা প্রকাশ হইয়া পড়িত। তাঁহার বিভিন্ন বক্তৃতা ও প্রবন্ধাবলীতে—বিশেষত ‘পত্রাবলী’তে ইহার নিদর্শন ভূরি ভূরি রহিয়াছে। নবীন ভারতকে প্রধানত তিন দিক দিয়া তিনি স্বদেশসেবার দীক্ষা দিয়াছিলেন। প্রথমত কর্মযোগ; তিনি স্পষ্টই বলিয়াছিলেন, রজোগুণ ও কর্মযোগ না হইলে এই জীবন্মৃত জাতি বাঁচিবে না। দ্বিতীয়ত, ত্যাগ ও সেবার সাধনা। তিনি নিজের জীবনে আচরণ করিয়া দেখাইয়াছিলেন নারায়ণজ্ঞানে দেশের জনসাধারণকে—দীন, দরিদ্র, মূর্খকে সেবা করিতে হইবে। তৃতীয়ত, “ছুঁৎমার্গে”র পরিহার। যাহাদিগকে আমরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরিয়া অস্পৃশ্য ও অপাংক্তেয়—অনুন্নত ও অবনত করিয়া রাখিয়াছি, তাহাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের সঞ্চার করিতে হইবে, নহিলে জাতির মুক্তি নাই। স্বামীজীর এই বিরাট আহ্বানে ঘুমন্ত জাতি সাড়া দিয়াছিল, কঙ্কালে প্রাণের লক্ষণ দেখা দিয়াছিল, একথা আমরা আজ জোর করিয়াই বলিব। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে এবং বিংশ শতাব্দীর আরম্ভে স্বামীজীই জাতিকে নবজীবনের পথ প্রদর্শন করিয়াছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র যে আনন্দমঠের স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, স্বামী বিবেকানন্দ তাহাকে সর্বক্ষেত্রে মূর্ত করিয়া তুলিবার জন্য সাধনা করিয়াছিলেন। তাঁহার সে সাধনা ব্যর্থ হয় নাই, যে হোমানল তিনি প্রজ্বলিত করিয়াছিলেন, তাহারই সঞ্জীবনী-শক্তি উত্তরকালে স্বদেশী আন্দোলনে অশেষ প্রেরণা দিয়াছিল। এক কথায় স্বামী বিবেকানন্দও স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান অগ্রদূত। স্বদেশী যুগের ঊষার আবাহন যাঁহারা করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে তাঁহার নাম সর্বাগ্রগণ্য।

 ১৯০১ সালে শ্রীশচন্দ্র মজুমদার ও শৈলেশচন্দ্র মজুমদার ভ্রাতৃদ্বয়ের উদ্যোগে ‘বঙ্গদর্শন’ পুনঃপ্রকাশিত হয়। এই নব পর্যায়ের ‘বঙ্গদর্শনে’র সম্পাদকের ভার গ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ। বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদকত্বে একদিন ‘বঙ্গদর্শন’ যেমন নবযুগ আনয়ন করিয়াছিল, রবীন্দ্রনাথের সম্পাদনায় নব পর্যায়ের ‘বঙ্গদর্শন’ও তেমনি স্বদেশী যুগের আবাহনে অশেষ কার্য করিয়াছিল। এই পত্রে রবীন্দ্রনাথ পূর্ণোদ্যমে তাঁহার ‘আত্মশক্তি’র মূলমন্ত্র প্রচার করিতে লাগিলেন, জাতির অন্তর্নিহিত শক্তি যে পল্লী হইতে গড়িয়া তুলিতে হইবে, ইহাও তিনি পাশ্চাত্য রাজনীতির মোহগ্রস্ত শিক্ষিত দেশবাসীকে শুনাইতে লাগিলেন। ভারতের অতীত গৌরব, তাহার সভ্যতা ও সংস্কৃতির কথা এই ‘বঙ্গদর্শনে’র মধ্য দিয়াই প্রবন্ধের পর প্রবন্ধে তিনি ব্যক্ত করিতে লাগিলেন। তখনকার দিনে যুবক ছাত্র সম্প্রদায়ের রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল। তাহারা সর্বপ্রকারে তাঁহার অনুকরণ করিতে চেষ্টা করিত, তাঁহার কথায় উঠিত বসিত বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। আর সেই সময়ে বাঙলার ভাব-ও-চিন্তা-জগতের নেতৃত্ব প্রধানত রবীন্দ্রনাথই গ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি প্রায়ই সভায় প্রবন্ধ পাঠ বা বক্তৃতা করিতেন। সেই সমস্ত সভায় এত ভীড় হইত যে, বহু লোককে হতাশ হইয়া ফিরিতে হইত। এইজন্য রবীন্দ্রনাথকে এক একটি প্রবন্ধ পাঠ বা বক্তৃতা ২।৩ বার সভা করিয়া করিতে হইত। তখন বঙ্গভঙ্গ হয় নাই, স্বদেশী আন্দোলনও আরম্ভ হয় নাই। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ তাঁহার বক্তৃতা ও প্রবন্ধের দ্বারা সেই সব ভাববিপ্লবের বীজ পূর্ব হইতেই যুবকগণের চিত্তে বপন করিতেছিলেন।

 এই সময়ে আর যে কয়জন শক্তিমান পুরুষ রবীন্দ্রনাথের সহকর্মীরূপে যুবকগণের চিত্তে দেশাত্মবোধের উদ্বোধন করিতেছিলেন, তন্মধ্যে উপাধ্যায় ব্রহ্মবান্ধববিপিনচন্দ্র পালের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখ করিতে হইবে। ইঁহারা দুইজনেই নবপর্যায়ের ‘বঙ্গদর্শনে’র লেখক ছিলেন। গৈরিকধারী তেজঃপুঞ্জ সন্ন্যাসী ব্রহ্মবান্ধবকে প্রথম যখন অ্যালবার্ট হলের একটি সভায় দেখি[১] তখন মনে হইয়াছিল—এ যেন মূর্তিমান অগ্নিশিখা। স্বামী বিবেকানন্দের মত তাঁহারও দেহমনপ্রাণ স্বদেশপ্রেমে পূর্ণ ছিল,—দেশের জন্যই আত্মোৎসর্গ করিয়া তিনি সন্ন্যাস-ব্রত গ্রহণ করিয়াছিলেন। তখনকার দিনে তিনি যে সব প্রবন্ধ লিখিতেন ও বক্তৃতা করিতেন, তাহার এক একটি ছিল যেন অগ্নিস্ফুলিঙ্গ; দেশের চারিদিকে স্বদেশপ্রেমের বহ্নিশিখা ছড়াইয়া দেওয়াই ছিল তাঁহার কাজ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁহার ঘনিষ্ঠ বন্ধুতা হইয়াছিল এবং উভয়ে উভয়ের দ্বারা বহুল পরিমাণে প্রভাবিত হইয়াছিলেন। যে আত্মশক্তির সাধনা রবীন্দ্রনাথের মূল মন্ত্র ছিল—উপাধ্যায় ব্রহ্মবান্ধবও ছিলেন তাহারই সাধক। তিনিও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন বা ভিক্ষার রাজনীতিকে ঘৃণা করিতেন। জাতীয় শিক্ষার পরিকল্পনায় ব্রহ্মবান্ধবের দান অশেষ, রবীন্দ্রনাথ তাঁহার নিকট হইতে এ বিষয়ে অনেক সাহায্য পাইয়াছিলেন। শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথ যাঁহাদের সহায়তা পাইয়াছিলেন, ব্রহ্মবান্ধবের নাম তাঁহাদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য। স্বদেশী যুগের উষার আবাহনে এই সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী যে কত বড় কাজ করিয়াছিলেন, তাহার পরিমাপ করা কঠিন।

 পরবর্তী কালে স্বদেশী তথা নবজাতীয়তা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা স্বনামধন্য বিপিনচন্দ্র পালও বাঙলার চিন্তা-ও-ভাব-জগতে এই সময়েই নেতৃত্ব করিতে আরম্ভ করেন। রবীন্দ্রনাথ-উপাধ্যায়ের মত তিনিও প্রবন্ধ লিখিয়া ও বক্তৃতা করিয়া যুবকগণের চিত্তে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করিতেছিলেন। কি ইংরেজীতে কি বাঙলায় তাঁহার মত বাগ্মী আমি আর দেখি নাই। শ্রোতৃবর্গের মন লইয়া তিনি যেন ইচ্ছামত খেলা করিতেন, ভাষার ঐশ্বর্যে ও ভাবের সম্পদে তাঁহার বক্তৃতার এমন একটা সম্মোহিনী শক্তি থাকিত যে, সকলে তাহাতে অভিভূত হইয়া পড়িত। বিপিনচন্দ্র ‘নিউ ইণ্ডিয়া’ নামে একখানি ইংরেজী সাপ্তাহিক পত্র প্রকাশ করেন। যুবকদলের মনের উপর এই পত্রিকাখানি যে কি অসীম প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল, তাহা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সপ্তাহের পর সপ্তাহ এই পত্রিকায় বিপিনচন্দ্র নূতন নূতন চিন্তা ও ভাবের অবতারণা করিয়া যুবক বাঙলাকে স্বদেশী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করিয়া তুলিতেছিলেন।

 স্বদেশী যুগের এই ঊষার আচার্য সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও তাঁহার প্রতিষ্ঠিত “ডন সোসাইটি”র নাম বাঙলার জাতীয় জীবনে অমর হইয়া থাকিবে। এই “ডন সোসাইটি” ছিল স্বদেশসেবার পাঠশালা। দেশকে কি করিয়া সেবা করিতে হয়, স্বদেশী শিল্পের পুনরুদ্ধার কোন্ পথে হইতে পারে আচার্য সতীশচন্দ্রের নেতৃত্বে “ডন সোসাইটি”র সদস্যেরা সেই সব কথা লইয়া আলোচনা ও গবেষণা করিতেন এবং হাতে-কলমে কাজ করিতেন। ১৯০২—০৩ সাল, তখনও স্বদেশী আন্দোলন আরম্ভ হয় নাই, কিন্তু “ডন সোসাইটি”র সদস্যেরা নিজেরা মোটা স্বদেশী কাপড় পরিতেন এবং উহা বিক্রয় করিয়া বেড়াইতেন। “ডন সোসাইটি”র গৃহে তাঁত বসাইয়া গামছা চাদর প্রভৃতি বোনা হইত, দেশলাই তৈয়ারী করিবার চেষ্টাও হইত। “ডন সোসাইটি”র ‘দি ডন’ নামক একখানি মুখপত্র প্রকাশিত হইত এবং সদস্যেরাই উহা পরিচালনা করিতেন। ঐ পত্রে স্বদেশী শিল্প গঠন, পল্লী সংগঠন প্রভৃতি সম্বন্ধে বহু তথ্যপূর্ণ মূল্যবান প্রবন্ধ প্রকাশিত হইত। আজ বাঙলা দেশের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সব প্রসিদ্ধ কর্মীকে দেখিতে পাই, তাঁহাদের মধ্যে অনেকে তখনকার দিনে “ডন সোসাইটি”র সদস্য এবং আচার্য সতীশচন্দ্রের শিষ্য ছিলেন। “ডন সোসাইটি'র সঙ্গে আর্যা নিবেদিতা, গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রভৃতির যোগ ছিল এবং তাঁহারা সোসাইটির সভায় আসিয়া বক্তৃতা করিতেন। রবীন্দ্রনাথ সতীশচন্দ্রের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং “ডন সোসাইটি”র হিতৈষী ও পরামর্শদাতা ছিলেন। অনেক সময় সোসাইটির গৃহে আসিয়া রবীন্দ্রনাথ সতীশচন্দ্রের সঙ্গে স্বদেশসেবার নানা পরিকল্পনা লইয়া আলোচনা করিতেন। সোসাইটির তরুণ সদস্যদের রবীন্দ্রনাথ দেশসেবার সম্বন্ধে উপদেশ দিতেন, বক্তৃতা করিতেন। আমি সোসাইটির একজন নগণ্য সদস্য ছিলাম এবং রবীন্দ্রনাথের একটি বক্তৃতার কথা আমার বেশ মনে আছে। বক্তৃতার শেষে রবীন্দ্রনাথকে আমরা ধরিয়া পড়িলাম যে, তাঁহাকে একটি গান গাহিতে হইবে। রবীন্দ্রনাথ প্রথমে কিছুতেই রাজী হন না, পরে যুবকদের সনির্বন্ধ অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া পকেট হইতে একখানি ছোট খাতা বাহির করিয়া নূতন রচিত একটি গান করিলেন। যতদূর মনে পড়ে উহা রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত গান—

যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে,
তবে এক্‌লা চল রে।
এক্‌লা চল এক্‌লা চল
এক্‌লা চল রে।

যদি কেউ কথা না কয়—
যদি সবাই থাকে মুখ ফিরায়ে
সবাই করে ভয়—
তবে পরাণ খুলে
ও তুই মুখ ফুটে তোর মনের কথা,
এক্‌লা বল রে।

* * *

যদি আলো না ধ’রে—
যদি ঝড়বাদলে আঁধার রাতে
দুয়ার দেয় ঘরে।
তবে বজ্রানলে,
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে
এক্‌লা জ্বল রে।

* * *

 স্বদেশী আন্দোলনে আচার্য সতীশচন্দ্রের দান অপরিমেয়। হীরেন্দ্রনাথ দত্ত একবার বলিয়াছিলেন, “সতীশবাবু শ্রীকৃষ্ণের বংশীধ্বনি শুনে সকলের আগে ঘর ছেড়ে পথে বেরিয়েছেন।” এই নীরব সাধক ও কর্মযোগীর কথা মনে হইলে শ্রদ্ধায় শির নত হইয়া পড়ে। তিনি ছিলেন আজীবন ব্রহ্মচারী, দেশ ও সমাজের সেবার জন্য নিজেকে সম্পুর্ণরূপে উৎসর্গ করিয়াছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল রত্ন ও হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট হইয়াও নিজের জন্য কোনদিন অর্থোপার্জনের চেষ্টা করেন নাই। দারিদ্র্য-ব্রত গ্রহণ করিয়া স্বদেশের সেবায় আপনাকে নিয়োজিত করিয়াছিলেন। তাঁহার বেশভূষা, পোষাকপরিচ্ছদ দেখিলে মনে হইত, বাহ্য জগতের সঙ্গে তাঁহার কোন সম্বন্ধ নাই; সর্বদা আত্মসমাহিত, প্রসন্ন হাস্যে মুখমণ্ডল উদ্ভাসিত। প্রথম যখন জাতীয় শিক্ষা-পরিষদ গঠিত হয়, তখন সতীশবাবুই তাঁহার শিষ্যদের লইয়া জাতীয় বিদ্যালয়ের ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন। এজন্য তিনি নিজে কোন পারিশ্রমিক লইতেন না, বরং দুই এক স্থানে গৃহ-শিক্ষকতা করিয়া যে অর্থ পাইতেন, তাহাও এই জাতীয় বিদ্যালয়ের ভাণ্ডারে দান করিতেন।

 এই সময় আর যে কয়েকজন চিন্তানায়ক বাঙলায় আত্মশক্তির আন্দোলন তথা স্বদেশী ভাবের উদ্বোধনে সহায়তা করিয়াছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে মনীষী রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ও আর্যা নিবেদিতার নাম উল্লেখযোগ্য। বৈজ্ঞানিক রামেন্দ্রসুন্দর রিপণ, কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের প্রাণস্বরূপ ছিলেন। কিন্তু এই বৈজ্ঞানিক, শিক্ষাব্রতী এবং বাঙলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবক যে অন্তরালে থাকিয়া স্বদেশীভাবের উদ্বোধনে সহায়তা করিতেন, তাহা হয়তো অনেকে জানেন না। সে সময়ে “সাবিত্রী লাইব্রেরি” নামক একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। ইহার উদ্যোগে মাঝে মাঝে সভা হইত। রামেন্দ্রসুন্দর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিপিনচন্দ্র পাল প্রভৃতি মনীষী ঐ সমস্ত সভায় বক্তৃতা করিতেন। যুবকগণের চিত্তে জাতীয় আত্মমর্যাদাবোধ জাগ্রত করাই ঐ সমস্ত বক্তৃতার লক্ষ্য ছিল। যতদূর মনে পড়ে, রবীন্দ্রনাথও এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দুই একটি বক্তৃতা করিয়াছিলেন। রামেন্দ্রসুন্দরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ বন্ধুতা ছিল। তাঁহাদের মধ্যে কেবল সাহিত্য সম্বন্ধেই আলোচনা হইত না—জাতিগঠনের ব্যাপার লইয়াও তাঁহারা আলোচনা করিতেন। স্বদেশী আন্দোলনের সময় ‘রাখীবন্ধন’ উৎসবের অন্যতম পরামর্শদাতা ছিলেন রামেন্দ্রসুন্দর। ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা’ তিনিই রচনা করিয়াছিলেন। এই সন্ধিক্ষণে আর্যা নিবেদিতার প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলীও যুবকগণের চিত্তে জাতীয় আত্মমর্যাদার উদ্বোধন করিয়াছিল। আর্যা নিবেদিতাও রবীন্দ্রনাথের বন্ধু ছিলেন। “ডন সোসাইটি”র সঙ্গেও তাঁহার যোগ ছিল এবং মাঝে মাঝে সোসাইটির সভায় যে তিনি বক্তৃতা করিতেন একথা পূর্বেই বলিয়াছি।

 ১৯০৪ সালে রবীন্দ্রনাথ “স্বদেশী সমাজ” নামে তাঁহার বিখ্যাত বক্তৃতা করেন। এই বক্তৃতায় তখনকার শিক্ষিত সমাজ ও রাজনৈতিক মহলে বিশেষ চাঞ্চল্য ও উদ্দীপনার সঞ্চার হইয়াছিল। এই বক্তৃতা পুস্তিকাকারে প্রকাশিত এবং উহার হাজার হাজার কপি প্রচারিত হইয়াছিল। এই “স্বদেশী সমাজে”ই রবীন্দ্রনাথ তাঁহার জাতিগঠনের নিজস্ব পরিকল্পনা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন। দেশ ও জাতিকে সংঘবদ্ধ করিয়া একটি স্বয়ংসম্পুর্ণ শাসনতন্ত্র ভিতর হইতে গড়িয়া তুলিতে হইবে, ইহাই ছিল তাঁহার পরিকল্পনার মূল ভিত্তি। বাহিরে বিদেশী গভর্মেণ্ট থাকুক, তাহার সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টির প্রয়োজন নাই, দেশবাসীর নিজের সামাজিক ও অর্থ নৈতিক প্রয়োজন তাহারা স্বতন্ত্রভাবে নিজেরাই মিটাইবার চেষ্টা করিবে। নিজেদের শিল্পবাণিজ্য নিজেরাই গড়িয়া তুলিবে। সালিশী প্রথার দ্বারা বিবাদ-বিসম্বাদ মিটাইবার ব্যবস্থা করিতে হইবে। শান্তি রক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনের ব্যবস্থাও ইহার মধ্যে ছিল, স্বদেশী বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবও করা হইয়াছিল। অর্থাৎ বৃহত্তর বিদেশী গভর্মেণ্টের অভ্যন্তরে আর একটি স্বতন্ত্র স্বসম্পুর্ণ “স্বদেশী সমাজ” গড়িয়া তুলিতে হইবে, ইহাই ছিল মূল কল্পনা। আয়র্লাণ্ডের জাতীয়তাবাদীরা ইংরেজ গভর্মেণ্টের পাশাপাশি যেমন একটি স্বতন্ত্র শাসনব্যবস্থা গড়িয়া তুলিতে চেষ্টা করিয়াছিল, রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনাও অনেকটা সেইরূপই ছিল। এই “স্বদেশী সমাজ” স্থায়ীভাবে গঠন করিবার উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথ বহুদূর অগ্রসর হইয়াছিলেন। ইহার সদস্যদের জন্য প্রতিজ্ঞাপত্রের খসড়া পর্যন্ত তিনি রচনা করিয়া প্রচার করিয়াছিলেন। প্রতিজ্ঞাপত্রের ভূমিকা ছিল এইরূপ:—

 “আমরা স্থির করিয়াছি, আমরা কয়েকজন মিলিয়া একটি সমাজ স্থাপন করিব। আমাদের নিজেদের সম্মিলিত চেষ্টায় যথাসাধ্য আমাদের অভাব মোচন ও কর্তব্য সাধন আমরা নিজেরা করিব। আমাদের শাসনভার নিজে গ্রহণ করিব, যে সকল কর্ম আমাদের স্বদেশীয়দের সাধ্য, তাহার জন্য অন্যের সাহায্য লইব না। এই অভিপ্রায়ে আমাদের সমাজের বিধি আমাদের প্রত্যেককে একান্ত বাধ্যভাবে পালন করিতে হইবে। অন্যথা করিলে সমাজবিহিত দণ্ড স্বীকার করিব। সমাজের অধিনায়ক ও তাঁহার সহায়কারী সচিবগণকে তাঁহাদের সমাজনির্দিষ্ট অধিকার অনুসারে নির্বিচারে যথাযোগ্য সম্মান করিব। বাঙালী মাত্রেই এ সমাজে যোগ দিতে পারিবেন।”

 এই “স্বদেশী সমাজে”র পরিকল্পনা পরবর্তী কালে স্বদেশী আন্দোলনের উপর অশেষ প্রভাব বিস্তার করিয়াছিল সন্দেহ নাই। অসহযোগ আন্দোলনের উপরও ইহার প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।

 ১৯০৪ সালের আর একটি স্মরণীয় ঘটনা কলিকাতায় ‘শিবাজী উৎসব’। ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল প্রভৃতি নব জাতীয়তাবাদীদের উদ্যোগে এই শিবাজী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মহারাষ্ট্র-নেতা লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক এই উৎসবে যোগ দিবার জন্য পুনা হইতে কলিকাতায় আসেন। এই শিবাজী উৎসবের একটা প্রধান অঙ্গ ছিল শক্তিরূপিণী ভবানীর পূজা। ছত্রপতি শিবাজী মোগলের দাসত্বমুক্ত যে স্বাধীন ভারতের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, তাহারই আদর্শ জাতির সম্মুখে ধরিবার জন্য এই শিবাজী উৎসবের পরিকল্পনা হইয়াছিল।

 বলা বাহুল্য, জাতীয় জীবনে যে নূতন শক্তি সংঘবদ্ধ হইয়া উঠিতেছিল, স্বাধীনতা লাভের যে আকাঙ্ক্ষা জাতির চিত্তে প্রেরণা যোগাইতেছিল, ‘শিবাজী উৎসব’ তাহারই বহিঃপ্রকাশ। পরবর্তী কালে যিনি ভারতে নব জাতীয়তা আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন, সেই লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক এই উৎসবের পৌরোহিত্য করিয়া জাতীয় জীবনে নূতন অধ্যায়ের সূচনা করিয়াছিলেন।

 এই উৎসব উপলক্ষ্যে কলিকাতা টাউন হলে যে বিরাট সভা হয়, রবীন্দ্রনাথ তাহাতে তাঁহার বিখ্যাত কবিতা “শিবাজী উৎসব” পাঠ করেন। শিবাজীর আদর্শই যে স্বাধীনতাকামী ভারতকে গ্রহণ করিতে হইবে, এই কবিতায় স্পষ্টভাবেই কবি তাহা বলেন:—

কোন্ দূর শতাব্দের কোন্-এক অখ্যাত দিবসে
নাহি জানি আজি।
মারাঠার কোন্ শৈলে অরণ্যের অন্ধকারে ব’সে
হে রাজা শিবাজি,
তব ভাল উদ্ভাসিয়া এ ভাবনা তড়িৎপ্রভাবৎ
এসেছিল নামি,—
“এক-ধর্মরাজ্য-পাশে খণ্ড ছিন্ন বিক্ষিপ্ত ভারত
বেঁধে দিব আমি।”
হে রাজতপস্বি বীর, তোমার সে উদার ভাবনা
বিধির ভাণ্ডারে
সঞ্চিত হইয়া গেছে, কাল কভু তার এক কণা
পারে হরিবারে?

তোমার সে প্রাণোৎসর্গ স্বদেশ-লক্ষ্মীর পূজা ঘরে
সে সত্য সাধন
কে জানিত হয়ে গেছে চিরযুগান্তর তরে
ভারতের ধন।

* *

মরে না, মরে না, কভু সত্য যাহা শত শতাব্দীর
বিস্মৃতির তলে,
নাহি মরে উপেক্ষায়, অপমানে না হয় অস্থির,
আঘাতে না টলে।
যারা ভেবেছিল মনে কোন কালে হয়েছে নিঃশেষ
কর্মপরপারে,
এল সেই সত্য তব পূজ্য অতিথির ধরি বেশ
ভারতের দ্বারে।
আজো তার সেই মন্ত্র,—সেই তার উদার নয়ান
ভবিষ্যের পানে
একদৃষ্টে চেয়ে আছে, সেথায় সে কী দৃশ্য মহান
হেরিছে কে জানে।
অশরীর হে তাপস, শুধু তব তপোমূর্তি লয়ে
আসিয়াছ আজ,—
তবু তব পুরাতন সেই শক্তি আনিয়াছ বয়ে,
সেই তব কাজ।

* *

সেদিন শুনিনি কথা—আজ মোরা তোমার আদেশ
শির পাতি লব।
কণ্ঠে কণ্ঠে বক্ষে বক্ষে ভারতে মিলিবে সর্বদেশ
ধ্যানমন্ত্রে তব।
ধ্বজা করি উড়াইব বৈরাগীর উত্তরীবসন,—
দরিদ্রের বল
“এক-ধর্মরাজ্য হবে এ ভারতে” এ মহাবচন
করিব সম্বল।

 এই স্বদেশী যুগের ঊষাতেই রবীন্দ্রনাথ তাঁহার ‘কথা ও কাহিনী’র প্রসিদ্ধ কবিতাগুলি রচনা করেন। প্রাচীন ভারত এবং আধুনিক কালের মারাঠী, রাজপুত ও শিখ ইতিহাসের গৌরবময় স্মৃতি মন্থন করিয়া এইসব কবিতা রচিত হইয়াছিল। বাঙলার তরুণগণের চিত্তে স্বদেশের বীর্য ও গৌরব-কাহিনী জাগ্রত করাই ছিল ঐ সব কবিতার উদ্দেশ্য। বাঙলার তরুণ ও যুবকদের কণ্ঠে কণ্ঠে এইসব কবিতা এখনও ধ্বনিত হইতেছে।

 স্বদেশী আন্দোলনের অব্যবহিত কালে আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ‘ভাণ্ডার’ পত্রিকা প্রকাশ। শ্রীযুত কেদারনাথ দাশগুপ্তের অর্থে ও উদ্যোগে এই ‘ভাণ্ডার’ পত্র প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথ উহার সম্পাদনার ভার গ্রহণ করেন। ‘ভাণ্ডারে’ জাতীয় জীবনের নানা সমস্যা লইয়া আলোচনা হইত, বিশেষভাবে আলোচনা হইত স্বদেশী শিল্পের পুনরুদ্ধার ও প্রসারের সমস্যা। দেশের নেতারা যে সব চিন্তা করিতেন, জনসাধারণের মধ্যে সহজ ভাষায় তাহা প্রচার করা ‘ভাণ্ডারে’র অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। সুরেন্দ্রনাথ, বিপিনচন্দ্র, ব্রহ্মবান্ধব, রামেন্দ্রসুন্দর, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রভৃতি ‘ভাণ্ডার’-এর আলোচনায় যোগদান করিতেন। কেবল স্বদেশী শিল্পের সম্বন্ধে আলোচনা করিয়াই ‘ভাণ্ডারে’র কর্তব্য শেষ হয় নাই। শ্রীযুত কেদারনাথ দাশগুপ্তের উদ্যোগে “লক্ষ্মীর ভাণ্ডার” নামক স্বদেশী শিল্পজাতের একটি বিপণীও খোলা হয়। শ্রীযুক্তা সরলা দেবী উহার তত্ত্বাবধানের ভার গ্রহণ করেন। এই প্রসঙ্গে শ্রীযুক্তা সরলা দেবী যে ‘বীরাষ্টমী’ উৎসবের প্রবর্তন করেন, তাহাও উল্লেখযোগ্য। এই উৎসব যে তখনকার দিনে যুবকদের চিত্তে জাতীয়ভাবের উদ্বোধনে সহায়তা করিয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। শ্রীযুক্তা সরলা দেবীর সম্পাদিত ‘ভারতী’ পত্রিকাও জাতীয়ভাব প্রচারে যথেষ্ট সহায়তা করিয়াছিল। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং একবৎসর ‘ভারতী’র সম্পাদক ছিলেন এবং তাঁহার কয়েকটি বিখ্যাত রাজনৈতিক প্রবন্ধ উহাতে প্রকাশিত হইয়াছিল।

 ১৯০০-১৯০৫—এই পাঁচ বৎসর বাঙলার জাতীয় জীবনে মহাসন্ধিক্ষণ। এই পাঁচ বৎসরে বাঙলা দেশ এক শতাব্দীর পথ অতিক্রম করিয়াছিল। রবীন্দ্রনাথ, এই ‘স্বদেশী যুগের ঊষায়’ জাতির ভাব ও চিন্তা পরিচালনার কার্যে প্রধান অংশ গ্রহণ করিয়া তাহাকে বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করিয়াছিলেন।

  1. সে সময়ে ফারকোহার নামক ওয়াই. এম. সি-এর একজন পাদরী সাহেব হিন্দুধর্ম ও গীতার নিন্দা করিয়া একখানি পুস্তিকা প্রচার করিয়াছিলেন। এই পুস্তিকার তীব্র প্রতিবাদ করিয়া উপাধ্যায় ব্রহ্মবান্ধব অ্যালবার্ট হলের সভায় বক্তৃতা করেন। সভাপতি ছিলেন মেট্রোপলিটন কলেজের অধ্যক্ষ নগেন্দ্রনাথ ঘোষ। হীরেন্দ্রনাথ দত্ত অন্যতম বক্তা ছিলেন। প্রধান বক্তারূপে ব্রহ্মবান্ধব হিন্দুধর্ম ও গীতার গৌরব কীর্তন করিয়া যে ওজস্বিনী বক্তৃতা দিয়াছিলেন, তাহা আমি কখনও ভুলিতে পারি নাই।