॥ সতর॥

রুদ্রবীণ

বড়মামার হাতে আরম্ভে রবিমামা ভারতীর যে বীণাকে আবাহন করলেন—

শুধাই ঐ গো ভারতী তোমায়
তোমার ও বীণা নীরব কেন?
ভারতের এই গগন ভরিয়া
ও বীণা আর মী বাজে না কেন?

তার প্রায় পচিশোর্ধ কয়েক বৎসর পরে দাক্ষিণাতা থেকে ফেরা আমার অঙ্গুলির প্রথম সঞ্চালনে ভারতীর সেই বীণা রুদ্রবণ হয়ে বেজে উঠল। শঙ্করের ভেরী নাদিত করে লেখনী আমার বাঙালীকে মত্যুচর্চায় আহবান করলে। এবার আমার হাতের প্রথম প্রবন্ধই হল তাই। সেই আমার বীণের প্রথম ঝঙ্কার। যে বাঙালী পৈতৃক প্রাণটি বাঁচিয়ে রাখতেই সদা তৎপর, বীণা তাদের ডেকে বললে,—মৃত্যুকে যেচে বরণ করতে শেখ, অগত্যা তার কবলিত হয়ে তারা তাকে স্পর্ধা কর, তার সম্মুখীন হও... খেলায় ধুলায়, আমোদে প্রমোদে, শিকারে বিহারে, বিজ্ঞানে সজ্ঞানে, প্লেগে জনসেবায়, আগুনে লোক-উদ্ধারে, জলেতে আত্মপ্রাণপণে পরপ্রাণ রক্ষায়। ভূগোল শেখ ভূমণ্ডল প্রদক্ষিণে-মানচিত্রে অঙ্গুলি সঞ্চারণে নয়। পাড়ি দাও সমুদ্রে, চলে যাও সাহারার মরুতে, চড় তুঙ্গে এভারেস্টের শঙ্গে, সেকালের ভারতীয় সন্ন্যাসী পর্যটকদের লোটা-কম্বল-মা-সহায় হয়ে কিংবা একালের শ্বেতপঙ্গবদের অনেক তোড়জোড়ের মধ্যে প্রধান যেটি সেইটি সম্বল করে- সুস্থ ও সবল শরীর। মানুষের সবচেয়ে বড় পুজি সেইটি- বলিষ্ঠ ও সুসুস্থ শরীর। সে জন্যে চাই বাঙালীর ভারতের অন্যান্য জাতির মত নিয়মিত ব্যায়াম-চর্চা। এই হল আমার রুদ্রবীণের দ্বিতীয় ঝঙ্কার।

 দ্বিপুদাদার মেজভাই অরুদাদা উর্দুনবীশ ছিলেন। হিন্দুস্থানী বেশ বলতেন, আর উর্দু বইও পড়তেন উচ্চারণে ঠিক জোরদার দিয়ে। কুস্তি প্রভৃতি কসরতের দ্বারা প্রথম যৌবনে শরীরটাও বেশ কায়দায় রেখেছিলেন। তিনি দু-একবার বম্বে অঞ্চলে যান মেজমামার কাছে। গল্প করতেন বম্বে থেকে ফেরার পথে গাড়ি যখন পশ্চিম ও বেহারের স্টেশনে স্টেশনে থাকত, জোর গম্ভীর গলায় কুলিরা স্টেশনের নাম হাঁকত-জব্বল-পো-র, ইলাহা-বা-দি, বক্‌স-র পট-না-া-া!—

 রাত্রে ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেয়ে উঠতে হত, বুঝি ডাকাত পড়েছে। আর গাড়ি যেমন বাঙলায় পৌঁছল, মিহিগলায় টক্‌ করে একটুখানি আওয়াজ বেরল—“কনু জংশন!’ “বদ্ধোমান!’ আর যারা ডাকছে তারা দেখতে এমন ক্ষীণজীবী—যেন একটা টোকা মারলেই এখনি পড়ে যাবে। অরুদাদার বর্ণনা যে খাঁটি সত্য, তা বিদেশ থেকে প্রত্যাগমনকালে আমাদের সকলেরই অনুভব হত। বাঙালী কুলিরাও মানুষ, আর পশ্চিমের কুলিরাও মানুষ—কিন্তু দেখতে কত তফাৎ! এবার এই ভোজপুরী মারাঠী পঞ্জাবী সকলের সঙ্গে বাঙালীর চেহারাগত দৌর্বল্যের পাহাড়কে সমভূমি করে দিতে হবে—এইতে পড়ল আমার প্রথম দৃষ্টি। সঙ্গে সঙ্গে চোখে লাগল শুধু শরীরগত দৌর্বল্য হটালে হবে না, বাঙালীর মন থেকে ভীরুতা অপসারিত করতে হবে। দেখা যায়, পশ্চিম ও পঞ্জাবের বড় বড় পালোয়ানেরাও সাহেব-ভীতিতে ভরা। এই সাদা চামড়ার ভয় সরাতে হবে।

 তাই ডমরুতে একটা ঘা দিয়ে রুদ্রের বীণা বাজল তৃতীয় তারে ঝঙ্কার দিয়ে আমার হাতে—‘বিলিতি ঘুষি বনাম দেশী কিল’ এই রাগে। ভারতীর পৃষ্ঠায় আমন্ত্রণ করলুম—রেলেতে স্টীমারে, পথে-ঘাটে, যেখানে সেখানে গোরা-সৈনিক বা সিভিলিয়ানদের হাতে স্ত্রী, ভগ্নী, কন্যা বা নিজের অপমানে মুহ্যমান হয়ে আদালতে নালিশের আশ্রয় না নিয়ে—অপমানিত ক্ষুব্ধ মানী ব্যক্তি স্বহস্তে তখনি তখনি অপমানের প্রতিকার নিয়েছে—সেই সকল ইতিবৃত্তের ধারাবাহিক বর্ণনা পাঠাতে। তাঁরা পাঠালেন ও তাঁদের ইতিবৃত্ত ভারতীতে বেরতে থাকল। পাঠকমণ্ডলীর মনে লুকান আগুন ধুঁকিয়ে ধুঁকিয়ে জ্বলে উঠল প্রবল তেজে। কোথা দিয়ে কোন্‌ হাওয়া বইছে, হঠাৎ যেন কেউ ঠাহর করে উঠতে পারে না। যে সাহিত্যের আঙ্গিনা ছিল কোমল আস্তরণ পাতা কমলালয়া সরস্বতীর নিকুঞ্জ, তা হল শ্মশানবাসী রুদ্রের ভীম নর্তনভূমি, আর তার তালে

তালে সকলের পা আপনিই পড়ছে—ইচ্ছে করুক আর না করুক। দলে দলে স্কুল-কলেজের ছেলেরা আমার সঙ্গে দেখা করতে আরম্ভ করলে—বয়স্কেরাও পিছিয়ে রইলেন না—অনেকেই, যাঁরা পরে নামজাদা হয়েছিলেন। আমি তাঁদের থেকে বেছে বেছে একটি অন্তরঙ্গ দল গঠন করলুম। ভারতবর্ষের একখানি মানচিত্র তাদের সামনে রেখে সেটিকে প্রণাম করিয়ে শপথ করাতুম তনু মন ধন দিয়ে এই ভারতের সেবা করবে। শেষে তাদের হাতে একটি রাখি বেঁধে দিতুম, তাদের আত্মনিবেদনের সাক্ষী বা badge। হুমায়ুন যেমন এক রাজপুত কন্যার রাখি গ্রহণ করে তার হয়ে বিপদ বরণ স্বীকার করেছিলেন, ছেলেদের তেমনি আমার হাতে এ রাখি-গ্রহণ মাতৃভূমির সেবা গ্রহণের জন্যে বিপদ বরণের স্বীকৃতি। আমার রাখি-বাঁধা দলটি একটি গুপ্ত সমিতি নয়; তবু সঙ্কল্প মনে মনে রাখলেই উদযাপনের দঢ়তা হয় বলে মুখে মুখে রটান বারণ ছিল।

 তত্রাচ নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়ের কাছে খবরটা পৌঁছল। তিনি রঙ্গরসে, আমোদে-কৌতুকে অনেককে টানতেন।

 আশু চৌধুরীর আমার প্রতি ভারি স্নেহ ও শ্রদ্ধা। তিনি আমায় একদিন বললেন—“সরলা সাবধান হয়ো। নাটোরের বৈঠকে বলাবলি চলছে—সরলা দেবী দেশের ছেলেদের বীর করে তুলবেন বলে তাদের হাতে একটা করে লাল সুতো বেঁধে বেঁধে দিচ্ছেন। এতে পুলিসের কান খাড়া হচ্ছে।”

 বছর কত পরে বঙ্গভঙ্গের দিনে এই লাল সুতোর রাখিবন্ধন দেশময় ছড়াল—রবীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে নাটোরও তাতে বাঁধা পড়লেন।

 যেসব ছেলেরা তখন আমার কাছে আসত তার মধ্যে মণিলাল গাঙ্গুলী বলে একটি ছেলে ছিল। সে Dawn পত্রিকার সম্পাদক সতীশ মুখুয্যের ভাগিনেয়। সতীশবাবুও মাঝে মাঝে এসেছেন। মণিলালের সাহিত্যের দিকে একটু ঝোঁক ছিল। তার পরিচালিত একটা সাহিত্য-সমিতি ছিল ভবানীপুরের ছেলেদের। সে একদিন আমায় অনুরোধ করলে তাদের সাম্বৎসরিক উৎসবের দিন আসছে আমি যেন তাতে সভানেত্রীত্ব করি। যদিও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে এসেছি—কিন্তু কলকাতা শহরে ছেলেদের সভায় উপস্থিত হওয়া ও সভানেত্রীত্ব করা তখন আমার কল্পনার বাইরে। আমি ইতস্ততঃ করতে লাগলুম। সে আবার পীড়াপীড়ি করাতে আমি একটু ভেবে তাকে বললুম—“আচ্ছা, তোমাদের সভায় সভানেত্রীত্ব করতে যাব—এটাকে যদি তোমাদের সাহিত্যালোচনার ১২৭ সাম্বৎসরিক না করে সেদিন তোমাদের সভা থেকে ‘প্রতাপাদিত্য উৎসব’ কর, আর দিনটা আরও পিছিয়ে ১লা বৈশাখে ফেল, যেদিন প্রতাপাদিত্যের রাজ্যাভিষেক হয়েছিল। সভায় কোন বক্তৃতাদি রেখ না। সমস্ত কলকাতা ঘরে খুঁজে বের কর কোথায় কোন্‌ বাঙালী ছেলে কুস্তি জানে, তলোয়ার খেলতে পারে, বক্সিং করে, লাঠি চালায়। তাদের খেলার প্রদর্শনী কর—আর আমি তাদের এক-একটি বিষয়ে এক-একটি মেডেল দেব। একটিমাত্র প্রবন্ধ পাঠ হবে—সে তোমাদের সাহিত্য-সভার সাম্বৎসরিক রিপোর্ট নয়—প্রতাপাদিত্যের জীবনী। বই আনাও—পড় তাঁর জীবনী, তার সার শোনাও সভায়?”

 মণিলাল রাজি হল। তলোয়ার খেলা দেখানর জন্যে তাদের পাড়ার বাঙালী-হয়ে-যাওয়া রাজপুত ছেলে হরদয়ালকে যোগাড় করলে, কুস্তির জন্যে মসজিদবাড়ির গুহদের ছেলেরা এল, বক্সিংয়ের জন্যে ভূপেন বসুর ভাইপো শৈলেন বসুর দলবল এবং লাঠির জন্যে দু-চারজন লোক কোথা হতে সংগ্রহ হল। আমি যেভাবে বলেছিলুম, সেইভাবে সভার কার্যক্রম পরিচালিত হল। কেবল আরম্ভে মণিলালের অনুরোধে আমাকে দিয়ে প্রতাপাদিত্যের একটি উদ্বোধনের দ্বারা সভার ‘atmosphere’ তৈরি করে দেওয়া হল। তারপরে মণিলাল-লিখিত তাঁর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠের পরই নানা রকম খেলাধূলা চলল ও শেষে আমার হাতে মেডেল বিতরণ। সেই মেডেলের একদিকে খোদা ছিল—“দেবাঃ দুর্বলঘাতকাঃ”।

 সভায় কলকাতার সংবাদপত্রের প্রতিনিধিরা প্রায় সবাই উপস্থিত ছিলেন। ‘সঞ্জীবনী’ লিখলেন—‘‘কলিকাতার বুকের উপর যুবক-সভায় একটি মহিলা সভানেত্রীত্ব করিতেছেন দেখিয়া ধন্য হইলাম।” ‘বঙ্গবাসী’র লেখার সার,—“মরি মরি কি দেখিলাম! এ কি সভা! বক্তিমে নয়, টেবিল চাপড়-চাপড়ি নয়-শুধু বঙ্গবীরের স্মৃতি আবাহন, বঙ্গ-যুবকদের কঠিন হস্তে অস্ত্রধারণ ও তাদের নেত্রী এক বঙ্গললনা—ব্রাহ্মণ কুমারীর সুকোমল হস্তে পুরস্কার বিতরণ। দেবী দশভুজা কি আজ সশরীরে অবতীর্ণা হইলেন? ব্রাহ্মণের ঘরে কন্যা জাগিয়াছে, বঙ্গের গৌরবের দিন ফিরিয়াছে।’’

 বিপিন পাল তাঁর Young India-তে টিপ্পনী করলেন—

 ‘‘As necessity is the mother of invention, Sarala Devi is the mother of Pratapaditya to meet the necessity of a hero for Bengal!”

 দেশের লোকে এ টিপ্পনীতে ভড়কালে না। বাঙালীর নিবিড়তম মর্মদেশে প্রতাপাদিত্যের প্রবেশ হল। তার প্রথম বহির্বিকাশ দেখা দিলে প্রোফেসর ক্ষীরোদ বিদ্যাবিনোদের প্রতাপাদিত্য নাটক রচনায় ও স্টার থিয়েটারে রাতের পর রাত তার অভিনয় পরিচালনায়। দেখাদেখি রেষারেষি মিনার্ভায় অমর দত্তের ‘প্রতাপাদিত্য’রও আবির্ভাব হল।

 তীর এসে বিঁধল আমার বুকে রবীন্দ্রনাথের হাত থেকে—সাক্ষাতে নয়, দীনেশ সেনের মারফতে। দীনেশ সেন একদিন তাঁর দূত হয়ে এসে আমায় বললেন-“আপনার মামা ভীষণ চটে গেছেন আপনার উপর।”

 “কেন?”

 ‘‘আপনি তাঁর ‘বৌঠাকুরাণীর হাটে’ চিত্রিত প্রতাপাদিত্যের ঘৃণ্যতা অপলাপ করে আর এক প্রতাপাদিত্যকে দেশের মনে আধিপত্য করাচ্ছেন। তাঁর মতে, প্রতাপাদিত্য কখনো কোন জাতির hero-worship-এর যোগ্য হতে পারে না।”

 আমি দীনেশবাবুকে বললুম—“আপনি তাঁকে বলবেন, আমি ত প্রতাপাদিতাকে moral মানুষের আদর্শ বলে খাড়া করতে যাইনি—তাঁর পিতৃব্য-হনন প্রভৃতির সমর্থন করিনি। তিনি যে politically great ছিলেন, বাঙলার শিবাজী ছিলেন, মোগল-বাদশার বিরুদ্ধে একলা এক হিন্দু জমিদার খাড়া হয়ে বাঙলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, নিজের নামের সিক্কা চালিয়েছিলেন—সেই পৌরুষ, সেই সাহসিকতার হিসেবে তিনি যে গৌরবার্হ, তাই প্রতিষ্ঠা করেছি। এতে যদি ইতিহাসগত কোন ভুল থাকে তিনি সংশোধন করে দিন, আমি মাথা পেতে স্বীকার করে নেব।’’ এর উত্তর নিয়ে দীনেশ সেন আর পুনরাগমন করেননি। বাঙালীর বীরপূজা চলতে থাকল। অতঃপর আমি ‘বঙ্গের বীর’ সিরিজের ছোট ছোট পুস্তকাবলী বের করতে আরম্ভ করলুম। এবার প্রতাপাদিত্যের পুত্র উদয়াদিত্যের উৎসবের আয়োজন করলুম। সেকালে সুরেন বাঁড়ুয্যের ‘Bengalee’ বাঙালী পরিচালিত মুখ্য ইংরেজি পত্র। ‘Bengalee’তে খুব উৎসাহের সঙ্গে আমার আয়োজিত সব অনুষ্ঠানের রিপোর্ট বেরতে লাগল। উদয়াদিতা-উৎসবের ঘোষণায় বেঙ্গলি এইভাবে লিখলেন—“সরলা দেবী দেশের উপর নতুন নতুন ‘surprise spring’ করছেন—আমরা তাঁর সঙ্গে দৌড়ে দৌড়ে হাঁফিয়ে পড়ছি। রোজ ভোরে উঠে মনে হয়—অতঃ কিম্‌?”  নজর পড়েছিল আমার যে রাজপুত বীরবালক বাদল প্রভৃতির কীর্তি পড়ে আমরা বাঙালীরা অভিভূত হই, তাদের গৌরবে গৌরবানুভব করি, কবিতা বানাই, কিন্তু বাঙালীর ঘরের ছেলে উদয়াদিত্য যে মোগলদের বিরুদ্ধে বাঙালীর স্বাধীনতা রক্ষার চেষ্টায় সম্মুখ-সমরে দেহপাত করেছিলেন—তার খবর কিছুই রাখিনে। তার স্মৃতি বাঙালী যুবকের ধমনীতে ধমনীতে প্রবাহিত করে দেওয়ার দরকার। আমার কাছে তখন যেসব ছেলেরা আনাগোনা করতেন, তার মধ্যে অনেক বি-এ, এম-এ ছিলেন, কলেজের প্রোফেসরও ছিলেন। শ্রীশচন্দ্র সেন তার মধ্যে একটি। ইনিই উদয়াদিত্য-উৎসব সম্পাদনের ভার নিলেন। আমি ইণ্ডিয়ান মিররের এডিটর ও এলবার্ট হলের অন্যতম ট্রাস্টী বৃদ্ধ নরেন্দ্রনাথ সেনকে লিখে, টাকা পাঠিয়ে হল ভাড়া করিয়ে দিলুম উৎসবের জন্যে। উদয়াদিত্যের কোন ছবি ত নেই। উৎসবগৃহে তাঁর পরিচায়ক কি থাকতে পারে? ভেবে দেখলুম ক্ষত্রিয় বীরের আত্মার প্রতিরূপ তাঁর তরবারি। সুতরাং একখানি তরবারি স্টেজের উপর থাকবে,—সভাসীনেরা উদয়াদিত্যকে স্মরণ করে তাতেই পুষ্পাঞ্জলি দেবে। সব আয়োজন সম্পূর্ণ হয়েছে, একজন হিন্দুস্থানী জমিদারের কাছ থেকে হীরা-জহরতের হাণ্ডিলওয়ালা সুন্দর ঝকঝকে একটি তলোয়ার যোগাড় হয়েছে, ক্ষীরোদ বিদ্যাবিনোদ প্রেসিডেণ্টের আসন গ্রহণ করবেন স্থির হয়েছে, হ্যাণ্ডবিল প্রচুরভাবে ছড়ান হয়েছে, বিকেল চারটেতে মিটিং, আয়োজনকারীরা বেলা দশটা থেকে সেখানে মোতায়েন—এমন সময় ঠিক বারটার সময় দৌড়তে দৌড়তে শ্রীশবাবু বালিগঞ্জে এসে হাজির—তখন আমরা কাশিয়াবাগান থেকে বালিগঞ্জে উঠে এসেছি। এসে বললেন—“নরেন সেন লোকের হাতে চিঠি পাঠিয়েছেন এলবার্ট হলে মিটিং হতে পারবে না। কারণ, তিনি শুনেছেন, ছেলেরা নাকি তলোয়ার পূজা করবে। এসব ভয়াবহ রাজবিদ্রোহাত্মক কাজ—তাতে তিনি অনুমতি দিতে পারেন না।”

 আমি শ্রীশবাবুকে বললুম—“যত টাকাই লাগুক, অন্য কোন স্থান, কোন থিয়েটারের স্টেজ হোক, যাই হোক, ভাড়া করে হাতে রাখুন। আমি ইতিমধ্যে নরেনবাবুকেও চিঠি লিখে দেখছি ফের এলবার্ট হলেই করাতে পারি কিনা।”

 আমি বৃদ্ধকে লিখলুম—“আপনি পরম হিন্দু—ভাল করেই জানেন হিন্দুর পূজা তিন রকমে হয়—ঘটে পটে ও খড়্গে। পটের অভাবে এক বীর ক্ষত্রিয়ের আত্মার প্রতিনিধিস্বরপ বাঙালী ছেলেরা খড়্গে তাঁর পূজার আয়োজন করেছে—এক হিন্দুস্থানী রাজা খুশী হয়ে সেজন্যে নিজের তলোয়ার তাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ আপনি তাদের এ-পূজা যদি বন্ধ করেন, সংবাদপত্রের সূত্রে সমস্ত ভারতবর্ষে ঢিঢি পড়ে যাবে। সবাই বললে বাঙালী যুবকেরা খড়্গপূজা করতে চেয়েছিল, একজন নেতৃস্থানীয় বাঙালী বৃদ্ধ হিন্দু তাতে বাধা দিয়েছেন, তাঁর অতিমাত্রার রাজভক্তি তাতে রাজদ্রোহিতার গন্ধ পেয়ে থরহরি কম্পমান হয়েছে, তাঁর তথাকথিত হিন্দুত্বের পরীক্ষায় আজ তিনি সম্পূর্ণভাবে fail করেছেন। এই ত একদিকে দেশের লোকের ধিক্কার—আর একদিকে মামলায় ফেঁসে যাবেন। আপনি উদয়াদিত্য-উৎসব হবে জেনে-শুনে আজ চারদিন থেকে টাকা গ্রহণ করে Albert Hall ভাড়া দিয়েছেন। টাকা এখনও ফেরাননি। এ অবস্থায় হঠাৎ শেষ মুহূর্তে ছেলেদের উৎসব বন্ধ করলে তারা আপনার নামে ক্ষতিপূরণের মকদ্দমা আনতে পারে। আইনতঃ আপনি দায়ী। অতএব সব দিক থেকেই আপনার পক্ষে বিজ্ঞোচিত কাজ হবে ছেলেদের উৎসব এখানে হতে দেওয়া।”

 বৃদ্ধ আমার চিঠি পেয়ে লিখলেন—“তবে তাই হোক। ছেলেরা উৎসব করুক। কিন্তু এর জন্যে সব দায়িত্ব আপনার।” নিজের স্কন্ধের দৌর্বল্য স্বীকার করে তাঁর কন্যাসমা দেশের এক বালিকার স্কন্ধে দায়িত্বের বোঝা চাপিয়ে বৃদ্ধ হাত ধুয়ে বসলেন। ইতিমধ্যে আমার কাছে খবর এসে গেছে যে, শ্রীশবাবু দ্বিগুণ টাকা স্বীকার করে হ্যারিসন রোড়ের উপর এলবার্ট হলের অতি সন্নিকটেই এলফ্রেড থিয়েটারের স্টেজ ভাড়া নিয়েছেন। আমার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে গেল তাঁর দূত এসে। থিয়েটারের মাড়োয়ারী স্বত্বাধিকারীকে তাঁরা খুলে বলেছিলেন—“আমরা তলোয়ার পূজা করব জেনে রেখো।” মাড়োয়ারী বললে—“আপনারা পূজা করেন, নাচেন, কুঁদেন সে আপনারা জানেন। আমার কি? আমার ভাড়া পাওয়া নিয়ে কথা, সেটা হাতে হাতে পেলেই হল।” হাতে হাতেই পেলে। তারপর শ্রীশবাবুর কাছে যখন নরেন সেনের স্বীকৃতি পত্র পাঠালুম তখন আর তাঁরা এলবার্ট হলে ফিরে যেতে রাজী হলেন না। সভা এলফ্রেড থিয়েটারেই হল। এলবার্ট হলের সামনে ভলাণ্টিয়ার রেখে দেওয়া হল—হ্যাণ্ডবিল অনুসারে সেখানে যেমন যেমন লোক সমাগত হয় তাদের এলফ্রেড থিয়েটারে পাঠান হয়।

 উদয়াদিত্যের উদ্বোধন প্রথমে কৃত হল প্রেসিডেণ্টের দ্বারা আমার পাঠান লেখা পড়ে, আমি নিজে যাইনি। তারপর ক্ষীরোদবাবুর অভিভাষণ হল, সব শেষে তলোয়ারের সম্মুখে পুষ্পাঞ্জলি। ক্ষীরোদবাবুর অভিভাষণের সারমর্ম ছিল—মৎস্য পুরাণের সেই কাহিনী যাতে ঋষির হাতে আসা একটি ক্ষুদ্র কূপের মীনকে ঋষি এক সরোবরে ফেলে দিতে তার সরোবরব্যাপী বহৎ কায়া হল। সেখান থেকে তুলে সমুদ্রে ফেলতে তার কায়া বর্ধিত হতে হতে সে অনন্তব্যাপী হল। তখন ঋষির হাতে পড়া ক্ষুদ্র কূপের সেই ছোট্ট মৎস্যটি বলেন—“আমায় দেখ, আমি অনন্ত।” ক্ষীরোদবাবু ভবিষ্যতে দৃষ্টি বিস্তার করে বললেন—আজকের এই ক্ষুদ্র উৎসবের পরিকল্পনারূপী মৎস্যটি একদিন সমগ্র বাঙালী জাতির মধ্যে কায়াবিস্তার করে বাঙালীকে বীরত্বে বিপুল করে পরিদৃশ্যমান হবে।” তাঁর সে ভবিষ্যৎ দৃষ্টি সত্য হয়েছে কি না, আমার সাধনা সিদ্ধ হয়েছে কি না দেশ তার পরিচয় পেয়েছে।

 বাঙলার বাইরে এক বছর থেকে মহারাষ্ট্রীয় ও দাক্ষিণাত্যের লোকেদের সংস্পর্শে এসে আমার স্বদেশপ্রীতির পরিধিটা অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল। শঙ্করাচার্য যে ভারতবর্ষকে উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম এই চতুর্দিকে চারটি ধামের বা তীর্থক্ষেত্রের বন্ধনীতে ঐক্যডোরে বেঁধেছিলেন সেই ভারতবর্ষ আমার বুকে আধিপত্য স্থাপন করেছিল। সেই সমগ্র ভারতের উপলব্ধিময় হয়েছিলুম—বঙ্গ যার পূর্ব প্রান্ত। বাঙলাকে বাকী প্রান্তগুলির সঙ্গে সমান লাইনে মাথা খাড়া করে দাঁড় করাতে হবে বটে, কিন্তু বাকী প্রান্তগুলিকে ভুললে চলবে না। তাই ওয়াচার প্রেসিডেণ্টশিপে সেবার বিডন স্ট্রীটে যখন কংগ্রেস বসল তাতে গাওয়ার জন্যে আমার সমস্ত সত্তা মন্থন করে গান বেরল—

অতীত গৌরব বাহিনী মম বাণী
গাও আজি হিন্দুস্থান!

এর নতুনত্ব সকলেরই হৃদয়স্পর্শী হল। রবীন্দ্রনাথ নিজে এর সমজদার হয়ে গাওয়ানর ভার নিলেন। সেবার কংগ্রেসে পাণ্ডালের বাইরে ও ভিতরে সবসুদ্ধ তিনশ ভলাণ্টিয়ার ছিল। সুরেন বাঁড়ুয্যের বক্তৃতা যেদিন বিকেলে হবে সেদিন পাণ্ডালের বাইরের ভলণ্টিয়াররা তাদের পোস্ট ছেড়ে নিয়ম ও শাসন ভঙ্গ করে সুরেন বাঁড়ুয্যের বাগ্মিতার ধারা শোনার আগ্রহে ভিতরে হুড়মুড় করে ঢুকে visitors' seats দখল করে বসে পড়ল। দিবাবসানে ভূপেন বোস তাদের একত্র করে এজন্যে খুব ধমক দিলেন। তারা চটে সবাই মিলে বিদ্রোহী হয়ে বললে—আগামী কালকের অধিবেশনে তারা কেউ আর ভলণ্টিয়ারী করতে আসবে না। সেই সময় কেন জানিনে ভূপেন বসু আমায় ডেকে বললেন—“তুমি এদের একটু বুঝিয়ে বল।”

 আমার মাথায় আর কোন বুদ্ধি যুটল না—আমি তাদের ডেকে শুধু বললুম—“দেখ তোমরা সব ভলাণ্টিয়ারেরা কাল আরম্ভের গানটার কোরাসে যোগ দিও। পাণ্ডালের ভিতরে বাইরে যে দিকে যেখানে যে থাক দাঁড়িয়ে বা বসে সবাই এককণ্ঠে সমস্বরে কোরাস গেয়ে উঠবে। আগে সব গানটা শিখে নাও আজ এক্ষুনি আমার কাছে, তাহলে কাল গাইতে পারবে।” রাত ১০টা পর্যন্ত আমি তাদের গানটা গাইয়ে পাকা করিয়ে দিলুম। গানের রসে ভুলে তারা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। তুফানের জলে তেল ঢালা হল। তার পরদিন আর কোন গোলমাল হল না। যথাসময়ে পাণ্ডালের প্রত্যেক দিক থেকে একটা মহারব গুঞ্জিয়ে উঠল—

গাও সকল কণ্ঠে সকল ভাষে
নমো হিন্দুস্থান!
হর হর হর—জয় হিন্দুস্থান!
সৎশ্রী অকাল হিন্দুস্থান!
আল্লা হো আকবর—হিন্দুস্থান!
নমো হিন্দুস্থান!

সকলের ভিতর একটা পুলক সঞ্চারণ করলে।

 সেদিনকার অভিজ্ঞতায় আমার মনে একটা কথার উদয় হল,—এই যে বছর বছর যেখানে কংগ্রেস হয় সেখানে সাময়িকভাবে একদল ভলাণ্টিয়ারদের কুচকাওয়াজ করিয়ে গড়ে তোলা হয়—তারপরে তারা ছোড়ভঙ্গ হয়ে যে যেখানে চলে যায়, আর শাসন নিয়মের ধার ধারে না, এ জিনিসগুলো তাদের মজ্জাগত হয় না—এতে অনেকটা অযথা শক্তিক্ষয় করা হয়। এর চেয়ে যদি স্থায়ী ভাবে একটা ‘ভলাণ্টিয়ার কোর’ গড়ে তাদের বারমাস হপ্তায় একদিন করে অন্তত drill ও discipline শিক্ষা দেওয়া হয় অনেক কাজ হয়। এবারকার কংগ্রেস ভলাণ্টিয়ারের কাপ্তেন যে ছিল সে আমাদের বেথুন কলেজের সংস্কৃত পণ্ডিত “চন্দ্রকান্ত মশায়ের দৌহিত্র—পরে মোহিনীবাবুর জামাতা হয়। আমি তাকে ডেকে সেই প্রস্তাব করলুম, সে রাজী হল। কংগ্রেসের অধিবেশন শেষ হলে যখন একদিন সমস্ত ভলাণ্টিয়ারদের নিমন্ত্রণ করে খাওয়ান হল আমাদের বাড়িতে, সেইদিন এই ভলাণ্টিয়ার কোরের গোড়াপত্তন হল।

 ইতিমধ্যে আমার হাতে রুডিয়ার্ড কিপ্লিংয়ের একখানা ছোট গল্পের বই এসে পড়েছিল। তার একটা গল্পে আছে—ভারত সীমান্তে পাঠানদের মুলুকে একজন বাঙালী আই-সি-এস সাহেব ডেপুটি কমিশনার নিযুক্ত হয়েছেন। সমস্ত ডিস্ট্রিক্টের ভার তাঁর উপর। একবার যখন পাঠানরা হঠাৎ বিদ্রোহী হয়ে খুন-খারাপী ও লুটতরাজ আরম্ভ করলে তখন বাঙালী ডেপুটি কমিশনার সাহেব দুষ্কৃতের শাসন ও সুকৃত প্রজার পালনে রত না থেকে কোথায় পলাতক হলেন কেউ পাত্তা পেলে না। শেষে পাঠান চরেরা খুঁজে খুঁজে তাকে বের করলে যেখানে ভয়ে কম্পমান হয়ে লুকিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। তাঁকে ধরে ফেলে এক কোপে তাঁর গলাটা কেটে মণ্ডটা একটা শূলের উপর গেঁথে সারা শহরময় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগল—“বাঙালী গিদ্দর” (শৃগাল)। এই গল্পটা পড়তে পড়তে লজ্জায় ঘৃণায় অপমানে আমার রক্ত টগবগ করতে থাকল। কি করতে পারি আমি এই অপমানের প্রতিশোধ নেবার জন্য? কিপ্লিংকে একখানা চিঠি লিখলুম, তার মর্ম—“আমার জাতিকে তুমি যে কলঙ্কিত করেছ সে কলঙ্ক ঘোচানর জন্যে আমি তোমাকে আহ্বান করছি—আমার ভাইদের একজন কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে! পাঁচ বৎসর সময় দিচ্ছি তোমায়। বন্দুক হোক, তলোয়ার হোক, যে কোন অস্ত্র তুমি ইচ্ছে কর নিজেকে তাতেই অভ্যস্ত করে নাও—আজ হতে পাঁচ বছর পরে সে তাতেই তোমাকে যুদ্ধদান করবে।”

 ঠিকানা জানিনে কোথায় পাঠাব। সন্ধান করতে করতে বিলম্ব হতে লাগল। এর ভিতর কটকে যাওয়ার জন্যে একটা তাগাদা এল। সেখানে উড়িষ্যার দেশভক্ত মধুসূদন দাসের সঙ্গে পরিচয় হল, তিনি প্রায় বাঙালী। কথায় কথায় তাঁকে একদিন ঐ প্রেরিতব্য চিঠির কথা বললুম। চিঠিখানা সঙ্গেই ছিল, তাঁকে পড়ে শোনালুম। তিনি বিজ্ঞ পুরুষ, পরামর্শ দিলেন—“ওকে যখন পাঁচ বছর সময় দিচ্ছেন, নিজেও পাঁচ বছর সময় নিয়ে অপেক্ষা করুন। এই পাঁচ বছরে বাঙালী ছেলেদের তৈরী করে নিন, সব রকম অশ্বচর্চায় পারদর্শী করে তুলুন। একটা নামডাক হোক তাদের। তারপর কিপ্লিংকে challenge পাঠাবেন। সেইটেই সঙ্গত হবে।” আমি কথাটার যুক্তিযুক্ততা স্বীকার করলুম। কলকাতায় ফিরে এসে সন্ধান করে করে শ্রীরামপুরের উকীল মহেন্দ্র লাহিড়ীর বাড়ির ছেলেদের কাছে তাদের তলোয়ার ও গৎকা প্রভৃতির শিক্ষক প্রোফেসর মার্তাজা বলে একজন মুসলমান ওস্তাদের খবর পেলুম। তাকে ডেকে আমাদের বাড়িতে পাড়ার ছেলেদের একটা ব্যায়াম ক্লাব খুলে মোটা মাইনে দিয়ে তার শিক্ষক নিযুক্ত করলুম। তখন আমরা কাশিয়াবাগান থেকে উঠে ২৬নং সার্কুলার রোডে এসেছি। এ বাড়িতে সামনে একটা বড় lawn আছে, আর পিছন দিকে পুকুর ধারে একটা ছোটখাট চৌকোনা জায়গা আছে, সেখানে ছেলেরা নানারকম অস্ত্র শিক্ষা করে। ক্লাবের সব খরচ—মার্তাজার মাইনে, বক্সিংয়ের দস্তানা, গৎকা, ঢাল, ছোরা, তলোয়ার, বড় লাঠি ও ছোট লাঠি প্রভৃতি সবেরই খরচ আমি দিই। ভবানীপুরের ছেলেরা আসে, শেখে। আমি বসে থাকি চেয়ারে একপাশে, সামনে টেবিল পেতে একটা খাতায় প্রতিদিন ছেলেদের হাজরি লিখি। ক্রমে ক্রমে এই ক্লাবের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল, দূর দূর থেকেও ছেলেরা আসতে লাগল এবং কলকাতার পাড়ায় পাড়ায় এই রকম ক্লাব খুলে গেল। পুলিন দাস এলেন ঢাকা থেকে ‘অনুশীলন সমিতি’র সর্দার হয়ে। অধিকাংশ ক্লাবই আমার কাছ থেকে কিছু না কিছু সাহায্য পেত, জিনিসে বা টাকায়—‘অনুশীলন সমিতি’ও পেত, এবং সব ক্লাবরাই যে যখন পারে এক একবার করে মার্তাজাকে শিক্ষক করে নিয়ে যেতে লাগল।