জেবুন্নিসা বেগম

জেবুন্নিসা বেগম



বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষৎ

শৈল স্মৃতি গ্রন্থসংগ্রহ
প্রদাত্রী—শ্রীমতী নিশারাণী ঘোষ,

৩৫৷১০, পদ্মপুকুর রোড।
আমার স্বর্গগতা

সুখ-দুঃখের চির-সঙ্গিনীর উদ্দেশ্যে
“জেবুন্নিসা বেগম” নামক
এই পুস্তিকা উৎসর্গ

করিলাম।

জেবুন্নিসা বেগম

শ্রীসমরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্ম্মা

৫৯।১, বালীগঞ্জ সারকুলার রোড
কলিকাতা
১৩৩৯ ত্রিপুরাব্দ

Printed and published by J. Banerji for Messrs. S. C. Auddy & Co.
At the Wellington Printing Works
10, Haladhar Bardhan Lane and 6 & 7, Bentinck Street, Calcutta.

সূচীপত্র

 বিষয়
পৃষ্ঠা
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
২৩
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
৩১
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
৩৭
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
৪৫
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
৫৩
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
৫৯
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
৬৭
…          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …          …
৭৭



শুদ্ধিপত্র

পৃষ্ঠা   অশুদ্ধ     শুদ্ধ  
  জাহানারা     জহানারা  
১৯   দুইটী   مي     مے  
২৪   সমস্ত   شبلي   نمي     نمے   شبے  
২৫                   
২৭   রোজা তসবিহ     রোজা ও তসবিহ  
৪১   ھائي   ھوائي   پائي     ھاۓ   ھواۓ   پاۓ  
৪৮   مي     مے  
৬৪   ي   بی     اے  بے
    ھائي   بوئي     ھاۓ   بوے
৭৯   বহুকুম     হুকুম-এ-  

সূচনা

 একদিন বন্ধুবর শ্রীযুক্ত অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ডি. লিট্‌, সি. আই. ই. ও শ্রীযুক্ত সমরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহিত দেখা হওয়ার কালে প্রসঙ্গক্রমে ভুবনবিখ্যাত কবি “জেবুন্নিসা“বেগমের কথা উত্থাপিত হয়। কিছুদিনের জন্য আমি যখন আগ্রায় ছিলাম, সেই সময়ে উর্দু ভাষায় রচিত উক্ত বিদুষী মহিলার যে একখানি জীবন-চরিত ক্রয় করি—ঐ পুস্তকে বিবৃত কথাগুলি আমি তাঁহাদিগকে বলিয়া শুনাই।

 উক্ত বন্ধুদ্বয় আমার নিকট হইতে “জেবুন্নিসা” বেগমের বৃত্তান্ত শুনিয়া তাঁহার সম্বন্ধে একখানি পুস্তক লিখিবার জন্য আমাকে ধরিয়া বসেন। তাঁহাদিগের অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া আমি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কহিলাম—আপনারা যখন বলিতেছেন তখন আমি এই অসুস্থ অবস্থাতেও আপনাদের কথা রাখিতে প্রস্তুত আছি। তবে আপনাকেও ইহার ভূমিকা লিখিয়া দিতে হইবে। আমার সেই অনুরোধে তিনি এই পুস্তিকার ভূমিকা লিখিয়া দিয়াছেন, এজন্য আমি তাঁহাকে আন্তরিক ধন্যবাদ প্রদান করি।

 “জেবুন্নিসা” বেগমের যে জীবন-চরিতের বিষয় উল্লেখ করিয়াছি, তাহাতে উক্ত বেগমের বিদ্যানুশীলন ও কবিত্বের বিষয় এবং তদীয় জীবনের উপর দিয়া সুখ-দুঃখময় যে সমুদয় ঘটনাস্রোত প্রবাহিত হইয়া গিয়াছে—যাহার অধিকাংশই রোম্যাণ্টিক্‌—সেই সব কথা বিশদরূপে বর্ণিত আছে। ঐ পুস্তক অবলম্বনেই জেবুন্নিসা বেগমের জীবনে ঘটিত বিষয়াবলীর কাহিনী সঙ্ক্ষেপে গল্পের ছলে লিখিয়াছি।

 উল্লিখিত বেগমের আর একখানি জীবনবৃত্তান্ত অনেকদিন পূর্ব্বে আমার নিকট ছিল— তাহাও উর্দু ভাষায় রচিত। যতদূর পর্য্যন্ত মনে পড়ে পুস্তক দুইখানির বিবৃত বিষয় প্রায় একই প্রকার, পার্থক্য থাকিলেও সামান্যই হইবে।

 এই পুস্তিকার শেষ অংশ “লতীফ্‌-এ-লাহোর” নামক সুবিখ্যাত গ্রন্থ ও “রূপম্‌” পত্রিকা হইতে গৃহীত হইয়াছে। পুস্তিকাখানি লিখার সাহায্যের জন্য শ্রীযুত অজিত ঘোষ, এম্‌. এ., বি. এল্‌., এড্‌ভোকেট মহাশয় ঐ পত্রিকা আমাকে দিয়াছিলেন। এজন্য তাঁহার নিকট আমি বিশেষ বাধিত আছি।

 মুগল রাজত্ব-কালে অঙ্কিত চিত্র ও পারস্য অক্ষরে লিখিত পুস্তকাদি সংগ্রহকারক উক্ত বিজ্ঞবরের নিকট শুনিলাম—প্রাচীন গ্রন্থাদি বিক্রেতা জনৈক ব্যক্তি জেবুন্নিসা বেগমের “বৈয়াজ” (হাতের লিখা পুস্তক) বিক্রয়ের জন্য তাঁহার নিকট আনিয়াছিল। হাজার টাকা মূল্য বলাতে অনেক অধিক মূল্য চাহিতেছে মনে করিয়া তিনি উহা রাখেন নাই।

 যে “দিওয়ান-এ-মখ্‌ফী” সচরাচর দৃষ্ট হয়, তাহা হইতে অতিরিক্ত কবিতা ঐ বৈয়াজে আছে কিনা, এবং তাহার দ্বারা বর্ণিত বেগমের বিষয় আরও নূতন কিছু উদ্ঘাটিত হয় কিনা ইহা বৈয়াজ খানি দেখিলে জানা যাইত।

 এই পুস্তিকার ফারসী কবিতা এবং কথাসমূহ কলিকাতা মিউজিয়মের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মৌলবী শামসুদ্দীন আহম্মদ সাহেব এম্‌. এ. দেখিয়া দিয়াছেন। তিনি এই নিঃস্বার্থ পরিশ্রম স্বীকার করাতে আমি তাঁহাকে মুক্তকণ্ঠে ধন্যবাদ প্রদান করি।

৫৯৷১, বালীগঞ্জ সারকুলার রোড

কলিকাতা।

২রা পৌষ ১৩৩৯ ত্রিপুরাব্দ।

  শ্রীসমরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্ম্মা  

ভূমিকা

 সম্রাট্‌ ঔরঙ্গজেবের দুহিতা শাহ্‌জাদী কুমারী কবি জেবুন্নিসার জীবন নাট্যে যে অঙ্কে যে যে ভাবে যবনিকা উঠেছিল পড়েছিল শত শত বৎসর আগে, তারি কথা নিয়ে এই পুস্তিকাখানি দেশবিশ্রুত স্বাধীন ত্রিপুরা রাজবংশের স্বনামধন্য সুরসিক পার্সি, উর্দু, হিন্দি এবং নানা ভাষাতে সুপণ্ডিত ও নানা কলাবিদ্যায় পারদর্শী—বিশেষ করিয়া চিত্রে এবং সঙ্গীতে সুনিপুণ এবং সুলেখক শ্রীল শ্রীসমরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্ম্মা এই কাহিনীর রচয়িতা। ভারতের একচ্ছত্র মোগল সম্রাটের কন্যার কথা লিখেছেন বাংলার শ্রেষ্ঠতম রাজবংশের রাজপুত্র; এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কি হতে পারে। আমার একান্ত শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির বশেই বন্ধুবরের লেখার ভূমিকা লিখ্‌তে প্রস্তুত হয়েছি; না হলে আমার মনে হয় যে এই ভূমিকা কোন এক সুকবি সাহিত্যিকের উপর পড়্‌লেই ভাল হতো।

 ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে যেমন, তেমনি ভারতের সাহিত্যের ইতিহাসেও বিদুষী জেবুন্নিসার স্থান সুনির্দ্দিষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তথাপি বল্‌তে হচ্ছে যে বাংলাতে এ পর্য্যন্ত জেবুন্নিসার জীবনী ও কাব্য-কলা নিয়ে একখানি বই প্রকাশের ক্বচিৎ চেষ্টা হয়েছে। বাংলার কি হিন্দু কি মুসলমান অনেক নবীন কবি ও লেখককে আমি জানি। কিন্তু জেবুন্নিসার অপূর্ব্ব রচনাগুলিকে বাংলা ভাষাতে তর্জ্জমা করার উৎসাহ তাঁদের মধ্যে কারো দেখিনে। সত্য বটে কাল বদ্‌লেছে এবং সেই সঙ্গে আমাদের ভাব ও রুচির বদল হয়েছে; কিন্তু যে সমস্ত রস-রচনা ও কবি-জীবন দেশকালের অতীত হয়ে অমৃত লোকে স্থান পেয়ে গেল তাদের সম্বন্ধে উদাসীন হয়ে একালের মানুষ আমরা বসে রইলাম, এতো হতে পারে না।

 এই বইখানিতে জেবুন্নিসার সমস্ত কবিতা ও তার ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি, কেবল জেবুন্নিসার জীবনের ছবিটুকু সুপরিস্ফুট করে তুল্‌তে যে রচনাগুলি দেওয়া দরকার সেইগুলিই দেওয়া হয়েছে; সুতরাং জেবুন্নিসার একখানি পূরোপূরি কবিতার বই বাংলাতে লেখার অবসর এখনো রয়ে গেল; জানিনে সে সুযোগ ও সুসময় দেশে কবে আস্‌বে যখন দেশের জিনিসের খবর নিতে হবে না আমাদের বিদেশী ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিকগণের কাছে।

 বাদশাহ ঔরঙ্গজেব—রস কোন অবসর পেলোনা যার অন্তরে প্রবেশ কর্‌তে—তারি অন্দরে জন্মালো সুরসিকা, সুকবি জেবুন্নিসা। বড় দুঃখের জীবন সে বহন করে গেল এবং সেই অতি বড় দুঃখই দিয়ে গেল তাকে কবির অমরত্ব; তার কথা এবং তার রচনা সমস্ত জান্‌তে কৌতূহল কার না হয়।

 জীবদ্দশায় মোগল প্রাসাদের পাষাণ অবরোধের মধ্যে যে জেবুন্নিসাকে পাই আমরা অবগুণ্ঠিতা বন্দিনী বেশে; মৃত্যুর পরে যখন সে অবগুণ্ঠন সরে গেল, তখন পেলেম আমরা নিরবগুণ্ঠিতা অকুণ্ঠিতা চিরযৌবনা একজনকে—পাপ্‌ড়ির অবরোধ-ভাঙ্গা পরিমলের মতো সে! এইটুকু ঘটনা—একটুখানি জীবনের সকরুণ কাহিনী—এই নিয়ে এই বইখানির বড় একটা ভূমিকা লিখে একে ভারাক্রান্ত কর্‌তে চাইনে। শুধু এই আশা করি যে—কোন দিন রচয়িতা তাঁর সুনিপুণ হস্তে জেবুন্নিসার কবিতাগুলি দিয়ে তার রূপখানি পরিপূর্ণ করে আমাদের চোখে ধরবেন; কেন না দেখি—জেবুন্নিসা তিনি নিজেই বলছেন্‌—“যে আমাকে চায় সে নিয়ে নিক আমাকে আমার কবিতা থেকেই।” আমরা ভাবি মোগল বাদশাহদের অন্দরটা বুঝি ছিল কেবলি আলস্য আর বিলাসের লীলাভূমি; কিন্তু গুলবদন বেগম, নূরজাহাঁ, তাজবিবি, জাহাঁনারা, জেবুন্নিসা প্রভৃতি কতকগুলি নাম এ অপবাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্চে। এঁদের জীবনী ও রচনাবলী আমাদের পাঠকগণের নিকটে যতই সুগম হবে ততই এই ভুল ধারণা আমাদের মন থেকে দূর হবে। ইতিহাসের দিক্‌ দিয়ে এবং সাহিত্যের দিক্‌ দিয়ে এই ধরণের পুস্তকাদি প্রকাশের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আজকের দিনের সুশিক্ষিত মুসলমান সম্প্রদায় এ বিষয়ে উদাসীন না থেকে যদি উৎসাহের সঙ্গে এই কাজে অগ্রসর হন তবে সম্যক্‌ ফল পাওয়া সম্ভব হয়।

 আমি আমার বন্ধুপ্রবরের মুখে দিনের পর দিন এই সব মোগল অন্তঃপুরবাসিনী শাহজাদী ও সম্রাজ্ঞীগণের কাহিনী ও কবিতা শুনে কেবলি ভেবেছি কে এ সব রমণীয় রচনা ও কাহিনী তর্জ্জমা করে সাধারণ পাঠকদের কাছে ধরে দেবে! অপরিচিত ভাষার বাধা সরিয়ে, বিস্মৃতির অবগুণ্ঠন অপসারণ করে দিয়ে এই ক্ষুদ্র পুস্তিকায় আমার সে আশা বন্ধুবর অনেকটা পূর্ণ করেছেন; কিন্তু মনের ক্ষুধা এতে ত সম্পূর্ণ নিবৃত্তি হল না। মোগল অন্তঃপুরের পাষাণ প্রাচীর ও পর্দ্দার ওপারে যে সব ফুল ফুটে ফুটে সুদূর ইরান পর্য্যন্ত সৌরভ বিস্তার করে গেছে, তাদের মানস-শতদলের শত শত পাপ্‌ড়ির রং ও রূপ একমাত্র তাদের রচনা থেকে পেতে পারি আমরা। এই কাজে অগ্রসর হয়েছেন আমার বন্ধুবর ভগ্নশরীর নিয়ে, সেজন্য তিনি আমাদের সকলের ধন্যবাদের পাত্র। এমনি আরো মনোরম কাহিনী ও কবিতার বই তাঁর কাছ থেকে পাওয়ার আশা করি আমরা; আর আশা করি বাংলা-শিক্ষিত মুসলমান সম্প্রদায় এই কাজে অগ্রসর হউন। রস চিরদিন রসের বস্তুকে অম্লান ফুলের মতো করে রাখে, রসিকের উপভোগের আয়োজন যা, সেটি হল দেবদুর্ল্লভ এক অমৃতের আস্বাদের অপরিমেয় আনন্দ—একমাত্র কবিজনের কাছ থেকে পাই সেই আনন্দ যার তুলনা নাই।

২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৩৩৬।
কলিকাতা, জোড়াসাঁকো।

শ্রীঅবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।