শর্মিলা

 মেয়েরা দুই জাতের, কোনো কোনো পণ্ডিতের কাছে এমন কথা শুনেছি।

 এক জাত প্রধানত মা, আর এক জাত প্রিয়া।

 ঋতুর সঙ্গে তুলনা করা যায় যদি, মা হলেন বর্ষাঋতু। জলদান করেন, ফলদান করেন, নিবারণ করেন তাপ, ঊর্ধ্বলোক থেকে আপনাকে দেন বিগলিত ক’রে, দূর করেন শুষ্কতা, ভরিয়ে দেন অভাব।

 আর প্রিয়া বসন্তঋতু। গভীর তার রহস্য, মধুর তার মায়ামন্ত্র, তার চাঞ্চল্য রক্তে তোলে তরঙ্গ, পৌঁছয় চিত্তের সেই মণিকোঠায়, যেখানে সোনার বীণায় একটি নিভৃত তার রয়েছে নীরবে, ঝংকারের অপেক্ষায়, যে ঝংকারে বেজে বেজে ওঠে সর্বদেহে মনে অনির্বচনীয়ের বাণী।

 শশাঙ্কের স্ত্রী শর্মিলা মায়ের জাত।

 বড়ো বড়ো শান্ত চোখ; ধীর গভীর তার চাহনি; জলভরা নবমেঘের মতো নধর দেহ, স্নিগ্ধ শ্যামল; সিঁথিতে সিঁদুরের অরুণরেখা; শাড়ির কালো পাড়টি প্রশস্ত; দুই হাতে মকরমুখো মোটা দুই বালা, সেই ভূষণের ভাষা প্রসাধনের ভাষা নয়, শুভসাধনের ভাষা।

 স্বামীর জীবনলোকে এমন কোনো প্রত্যন্তদেশ নেই যেখানে তার সাম্রাজ্যের প্রভাব শিথিল। স্ত্রীর অতিলালনের আওতায় স্বামীর মন হয়ে পড়েছে অসাবধান। ফাউণ্টেন কলমটা সামান্য দুর্যোগে টেবিলের কোনো অনতিলক্ষ্য অংশে ক্ষণকালের জন্যে অগোচর হোলে সেটা পুনরাবিষ্কারের ভার স্ত্রীর 'পরে। স্নানে যাবার পূর্বে হাতঘড়িটা কোথায় ফেলেছে শশাঙ্কর হঠাৎ সেটা মনে পড়ে না, স্ত্রীর সেটা নিশ্চিত চোখে পড়ে। ভিন্ন রঙের দু-জোড়া মোজার এক-এক পাটি এক-এক পায়ে প’রে বাইরে যাবার জন্যে যখন সে প্রস্তুত, স্ত্রী এসে তার প্রমাদ সংশোধন করে দেয়। বাংলা মাসের সঙ্গে ইংরেজি মাসের তারিখ জোড়া দিয়ে বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে, তার পরে অকালে অপ্রত্যাশিত অতিথিসমাগমের আকস্মিক দায় পড়ে স্ত্রীর উপর। শশাঙ্ক নিশ্চয় জানে দিনযাত্রায় কোথাও ত্রুটি ঘটলেই স্ত্রীর হাতে তার সংস্কার হবেই, তাই ত্রুটি ঘটানোই তার স্বভাব হয়ে পড়েছে। স্ত্রী সস্নেহ তিরস্কারে বলে, “আর তো পারিনে। তোমার কি কিছুতেই শিক্ষা হবে না।” যদি শিক্ষা হোত তবে শর্মিলার দিনগুলো হোত অনাবাদি ফসলের জমির মতো।

 শশাঙ্ক হয়তো বন্ধুমহলে নিমন্ত্রণে গেছে। রাত এগারোটা হোলো, দুপুর হোলো, ব্রিজ খেলা চলছে। হঠাৎ বন্ধুরা হেসে উঠল, “ওহে, তোমার সমনজারির পেয়াদা। সময় তোমার আসন্ন।”

 সেই চিরপরিচিত মহেশ চাকর। পাকা গোঁফ, কাঁচা মাথার চুল, গায়ে মেরজাই পরা, কাঁধে রঙিন ঝাড়ন, বগলে বাঁশের লাঠি। মাঠাকরুন খবর নিতে পাঠিয়েছেন বাবু কি আছেন এখানে। মাঠাকরুনের ভয়, পাছে ফেরবার পথে অন্ধকার রাতে দুর্যোগ ঘটে। সঙ্গে একটা লণ্ঠনও পাঠিয়েছেন।

 শশাঙ্ক বিরক্ত হয়ে তাস ফেলে দিয়ে উঠে পড়ে। বন্ধুরা বলে, “আহা একা অরক্ষিত পুরুষমানুষ।” বাড়ি ফিরে এসে শশাঙ্ক স্ত্রীর সঙ্গে যে আলাপ করে সেটা না স্নিগ্ধ ভাষায় না শান্ত ভঙ্গিতে। শর্মিলা চুপ ক’রে ভর্ৎসনা মেনে নেয়। কী করবে, পারে না থাকতে। যতপ্রকার অসম্ভব বিপত্তি ওর অনুপস্থিতির অপেক্ষায় স্বামীর পথে ষড়যন্ত্র করে এ আশঙ্কা ও কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারে না!

 বাইরে লোক এসেছে, হয়তো কাজের কথায়। ক্ষণে ক্ষণে অন্তঃপুর থেকে ছোটো ছোটো চিরকুট আসছে, “মনে আছে কাল তোমার অসুখ করেছিল। আজ সকাল সকাল খেতে এসো।” রাগ করে শশাঙ্ক, আবার হারও মানে। বড়ো দুঃখে একবার স্ত্রীকে বলেছিল, “দোহাই তোমার, চক্রবতীবাড়ির গিরি মতো একটা ঠাকুরদেবতা আশ্রয় করে॥ তোমার, মনোযোগ আমার একলার পক্ষে বেশি। দেবতার সঙ্গে সেটা ভাগাভাগি ক’রে নিতে পারলে সহজ হয়। যতই বাড়াবাড়ি করো দেবতা অপত্তি করবেন না, কিন্তু মানুষ যে দুৰ্বল।”

 শৰ্মিলা বললে, “হায় হায়, একবার কাকাবাবুর সঙ্গে যখন হরিদ্ধার গিয়েছিলুম, মনে আছে তোমার অবস্থা।”

 অবস্থাটা যে অত্যন্ত শোচনীয় হয়েছিল এ-কথা শশাঙ্কই প্রচুর অলংকার দিয়ে একদা শ্রীর কাছে ব্যাখ্যা করেছে। জানত এই অত্যুক্তিতে শৰ্মিলা যেমন অনুতপ্ত তেমনই আনন্দিত হবে। আজ সেই অমিত ভাষণের প্রতিবাদ করবে কোন মুখে। চুপ ক’রে মেনে যেতে হোলো, শুধু তাই নয়, সেদিনই ভোরবেলায় অল্প একটু যেন সদির আভাস দেখা দিয়েছে শৰ্মিলার এই কল্পনা অনুসারে তাকে কুইনিন খেতে হোলো দশ গ্রেন, তা ছাড়া তুলসীপাতার রস দিয়ে চা। আপত্তি করবার মুখ ছিল না। কারণ ইতিপূৰ্বে অনুরুপ অবস্থায় আপত্তি করেছিল, কুইনিন খায়নি, জরও হয়েছিল, এই বৃত্তান্তটি শশাঙ্কের ইতিহাসে অপরিমোচনীয় অক্ষরে লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে।

 ঘরে আরোগ্য ও আবামের জন্যে শৰ্মিলার এই যেমন সস্নেহ ব্যগ্রতা বাইরে সন্মান রক্ষার জন্যে তার সতৰ্কতা তেমনি সতেজ। একটা দৃষ্টান্ত মনে পড়ছে।

 একবার বেড়াতে গিয়েছিল নৈনিতালে। আগে থাকতে সমস্ত পথ কামরা ছিল ৱিজার্ভ-করা॥ জংশনে এসে গাড়ি বদলিয়ে আহারের সন্ধানে গেছে। ফিরে এসে দেখে উদিপরা দুৰ্জনমূতি ওদের বেদখল করবার উদযোগে প্রবৃত্ত। স্টেশনমাস্টার এসে এক বিশ্ববিশ্রত জেনেরালের নাম ক’রে বললে, কামরাটা তারই, ভুলে অন্য নাম খাটানো হয়েছে। শশাঙ্ক চক্ষু বিস্কারিত করে সসম্ভমে অন্যত্র যাবার উপক্রম করছে, হেনকালে শৰ্মিলা গাড়িতে উঠে দরজা আগলিয়ে বললে, “দেখতে চাই কে আমাকে নামায়। ডেকে আনো তোমার জেনেরালকে।” শশাঙ্ক তখনো সরকারি কৰ্মচারী, উপরও আলার জ্ঞাতিগোত্রকে যথোচিত পাশ কাটিয়ে নিরাপদ পথে চলতে সে অভ্যস্ত। সে ব্যস্ত হয়ে যত বলে, “আহা, কাজ কী, আরো তো গাড়ি আছে,” শৰ্মিলা কানই দেয় না। অবশেষে জেনেরাল সাহেব রিশেমেণ্ট রুমে আহার সমাধা ক’রে চুরুট মুখে দূর থেকে শ্রীমূর্তির উগ্রতা দেখে গেল হ’টে। শশাঙ্ক স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলে, “জানো কতবড়ো লোকটা।” স্ত্রী বললে, “জানার গরজ নেই। যে গাড়িটা আমাদের, সে গাড়িতে ও তোমার চেয়ে বড়ো নয়।”

 শশাঙ্ক প্রশ্ন করলে, “যদি অপমান করত।”

 শৰ্মিলা জবাব দিলে, “তুমি আছ কী করতে।”

 শশাঙ্ক শিবপুরে পাস-করা এঞ্জিনিয়ার। ঘরের জীবনযাত্রায় শশাঙ্কের যতই ঢিলেমি থাক্‌ চাকরির কাজে সে পাকা। প্রধান কারণ, কৰ্মস্থানে যে তুঙ্গী গ্রহের নিৰ্ম দৃষ্টি সে হচ্ছে যাকে চলতি ভাষায় বলে বড়োসাহেব। স্ত্রীগ্রহ সে নয়। শশাঙ্ক ডিস্টিক্ট এঞ্জিনিয়ারি পদে যখন অ্যাকটিনি করছে এমন সময় আসন্ন উন্নতির মোড় ফিরে গেল উলটো দিকে। যোগ্যতা ডিঙিয়ে কাঁচা অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও যে ইংরেজ যুবক বিরল গুণফরেখা নিয়ে তার আসন দখল করলে কতৃপক্ষের উধ্বতন কর্তার সম্পৰ্ক ও সুপারিশ বহন ক’রে তার এই অভাবনীয় আবির্ভাব।

 শশাঙ্ক বুঝে নিয়েছে এই অৰ্বাচীনকে উপরের আসনে বসিয়ে নিচের স্তরে থেকে তাকেই কাজ চালিয়ে নিতে হবে। কতৃপক্ষ পিঠে চাপড় মেরে বললে, “ভেরি সরি মজুমদার, তোমাকে যত শীঘ্র পারি উপযুক্ত স্থান জুটিয়ে দেব।” এরা দুজনেই এক ফ্রীমেসন লজের অন্তভুক্ত।

 তবু আশ্বাস ও সান্তনা সত্ত্বেও সমস্ত ব্যাপারটা মজুমদারের পক্ষে অত্যন্ত বিস্বাদ হয়ে উঠল। ঘরে এসে ছোটোখাটো সব বিষয়ে খিটখিটি শুরু করে দিলে। হঠাৎ চোখে পড়ল তার আপিসঘরের এককোণে কুল, হঠাৎ মনে হোলো চৌকির উপরে যে সবুজ রঙের ঢাকাটা আছে সে রঙটা ও দু-চক্ষে দেখতে পারে না। বেহাৱা বারান্দা ঝাড় দিচ্ছিল, ধুলো উড়ছে ব’লে তাকে দিল একটা প্রকাণ্ড ধমক। অনিবার্য ধুলো রোজই ওড়ে কিন্তু ধমকটা সদ্য নুতন।

 অসন্মানের খবরটা স্ত্রীকে জানালে না। ভাবলে যদি কানে ওঠে তাহলে চাকরির জালটাতে আরো। একটা গ্রন্থি পাকিয়ে তুলবে,— হয়তাে বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া করে আসবে অমধুর ভাষায়। বিশেষত ঐ ডােনাল্ডসনের উপর তার রাগ আছে। একবার সে সার্কিট-হৌসের বাগানে বাঁদরের উৎপাত দমন করতে গিয়ে ছররাগুলিতে শশাঙ্কর সোলার টুপি ফুটো করে দিয়েছে। বিপদ ঘটেনি কিন্তু ঘটতে তো পারত। লােকে বলে দোষ শশাঙ্কেরই, শুনে তার রাগ আরাে ওঠে ডােনাল্ডসনের ‘পরেই। সকলের চেয়ে রাগের কারণটা এই, বাঁদরকে লক্ষ্য-করা গুলি শশাঙ্কের উপর পড়াতে শত্রুপক্ষ এই দুটো ব্যাপারের সমীকরণ ক’রে উচ্চহাস্য করেছে।

 শশাঙ্কের পদ-লাঘবের খবরটা শশাঙ্কের স্ত্রী স্বয়ং আবিষ্কার করলে। স্বামীর রকম দেখেই বুঝেছিল সংসারে কোনােদিক থেকে একটা কাঁটা উঁচিয়ে উঠেছে। তার পরে কারণ বের করতে সময় লাগেনি। কনষ্টিট্যুশনাল অ্যাজিটেশনের পথে গেল না, গেল সেল্‌ফ ডিটার্মিনেশনের অভিমুখে। স্বামীকে বললে, “আর নয়, এখনি কাজ ছেড়ে দাও।”

 দিতে পারলে অপমানের জোঁকটা বুকের কাছ থেকে খসে পড়ে। কিন্তু ধ্যানদৃষ্টির সামনে প্রসারিত রয়েছে বাঁধা মাইনের অন্নক্ষেত্র, এবং তার পশ্চিমদিগন্তে পেনশনের অবিচলিত স্বর্ণোজ্জল রেখা।

 শশাঙ্কমৌলি যে-বছরে এম. এসসি. ডিগ্রীর সর্বোচ্চ শিখরে সদ্য অধিরূঢ়, সেই বছরেই তার শ্বশুর শুভকর্মে বিলম্ব করেননি— শশাঙ্কের বিবাহ হয়ে গেল শর্মিলার সঙ্গে। ধনী শ্বশুরের সাহায্যেই এঞ্জিনিয়ারিং পাস করলে। তার পরে চাকরিতে দ্রুত উন্নতির লক্ষণ দেখে রাজারামবাবু জামাতার ভাবী সচ্ছলতার ক্রমবিকাশ নির্ণয় করে আশ্বস্ত হয়েছিলেন। মেয়েটিও আজ পর্যন্ত অনুভব করেনি তার অবস্থান্তর ঘটেছে। শুধু যে সংসারে অনটন নেই তা নয় বাপের বাড়ির চালচলন এখানেও বজায় আছে। তার কারণ, এই পারিবারিক দ্বৈরাজ্যে ব্যবস্থাবিধি শর্মিলার অধিকারে। ওর সন্তান হয়নি, হবার আশাও বোধ করি ছেড়েছে। স্বামীর সমস্ত উপার্জন অখণ্ডভাবে এসে পড়ে ওরই হাতে। বিশেষ প্রয়োজন ঘটলে ঘরের অন্নপূর্ণার কাছে ফিরে ভিক্ষা না মেগে শশাঙ্কর উপায় নেই। দাবি অসংগত হোলে নামঞ্জুর হয়, মেনে নেয় মাথা চুলকিয়ে। অপর কোনোদিক থেকে নৈরাশ্যটা পূরণ হয় মধুর রসে।

 শশাঙ্ক বললে, “চাকরি ছেড়ে দেওয়া আমার পক্ষে কিছুই নয়। তােমার জন্যে ভাবি, কষ্ট হবে তােমারি।”

 শর্মিলা বললে, “তার চেয়ে কষ্ট হবে যখন অন্যায়টাকে গিলতে গিয়ে গলায় বাধবে।”

 শশাঙ্ক বললে, “কাজ তো করা চাই, ধ্রুবকে ছেড়ে অধ্রুবকে খুঁজে বেড়াব কোন্ পাড়ায়।”

 “সে পাড়া তােমার চোখে পড়ে না। তুমি যাকে ঠাট্টা ক’রে বলাে তােমার চাকরির লুচি-স্থান, বে-লুচিস্থান মরুপ্রদেশের ওপারে, তার বাইরের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে তুমি গণ্যই করাে না।”

 “সর্বনাশ। সে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যে মস্ত প্রকাণ্ড। রাস্তাঘাট সার্ভে করতে বেরােবে কে। অতবড় দুরবীন পাই কোন্ বাজারে।”

 “মস্ত দুরবীন তােমাকে কষতে হবে না। আমার জ্ঞাতিসম্পর্কের মথুরদাদা কলকাতায় বড়ো কণ্ট্রাক্টর, তাঁর সঙ্গে ভাগে কাজ করলে দিন চলে যাবে।”

 “ভাগটা ওজনে অসমান হবে। এপক্ষে বাটখারায় কমতি। খুঁড়িয়ে শরিকি করতে গেলে পদমর্যাদা থাকবে না।”

 “এপক্ষে কোনাে অংশেই কমতি নেই। তুমি জানো, বাবা আমার নামে ব্যাঙ্কে যে টাকা রেখে গেছেন, সুদে বাড়ছে। শরিকের কাছে তােমাকে খাটো হােতে হবে না।”

 “সে কি হয়। ও টাকা যে তােমার।” বলে শশাঙ্ক উঠে পড়ল। বাইরে লােক বসে আছে।

 শর্মিলা স্বামীর কাপড় ধরে টেনে বসিয়ে বললে, “আমিও যে তােমারি।”

 তার পর বললে, “বের করাে তােমার জেব থেকে ফাউণ্টেনপেন, এই নাও চিঠির কাগজ, লেখাে রেজিগ্‌নেশন পত্র। সেটা ডাকে রওনা না ক’রে আমার শান্তি নেই।”

 “আমারাে শান্তি নেই বােধ হচ্ছে।”

 লিখলে রেজিগ্‌নেশন পত্র।


 পরদিনেই শর্মিলা চলে গেল কলকাতায়, উঠল গিয়ে মথুরদাদার বাড়িতে। অভিমান করে বললে, “একদিনো তাে বােনের খবর নাও না।” মেয়ে প্রতি-দ্বন্দ্বী হােলে বলত, “তুমিও তাে নাও না।” পুরুষের মাথায় সে জবাব জোগাল না। অপরাধ মেনে নিলে। বললে, “নিশ্বাস ফেলবার কি সময় আছে। নিজে আছি, কি না তাই ভুল হয়ে যায়। আর তা ছাড়া তােমরাও তো দূরে দূরে বেড়াও।”

 শর্মিলা বললে, “কাগজে দেখলুম ময়ুরভঞ্জ না মথুরগঞ্জ কোথায় একটা ব্রিজ তৈরির কাজ পেয়েছ। প’ড়ে এত খুশী হলুম। তখনি মনে হলো মথুরদাদাকে নিজে গিয়ে কন্‌গ্রাচুলেট ক’রে আসি।”

 “একটু সবুর কোরাে খুকি। এখনাে সময় হয়নি।”

 ব্যাপারখানা এই: নগদ টাকা ফেলার দরকার। মাড়ােয়ারি ধনীর সঙ্গে ভাগে কাজ করার কথা। শেষকালে প্রকাশ হােলো যে-রকম শর্ত তাতে শাঁসের ভাগটাই মাড়ােয়ারির আর ছিবড়ের ভাগটাই পড়বে ওর কপালে। তাই পিছােবার চেষ্টা।

 শর্মিলা ব্যস্ত হয়ে উঠে বললে, “এ কখনাে হােতেই পারে না। ভাগে কাজ করতে যদি হয় আমাদের সঙ্গে করো। এমন কাজটা তােমার হাত থেকে ফস্‌কে গেলে ভারি অন্যায় হবে। আমি থাকতে এ হােতেই দেব না, যাই বলো তুমি।”

 এর পরে লেখাপড়া হােতেও দেরি হোলাে না; মথুরদাদার হৃদয়ও বিগলিত হােলাে।

 ব্যবসা চলল বেগে। এর আগে চাকরির দায়িত্বে শশাঙ্ক কাজ করেছে, সে-দায়িত্বের সীমা ছিল পরিমিত। মনিব ছিল নিজের বাইরে, দাবি এবং দেয় সমান সমান ওজন মিলিয়ে চলত। এখন নিজেরই প্রভুত্ব নিজেকে চালায়। দাবি এবং দেয় এক জায়গায় মিলে গেছে। দিনগুলো ছুটিতে কাজেতে জাল-বোনা নয়, সময়টা হয়েছে নিরেট। যে দায়িত্ব ওর মনের উপর চেপে সেটাকে ইচ্ছে করলেই ত্যাগ করা যায় ব’লেই তার জোর এত কড়া। আর কিছু নয়, স্ত্রীর ঋণ শুধতেই হবে, তার পরে ধীরে সুস্থে চলবার সময় পাওয়া যাবে। বাঁ হাতের কবজিতে ঘড়ি, মাথায় সােলার টুপি, আস্তিন গােটনো, খাকির প্যাণ্ট পরা, চামড়ার কোমরবন্ধ আঁটা, মােটা সুকতলাওআলা জুতাে, চোখে রােদ বাঁচাবার রঙিন চশমা,—শশাঙ্ক উঠে পড়ে লেগে গেল কাজে। স্ত্রীর ঋণ যখন শােধ হবার কিনারায় এল, তখনো ইষ্টিমের দম কমায় না, মনটা তখন উঠেছে গরম হয়ে।

 ইতিপূর্বে সংসারে আয়ব্যয়ের ধারাটা বইত একই খাদে, এখন হােলাে দুই শাখা। একটা গেল ব্যাঙ্কের দিকে, আর একটা ঘরের দিকে। শর্মিলার বরাদ্দ পূর্বের মতােই আছে, সেখানকার দেনাপাওনার রহস্য শশাঙ্কর অগোচরে। আবার ব্যবসায়ের ঐ চামড়া-বাঁধানো হিসেবের খাতাটা শর্মিলার পক্ষে দুর্গম দুর্গ বিশেষ। তাতে ক্ষতি নেই। কিন্তু স্বামীর ব্যবসায়িক জীবনের কক্ষপথ ওর সংসারচক্রের বাইরে পড়ে যাওয়াতে সেই দিন থেকে ওর বিধিবিধান উপেক্ষিত হোতে থাকে। মিনতি ক’রে বলে, “বাড়াবাড়ি কোরো না, শরীর যাবে ভেঙে।” কোনো ফল হয় না। আশ্চর্য এই, শরীরও ভাঙছে না। স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ, বিশ্রামের অভাব নিয়ে আক্ষেপ, আরামের খুঁটিনাটি নিয়ে ব্যস্ততা ইত্যাদি শ্রেণীর দাম্পত্যিক উৎকণ্ঠা সবেগে উপেক্ষা ক’রে শশাঙ্ক সক্কালবেলায় সেকেণ্ডহ্যাণ্ড ফোর্ড গাড়ি নিজে হাঁকিয়ে শিঙে বাজিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বেলা দুটো-আড়াইটার সময় ঘরে ফিরে এসে বকুনি খায়, এবং আর আর খাওয়াও দ্রুত হাত চালিয়ে শেষ করে।

 একদিন ওর মোটরগাড়ির সঙ্গে আর কার গাড়ির ধাক্কা লাগল। নিজে গেল বেঁচে, গাড়িটা হোলো জখম, পাঠিয়ে দিল তাকে মেরামত করতে। শর্মিলা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। বাষ্পাকুলকণ্ঠে বললে, “গাড়ি তুমি নিজে হাঁকাতে পারবে না।”

 শশাঙ্ক হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললে, “পরের হাতের আপদও একই জাতের দুষমন।”

 একদিন কোন্ মেরামতের কাজ তদন্ত করতে গিয়ে জুতো ফুঁড়ে পায়ে ফুটল ভাঙা প্যাকবাক্সর পেরেক, হাসপাতালে গিয়ে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে ধনুষ্টংকারের টিকে নিলে, সেদিন কান্নাকাটি করলে শর্মিলা, বললে, “কিছুদিন থাকো শুয়ে।”

 শশাঙ্ক অত্যন্ত সংক্ষেপে বললে “কাজ।” এর চেয়ে বাক্য আর সংক্ষেপ করা যায় না।

 শর্মিলা বললে, “কিন্তু”—এবার বিনা বাক্যেই ব্যাণ্ডেজ সুদ্ধ চলে গেল কাজে।

 জোর খাটাতে আর সাহস হয় না। আপন ক্ষেত্রে পুরুষের জোর দেখা দিয়েছে। যুক্তিতর্ক কাকুতিমিনতির বাইরে একটিমাত্র কথা, “কাজ আছে।” শর্মিলা অকারণে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে থাকে। দেরি হোলেই ভাবে মোটরে বিপদ ঘটেছে। রোদ্দুর লাগিয়ে স্বামীর মুখ যখন দেখে রক্তবর্ণ, মনে করে নিশ্চয় ইনফ্লুয়েঞ্জা। ভয়ে ভয়ে আভাস দেয় ডাক্তারের— স্বামীর ভাবখানা দেখে ঐখানেই থেমে যায়। মন খুলে উদ্বেগ প্রকাশ করতেও আজকাল ভরসা হয় না।

 শশাঙ্ক দেখতে দেখতে রােদে-পােড়া, খটখটে হয়ে উঠেছে। খাটো আঁট কাপড়, খাটো আঁট অবকাশ, চালচলন দ্রুত, কথাবার্তা স্ফুলিঙ্গের মতাে সংক্ষিপ্ত। শর্মিলার সেবা এই দ্রুত লয়ের সঙ্গে তাল রেখে চলতে চেষ্টা করে। স্টোভের কাছে কিছু খাবার সর্বদাই গরম রাখতে হয়, কখন্ স্বামী হঠাৎ অসময়ে ব’লে বসে “চললুম, ফিরতে দেরি হবে।” মােটরগাড়িতে গােছানাে থাকে সােডাওআটার এবং ছােটো টিনের বাক্সে শুকনােজাতের খাবার। একটা ওডিকলােনের শিশি বিশেষ দৃষ্টিগােচররূপেই রাখা থাকে, যদি মাথা ধরে। গাড়ি ফিরে এলে পরীক্ষা করে দেখে কোনােটাই ব্যবহার করা হয়নি। মন খারাপ হয়ে যায়। সাফ কাপড় শােবার ঘরে প্রত্যহই সুপ্রকাশ্যভাবে ভাঁজ করা, তৎসত্ত্বেও অন্তত সপ্তাহে চারদিন কাপড় ছাড়বার অবকাশ থাকে না। ঘরকন্নার পরামর্শ খুবই খাটো ক’রে আনতে হয়েছে, জরুরি টেলিগ্রামের ঠোকর-মারা ভাষার ধরনে, সেও চলতে চলতে পিছু ডাকতে ডাকতে, বলতে বলতে, “ওগাে শুনে যাও কথাটা।” ওদের ব্যবসার মধ্যে শর্মিলার যে একটুখানি যােগ ছিল তাও গেল কেটে, ওর টাকাটা এসেছে সুদে আসলে শোধ হয়ে। সুদও দিয়েছে মাপজোখ করা হিসেবে, দস্তুরমতো রসিদ নিয়ে। শর্মিলা বলে, “বাস্‌রে, ভালোবাসাতেও পুরুষ আপনাকে সবটা মেলাতে পারে না। একটা জায়গা ফাঁকা রাখে, সেই খানটাতে ওদের পৌরুষের অভিমান।”

 লাভের টাকা থেকে শশাঙ্ক মনের মতো বাড়ি খাড়া করেছে ভবানীপুরে। ওর শখের জিনিস। স্বাস্থ্য আরাম শৃঙ্খলাব নতুন নতুন প্ল্যান আসছে মাথায়। শর্মিলাকে আশ্চর্য করবার চেষ্টা। শর্মিলাও বিধিমতো আশ্চর্য হোতে ত্রুটি করে না। এঞ্জিনিয়ার একটা কাপড়-কাচা কলের পত্তন করেছে, শমিলা সেটাকে ঘুরে ফিরে দেখে খুব তারিফ করলে। মনে মনে বললে, “কাপড় আজও যেমন ধোবার বাড়ি যাচ্ছে। কালও তেমনি যাবে। ময়লা কাপড়ের গর্দভবাহনকে বুঝে নিয়েছি, তার বিজ্ঞানবাহনকে বুঝিনে।” আলুর খোসা ছাড়াবার যন্ত্রটা দেখে তাক লেগে গেল, বললে, “আলুর দম তৈরি করবার বারো আনা দুঃখ যাবে কেটে।” পরে শোনা গেছে সেটা ফুটো ডেকচি ভাঙা কাতলি প্রভৃতির সঙ্গে এক বিস্মৃতিশয্যায় নৈষ্কর্ম্য লাভ করেছে।

 বাড়িটা যখন শেষ হয়ে গেল তখন স্থাবর পদার্থটার প্রতি শর্মিলার রুদ্ধ স্নেহের উদ্যম ছাড়া পেলে। সুবিধা এই যে ইঁটকাঠের দেহটাতে ধৈর্য অটল। গোছানােগাছানাে সাজানােগোজানাের মহােদ্যমে দুই-দুই জন বেহারা হাঁপিয়ে উঠল, একজন দিয়ে গেল জবাব। ঘরগুলাের গৃহসজ্জা চলছে শশাঙ্ককে লক্ষ্য করে। বৈঠকখানাঘরে সে আজকাল প্রায়ই বসে না তবু তারি ক্লান্ত মেরুদণ্ডের উদ্দেশে কুশন নিবেদন করা হচ্ছে নানা ফ্যাশনের; ফুলদানি একটাআধটা নয়, টিপায়ে টেবিলে ঝালরওআলা ফুলকাটা আবরণ। শােবার ঘরে দিনের বেলায় শশাঙ্কর সমাগম আজকাল বন্ধ, কেননা তার আধুনিক পঞ্জিকায় রবিবারটা সােমবারেরই যমজ ভাই। অন্য ছুটিতে কাজ যখন বন্ধ তখনও ছুটোছাটা কাজ কোথা থেকে সে খুঁজে বের করে, আপিস ঘরে গিয়ে প্ল্যান আঁকবার তেলা কাগজ কিংবা খাতাপত্র নিয়ে বসে। তবু সাবেক কালের নিয়ম চলছে। মােটা গদিওআলা সােফার সামনে প্রস্তুত থাকে পশমের চটি জোড়া। সেখানে পানের বাটায় আগেকার মতােই পান থাকে সাজা, আলনায় থাকে পাতলা সিল্কের পাঞ্জাবি, কোঁচানো ধুতি। আপিসঘরটাতে হস্তক্ষেপ করতে সাহসের দরকার, তবু শশাঙ্কের অনুপস্থিতিকালে ঝাড়ন হাতে শর্মিলা সেখানে প্রবেশ করে। সেখানকার রক্ষণীয় এবং বর্জনীয় বস্তুব্যুহের মধ্যে সজ্জা ও শৃঙ্খলার সমন্বয় সাধনে তার অধ্যবসায় অপ্রতিহত।

 শর্মিলা সেবা করছে, কিন্তু আজকাল সেই সেবার অনেকখানি অগোচরে। আগে তার যে আত্মনিবেদন ছিল প্রত্যক্ষের কাছে, এখন তার প্রয়োগটা প্রতীকে,— বাড়িঘর সাজানোয়, বাগান করায়, যে চৌকিতে শশাঙ্ক বসে তারই রেশমের ঢাকায়, বালিশের ওআড়ের ফুলকাটা কাজে, আপিসের টেবিলের কোণে রজনীগন্ধার গুচ্ছে সজ্জিত নীল স্ফটিকের ফুলদানিতে।

 নিজের অর্ঘ্যকে পূজাবেদির থেকে দূরে স্থাপন করতে হোলো, কিন্তু অনেক দুঃখে। এই অল্পদিন আগেই যে ঘা পেয়েছে তার চিহ্ন গোপনে চোখের জল ফেলে ফেলে মুছতে হয়েছে। সেদিন উনত্রিশে কার্তিক, শশাঙ্কের জন্মদিন। শর্মিলার জীবনে সবচেয়ে বড়ো পরব। যথারীতি বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করা হোলো, ঘরদুয়োর বিশেষ ক’রে সাজানো হয়েছে ফুলে পাতায়।

 সকালের কাজ সেরে শশাঙ্ক বাড়ি ফিরে এসে বললে, “এ কী ব্যাপার। পুতুলের বিয়ে নাকি।”

 “হায়রে কপাল, আজ তােমার জন্মদিন, সে কথাটাও ভুলে গেছ? যাই বলো বিকেলে কিন্তু তুমি বেরােতে পারবে না।”

 “বিজ্‌নেস মৃত্যুদিন ছাড়া আর কোনো দিনের কাছে মাথা হেঁট করে না।”

 “আর কখনাে বলব না। আজ লােকজন নেমন্তন্ন করে ফেলেছি।”

 “দেখাে শমিলা, তুমি আমাকে খেলনা বানিয়ে বিশ্বের লােক ডেকে খেলা করবার চেষ্টা কোরাে না” এই ব’লে শশাঙ্ক দ্রুত চলে গেল। শর্মিলা শোবার ঘরে দরজা বন্ধ ক’রে খানিকক্ষণ কাঁদলে।

 অপরাহ্ণে লােকজন এল। বিজনেসের সর্বোচ্চ দাবি তারা সহজেই মেনে নিলে। এটা যদি হােত কালিদাসের জন্মদিন তবে শকুন্তলার তৃতীয় অঙ্ক লেখবার ওজরটাকে সকলেই নিশ্চয় নিতান্ত বাজে ব’লে ধরে নিত। কিন্তু বিজনেস! আমােদপ্রমোেদ যথেষ্ট হােলাে। নালুবাবু থিয়েটারের নকল ক’রে সবাইকে খুব হাসালেন, শর্মিলাও সে হাসিতে যােগ দিলে। শশাঙ্ক-বিরহিত শশাঙ্কের জন্মদিন সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করলে শশাঙ্ক-অধিষ্ঠিত বিজনেসের কাছে।

 দুঃখ যথেষ্ট হােলাে তবু শর্মিলার মনও দূর থেকে প্রণিপাত করলে শশাঙ্কের এই ধাবমান কাজের রথের ধ্বজাটাকে। ওর কাছে সেই দুরধিগম্য কাজ, যা কারো খাতির করে না, স্ত্রীর মিনতিকে না, বন্ধুর নিমন্ত্রণকে না, নিজের আরামকে না। এই কাজের প্রতি শ্রদ্ধা দ্বারা পুরুষমানুষ নিজেকে শ্রদ্ধা করে, এ তার আপন শক্তির কাছে আপনাকে নিবেদন। শর্মিলা ঘরকন্নার প্রাত্যহিক কর্মধারার পারে দাঁড়িয়ে সসম্ভ্রমে চেয়ে দেখে তার পরপারে শশাঙ্কের কাজ। বহুব্যাপক তার সত্তা, ঘরের সীমানা ছাড়িয়ে চলে যায় সে দূরদেশে, দূর সমুদ্রের পারে, জানা অজানা কত লােককে টেনে নিয়ে আসে আপন শাসনজালে। নিজের অদৃষ্টের সঙ্গে পুরুষের প্রতিদিনের সংগ্রাম; তারই বন্ধুর যাত্রাপথে মেয়েদের কোমল বাহুবন্ধন যদি বাধা ঘটাতে আসে তবে পুরুষ তাকে নির্মম বেগে ছিন্ন ক’রে যাবে বই কি। এই নির্মমতাকে শর্মিলা ভক্তির সঙ্গেই মেনে নিলে। মাঝে মাঝে থাকতে পারে না, যেখানে অধিকার নেই হৃদয়ের টানে সেখানেও নিয়ে আসে তার সকরুণ উৎকণ্ঠা, আঘাত পায়, সে আঘাতকে প্রাপ্য গণ্য ক’রেই ব্যথিত মনে পথ ছেড়ে দিয়ে ফিরে আসে। দেবতাকে বলে, দৃষ্টি রেখো, যেখানে তার নিজের গতিবিধি অবরুদ্ধ।