দেহযাত্রা নির্ব্বাহার্থ বিবিধ বিষয়ক নীতি সকল

দেহযাত্রা নির্ব্বাহার্থ বিবিধ বিষয়ক নীতি সকল অন্য সংস্করণ দেখুন

THE

 Rules for conduct in life on various subjects, translated from the Persian “Goolestan,” an eminent work of Saddy Sherazee, into the Bengallee idiom.

By

AUGUSTIN D'SILVA.

Zillah Sylhet the 15th December, 1852.

দেহযাত্রা নির্ব্বাহার্থ বিবিধ বিষয়ক নীতি

সকল সাদি সিরাজি কৃত বিখ্যাত পারস্য

ভাষার গুলেস্তান গ্রন্থ হইতে

শ্রীআগষ্টীন ডি ছিলবা কর্তৃক

উদ্ধৃত হইয়া বঙ্গভাষাতে

অনুবাদিত হইল ইতি

জিলা শ্রীহট্ট,—১৫ ডিসেম্বর,—ইং ১৮৫২।

গুণিগণ মধ্যে হয় বাক্যের সম্মান।
বাক্য কীর্ত্তি তাহাদের রহে স্থিরমান॥
যে পর্য্যন্ত বাক্য চর্চ্চা থাকয়ে জগতে।
ঈশ্বর কৃপায় তারা রহে অবস্থিতে॥

ইতি


CALCUTTA.

PRINTED AT THE IMPERIAL PRESS.

১ প্রথম বিজ্ঞত্ব।

 ধন জীবনের সন্তুষ্টিকর বটে কিন্তু জীবন ধন সঞ্চয় করণের জন্য নহে; কোন ধীমানের নিকট জিজ্ঞাস্য হইল যে ভাগ্যবান্ কে ও অভাগা কে? ইহাতে তিনি প্রত্যুত্তর করিলেন ভাগ্যবান সেই, যে ধনের ভোগ করে ও অন্যের উপকারার্থ দান করে এবং অভাগা সেই, যে ধন ভোগ না করিয়া কেবল সঞ্চয় করত লোকান্তর গত হয়।

মঙ্গল কামনা নাহি কব তার তরে।
ধনার্থে থাকে যে ব্যস্ত ভোগ বিনা মরে॥

 ২। মোহা নামক পৈগাম্বর কুবেরকে উপদেশ করিলেন জগৎ কর্ত্তা তোমার সম্বন্ধে যাদৃক্ দয়া বিতরণ করিয়াছেন তুমিও তদ্রূপ দীন কাঙ্গালেরদের প্রতি দয়া কর, কিন্তু সে ইহাতে স্বীকৃত হইল না তাহাতে তাহার প্রতি যে ঘটনা হইল তাহা শ্রুত আছে যথা।

বিতরণ না করিয়া যেই রাখে ধনে।
অন্য লভ্য নাহি হয় ক্লেশ দুঃখ বিনে॥
যদি তুমি ধন লাভ চাহ এ সংসারে।
দেহ দীনে তাই বিভু দিলেন তোমারে॥

 ফলতঃ দান করিবে কিন্তু প্রত্যুপকারের আশাতে তদ্দ্বারা অন্যকে বাধ্য করিও না॥

 অঙ্কুরিত হয় যথা দান রক্ষবর। যায় প্রতি শাখা তার স্বর্গের উপর॥ তাহার সুরম্য ফল করিতে স্বাদন। যদি তব অন্তরেতে থাকয়ে মনন। পরে বাধ্য করা রূপ অস্ত্র তীক্ষ্ণ ধার। না করিবে লগ্ন কভু মূলেতে তাহার॥ যেহেতু তোমার শক্তি হইলেক দানে। কৃতজ্ঞতা মান নিজ বিভু সন্নিধানে॥ কেননা তোমাকে সদা দান ও দয়াতে। নিরাশ করেন নাহি বিভু কোন মতে॥ রাজাকে না জান বাধ্য তার সেবা কবে। জান বাধ্য নিজে যাতে রাখিয়াছ তবে॥

 ৩। দুই ব্যক্তি অনর্থক পরিশ্রম ও নিরর্থক ক্লেশ ভোগ করিলেন। প্রথম ব্যক্তি ধন সঞ্চয় করিয়া ভোগ করিল না দ্বিতীয় ব্যক্তি বিদ্যা শীক্ষা করিয়া তদনুরূপ আচরণ করিল না।

 বহু বিদ্যা শিক্ষা তুমি করই না কেন। হও মূর্খ বিনা তার মত আচরণ॥ সে পণ্ডিত নহে সে সুধীর নহে আর। খর তুল্য বহি ফিরে পুস্তকের ভার। সে জ্ঞান হীনের কবে হবে অনুভব। উপরে কাষ্ঠের বোঝা কিবা গ্রন্থ সব॥

 ৪। বিদ্যা পারত্রিকের পরম ফলোপযোগিনী, ইহ কালের সংসার যাত্রা নির্ব্বাহ তাহার প্রয়োজন নহে।

সংসারের তরে, যেই বিজ্ঞবরে, স্বীয় বিদ্যা করিল বিক্রয়। চির পরিশ্রমে, প্রাপ্ত ধন ক্রমে, অনল জ্বালিল সমুদয়॥

 ৫। ধৈর্য্য বিহীন বিদ্যাবান জন নয়নরহিত প্রদীপ ধারণ কারকের তুল্য হয়েন॥

 বিফলে করিল ক্ষয় পরমায়ু ধন। কিছু না করিল ক্রয় কিম্বা বিতরণ॥

 ৬। ধীমানেরদের দ্বারা ধর্ম্ম, ধৈর্য্যবান ব্যক্তির দের কর্তৃক সৌন্দর্য্য লব্ধ হয়। বুদ্ধিমানেরা নৃপতিরদের নিকটবর্ত্তি হইয়া যে পর্য্যন্ত শ্রদ্ধাবান থাকে তাবৎপর্য্যন্ত ভূপালেরা উহারদের উপদেশ প্রাপ্ত্যর্থে আকিঙ্ক্ষিত হয়েন।

হে রাজন মনোযোগে শুন এই কথা।
এমত নাহিক নীতি জগতে সর্ব্বথা॥
ধীমান ব্যতীত অন্যে কর্ম্ম নাহি দিবে।
জান তথ্য যে ধীমান কিছু নাহি লবে॥

 ৭। ধন বাণিজ্য ব্যতীত, বিদ্যা বাদানুবাদ বিনা, এবং রাজ্য শাসন অনুসন্ধান ভিন্ন স্থির থাকে না।

 ৮। দুষ্টেরদের প্রতি দয়া করা, সল্লোককে কষ্ট দেওয়া, দৌরাত্ম্যকারি লোককে ক্ষমা করণ দৌরাত্ম্য প্রাপ্ত দুঃখিদের প্রতি একান্ত নিগ্রহ করণ স্বরূপ হয়॥

দুষ্ট সহ কর যদি শিষ্ট ব্যবহার।
অংশী হতে চাবে ধনে সুখেতে তোমার॥

 ৯। রাজারদের প্রণয় ও বালকেরদের সুমিষ্ট স্বরের ভরসা ও বিশ্বাস করা অকর্ত্তব্য, কেননা ঐ প্রণয় নির্হেতু জম্মে না এবং যুবাবস্থা বিনা ঐ স্বর প্রাপ্ত হয় না।

বন্ধুর বান্ধবে নাহি করিবে যতন।
বিচ্ছেদে তাহার নাহি করিবে মনন॥

 ১০। স্বীয় মর্ম্ম কথা সর্ব্বদা মিত্রের নিকটে কহিও না কেননা তুমি জাননা কোন কালে হঠাৎ সে বৈরী হইয়া উঠিতে পারে, আর যদি তুমি স্বীয় ঐরির সহিত বৈর সাধনে শক্তিমান হও তাহাও করিও না কেননা হইতে যে সময় ক্রমে সে মিত্র হইয়া যায়। অপর যদি মর্ম্ম কথা সংগোপনে রাখিতে বাঞ্ছা কর তবে তাহা কোন বিশ্বাসিত ব্যক্তির নিকটেও প্রকাশ করিও না কেননা তোমার মর্ম্মের মর্ম্মজ্ঞ কেহই তোমার সম্বন্ধে ভাল নহে।

 কহনের যোগ্য স্থানেতেও না কহিবে। নিজ মর্ম্ম কহা হইতে নিঃশব্দে থাকিবে। হে ধীমান মন শ্রুত বান্ধিয়া রাখিবে। সম্পূর্ণ হইলে জল বান্ধিতে নারিবে॥ সংগোপনে সুনির্জ্জনে রাখ মর্ম্ম কথা। সর্ব্বত্র কহিলে হবে লজ্জিত সর্ব্বথা॥ নির্জ্জন তদ্রূপ কথা কভু না কহিবে। যাহা সভা মধ্যে গিয়া কহিতে নারিবে।

 ১১। যে অশক্ত বৈরী অধীনতা ও আত্মীয়তা দেখায় তাহার অভিপ্রায় এই যে কোন মতে সবল শত্রু হয়, হে প্রিয় ভাইরা যে স্থলে মিত্রের মিত্রতার ভরসা নাই সেস্থলে কপট ও প্রবঞ্চনাতে কি বিশ্বাস সম্ভব্য।

 ১২। যে কেহ ক্ষুদ্র বৈরিকে হেয়ও দুর্ব্বল জ্ঞান করে সে ঐ ব্যক্তির মত হয়, যে অগ্নিকে স্বল্প জ্ঞানে নির্ব্বাণ না করিয়া ফেলিয়া রাখে।

যদি পার অদ্য করহ সংহার।
প্রজ্বলিত হলে অগ্নি জ্বালিবে সংসার॥
যদি বৈরী হয় বশে নাহি শুভ তারে।
অবকাশ নাহি দেও অস্ত্র ধরিবারে॥

 ১৩। পরস্পর দুই ব্যক্তির মধ্যে বিরোধ থাকিলে তন্মধ্যে এপ্রকারে কথা কহিবেক যে যদি উহারদের মধ্যে পুনর্ব্বার মিত্রতা হয় তাহাতে লজ্জা পাইতে না হয়।

 শত্রুতা দুজনা মধ্যে অনল সমান। বঞ্চকেরা তার মধ্যে ইন্ধন যোগান॥ পুনঃ যদি ওরা দুই একত্রে মিলিবে। তবে কাযে২ সেহ অতি লজ্জা পাবে॥ বিরোধ অনল জ্বাল্যে দুজনার মনে। অবোধের কর্ম্ম তাতে জ্বলিবে আপনে॥ চুপে২ কহ কথা বন্ধু দের সনে। কি জানি শত্রুর কর্ণ থাকয়ে এখানে॥ ভৃত্য সনে নির্ভয়েতে না কর কথন। কে জানে তাহার আড়ে থাকে কোন জন॥

 ১৪। যে ব্যক্তি আপন শত্রুদের বিপক্ষগণের সহিত আত্মীয়তা করে সে সুতরাং শত্রুদেরদিগকে ক্লেশ দিবার মনস্থ করে।

তব শত্রু সনে যার হয় আত্মীয়তা।
তাহার সহিত নাহি করিবে মিত্রতা॥

 ১৫। কোন কর্ম্ম সাধনের চেষ্টায় থাকিলে কর্ত্তব্য যে যেপ্রকারে অক্লেশে ঐ কর্ম্ম সুসিদ্ধ হইতে পারে তাহার চেষ্টা কর।

মিষ্টভাষি জনে কটু কথা না কহিবে।
সম্মিলনাকাঙ্ক্ষি সনে বাদ না করিবে॥

 ১৬। ধনের দ্বারা যেপর্য্যন্ত কর্ম্ম সমাধা করা যায় তাবৎপর্য্যন্ত প্রাণকে ক্লেশে ফেলা অকর্ত্তব্য।

অন্যান্য উপায় যবে নিরস্ত হইবে।
তখনিতো করবাল করেতে ধরিবে॥

 ১৭। শত্রুর কাকূক্তিতে আর্দ্র হইও না, সে শক্তিমান হইলে তোমার প্রতি দয়া করিবেক না। শত্রু দেখি শক্তি হীনে, নিজে শক্তি বর্ত্তমানে, মনে নাহি কর অহঙ্কার। প্রত্যেক অস্থিতে তার, হয় শক্তি অনিবার, বীর্য্য হীন কেবা এসংসার॥

 ১৮। যে কেহ কোন দুরাত্মাকে বধ করে সে জগৎকে উহার দৌরাত্ম্য হইতে ও উহাকে পরমেশ্বরের কোপহইতে ত্রাণ করে।

 জগজন প্রতি দয়া করা অতি ভাল। দুরাত্মাকে দয়া না করিবে কোন কাল॥ সর্পে দয়া করে যে সে কভু নাহি জানে। ইহা দুঃখ দেওয়া হয় জগতের জনে॥

 ১৯। শত্রুর নীতি মতাচরণ করা দোষাকর কিন্তু শুনা উচিত কেননা তাহার শ্রবণানন্তর বিবেচনা ক্রমে তন্মতের বিপরীত করিলে ভাল হইতে পারে।

 শত্রুর বাক্যেতে তুমি কর বিবেচনা। যে ইহা না হয় কভু বিঘ্ন কর বিনা॥ তীর তুল্য সোজা পথ যদি সে দেখায়। বাম দিগে চল তুমি ছাড়িয়া তাহায়॥

 ২০। অত্যন্ত ক্রোধ ভীতিকর ও অকালিক দয়া উপরোধের ক্ষতিকর হয় তাহাতে লোক নিচয় একান্ত ভয়ানক হয়।

 উগ্র ও উদার দুই হয় প্রয়োজন। সুশৃঙ্খল রূপে হয় কর্ম্ম সম্পাদন॥ কি কর্ম্মের অগ্র সেই নাহি হয় যদি। একের বিনাশী অন্য জীবন ঔষধি॥

কেবল আপন সুখ নাহি বাঞ্ছা কর।
তাহাতে প্রকাশ পায় অতি স্বার্থপর॥

 পুত্র প্রশ্ন করিলেক পিতা বরাবরে। এক নীতি বাক্য শিক্ষা দেও ত আমারে॥ বলিলেক সদা তুমি কর ধর্ম্ম দান। কিন্তু নাহি দিবে দুরাত্মার বৃদ্ধি স্থান॥

 ২১। দুই ব্যক্তি ধর্ম্ম ও দেশের বিনাশকারী হয়, যথা ধৈর্য্যহীন রাজা এবং বিদ্যা শূন্য যোগী।

সে ব্যক্তি না হৌক বিচারক কোন দেশে।
ঈশ্বরে বিমুখ যেবা হয় ত বিশেষে॥

 ২২। মিত্রেরদের মিত্রতায় বিশ্বাস প্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তাহাদিগের প্রতি ক্রোধ করা উচিত নহে ক্রোধাগ্নি প্রথমত ক্রোধির শরীরে লাগিয়া অত্যন্ত প্রবলা হয় ও দুঃখিত স্ফুলিঙ্গ সকল শত্রুর অঙ্গ পর্য্যন্ত পৌছে, কদাচ নাও হয়।

 মৃত্তিকাদি হইতে জাত মনুষ্যের গণে। না হও উচিত গর্ব্ব ক্রোধাদি করণে॥ যদি তুমি হও অহঙ্কারাদির বশ। নহ মর্ত্ত্য তবে তুমি বটহ রাক্ষস॥ বলেকান দেশে এক যোগী সন্নিধানে। কহিনু মূঢ়তা দূর করার কারণে॥ কহিল পৃথিবী মত ধৈর্য্য ধর ভাই। শিক্ষিত বিদ্যাতে কিবা ফেল তুমি ছাই॥

 ২৩। কুস্বভাব ব্যক্তি এতাদৃশ শত্রুর হস্তে পতিত হয় যে যথায় যায় তাহার দৌরাত্ম্যের ভীষণ বন্ধন হইতে মোচন হইতে পারে না।

কুস্বভাবী যদি করে স্বর্গে আরোহণ।
রহিতে বিপদগ্রস্ত স্বভাব কারণ॥

 ২৪। যদি শত্রু সেনা মধ্যে পরস্পর অনৈক্য দৃষ্ট হয় তবে ভাবিত হইওনা কিন্তু যদি ঐক্যতা দেখ তবে স্বীয় সৈন্যের অনৈক্যতার বিষয়ে ভাবিত হও।

 শত্রু২ পরস্পর করে যদি দ্বন্দ্ব। মিত্র সনে নিশ্চিন্তেতে করহ আনন্দ॥ দেখ যবে আছে সব শত্রু এক কথা। বিলম্ব ত্যজিয়া অস্ত্র ধরহ সর্ব্বথা॥

 ২৫। শত্রু যখন অন্য কোন প্রবঞ্চনা করিতে অশক্ত হয় তখন কপট মিত্রতা আরম্ভ করে এবং তাহাতে শত্রু যে২ কর্ম্ম করিতে না পারে সেই২ কর্ম্ম সাধন করে। সর্পের মস্তক শত্রুর হস্তে মর্জন করাও তাহাতে দুই উপকারের এক অবশ্যই হইবেক যদি ঐ শত্রু জয় প্রাপ্ত হয় তবে সর্প বিনষ্ট হইবেক আর সর্প তাহাকে দংশন করিলে শত্রুর হাতহইতে পরিত্রাণ পাইবা।

নির্ভয় না হও যুদ্ধে ক্ষীণ বৈরি সনে।
নিকালে সিংহের মার্জা যে নিরাশ প্রাণে॥

 ২৬। দুঃখকর সংবাদ অন্যের নিকট কহা হইতে নিঃশব্দ থাক।

হে ভ্রমরা বসন্তের সুসংবাদ দেহ।
ছাড়্যে নিদাঘের কথা ক্ষণ ধৈর্য্য বহ॥

 ২৭। যেপর্য্যন্ত বিশ্বাসিত ও তথ্যরূপে অবজ্ঞাত না হয় তাবৎ কাহারও অপরাধ রাজ সন্নিধানে নিবেদন করিও না নচেৎ তুমি স্বয়ং আপন বধের উপায় করিবা।

লভ্য যবে দেখ তুমি পক্ষে আপনার।
তখন করিও তাহা বাক্যেতে প্রচার॥

 ২৮। যে কেহ কোন অহঙ্কারি ব্যক্তিকে উপদেশ করে সে স্বয়ং উপদেশকারকের প্রার্থিত হয়।

 ২৯। শত্রুর প্রবঞ্চনাতে মুগ্ধ হইওনা এবং তাহ। কর্ত্তৃক উক্ত প্রতিষ্ঠা বাক্য সকল শ্রবণে অহঙ্কার করিওনা কেননা তাহা ষড়যন্ত্রের জাল ও তোমার আপদের নিদর্শন। বুদ্ধি হীন ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠা দ্বারা ভুলান যায়।

 বঞ্চকের সুপ্রতিষ্ঠা সকল না শুনিবে। আছে তার স্বীয়লভ্য অবশ্য জানিবে॥ যে দিনে তাহার লভ্য নাহিক পাইবে। শত২ দোষ তব সর্ব্বত্রে কহিবে॥

 ৩০। যে পর্য্যন্ত কেহ কথকের দোষানুসন্ধান না করে তাবৎ তাহার কথার শোধন হয় না।

নিজ মনে২ তথা মূর্খ প্রশংসার।
নাহি কর অভিমান স্বীয় শুভাচার॥

 ৩১। তাবৎ লোকেরাই স্বীয় বুদ্ধিকে উত্তম ও স্বীয়অঙ্গতাকে সৌন্দর্য্যযুক্ত জ্ঞান করে।

এসংসারে একিবারে বুদ্ধি লোপ পায়।
আপনারে মূর্খ করে না বুঝে কথায়॥

 ৩২। দশ ব্যক্তি স্বচ্ছন্দে একত্র বসিয়া ভোজন করিতে পারে কিন্তু একটা দুর্গন্ধ শব খাইতে দুই কুক্কুর পরস্পর শব্দ করিতে থাকে, লোভি ব্যক্তি যদিও সংসারের ধন ও সকল দ্রব্য রাখে যদি তথাপি তাপিত ও তৃষ্ণিত হয় কিন্তু নির্লোভ ব্যক্তি এক মাত্র রুটী প্রাপ্ত হইলেই তৃপ্ত ও তুষ্ট হয়।

 শুষ্ক অন্নমাত্রে হয় উদর পূরণ। জগদ্দ্রব্যে নাহি পুরে লোভির নয়ন॥ আয়ুঃ শেষ হইল যবে আমার পিতার। এই নীতি কহে মোরে ছাড়িলা সংসার। কামাগ্নি বিপদে পুত্র ধীরতা ধরিবে। নিজ জন্যে নরকাগ্নি নাহি জ্বালাইবে॥ সে অগ্নির তাপ কভু নারিবে সহিতে। নির্ব্বাপণ কর ধৈর্য্য জল দিয়া তাতে॥

 ৩৩। বিভব স্বত্বে যে ব্যক্তি দীন দরিদ্রের উপকায় না করে সে অশক্তবস্থায় অতিশয় ক্লেশ ও যন্ত্রণা ভোগ করে।

হতভাগা সেই ব্যক্তি জীবে দুঃখ দেয়।
দুর্দ্দিনে তাহার কেহ বান্ধব না হয়॥

 ৩৪। জীবন এক শ্বাস মাত্রের ও সংসার এক ফল মাত্রের সহায়, অতএব সাংসারিক কর্ম্মের বিনিময়ে ধর্ম্মকে বিক্রীত করিও না এবিষয়ে জগৎ কর্ত্তার বাক্য প্রমাণ আছে, যথা হে মর্ত্তেরা তোমরা ইন্দ্রিয় গ্রামের সেবা করিবে না এবিষয়ে আমি তোমাদের হইতে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করিয়াছি।

শত্রু বাক্যে মিত্রের প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ কৈলে।
ভেবে দেখ কারে ছেড়ে কাহাতে মিলিলে॥

 ৩৫। কামাদি বন্ধুতাতে অর্থাৎ তত্তৎ ইন্দ্রিয়ানুযায়ি ভোগাদির যোগানেও রাজা দরিদ্র দ্বারায় ক্ষান্ত হন না।

 তবু ধর্ম্ম বহির্ম্মুখে কর্জ নাহি দিবে। কাতর একান্তে যদি ক্ষুধাদিতে হবে॥ অবশ্য কর্ত্তব্য ধর্ম্ম কর্ম্ম যে ছাড়িবে। কর্জ শোধ জন্যে তার কিবা চিন্তা হবে॥

 ৩৬। অল্পায়াসে শীঘ্র যে দ্রব্য প্রাপ্ত হয় তাহা চিরকাল স্থিত থাকে না। পূর্ব্ব নীতিজ্ঞেরা কহিয়াছেন যে যে বিত্ত শীঘ্র আগত হয় তাহা আশু গত হইয়া যায়।

 শুনিয়া আসেছি আমি পূর্ব্ব দেশ হতে। বানায়ে কাঁচের পাত্র চল্লিশ বর্ষেতে॥ শত পাত্র বগুদাদে নির্ম্মি দিনপ্রতি। কিন্তু দৃষ্টিকর উভয়ের মূল্য প্রতি॥

 ৩৭। কুক্কুটের ছাল্যা অণ্ড হতে নিকলিয়া। স্বখাদ্যের অন্বেষণ করয়েই ভ্রমিয়া॥ মনুষ্যের শিশু জাত হয় যে যখন। বুদ্ধি শুদ্ধি তার কিছু না হয় তখন। সে শিশুকে কেহ কভু যদি মারি ফেলে। কহিতে না পারিবেক কখন কৌশলে॥ এই শিশু দিনে২ যত বৃদ্ধি হবে। নানা বিদ্যাদিতে অতি বুদ্ধি মান রবে॥ সর্বত্র প্রাপ্তব্য দেখ সীসা অনাদর। মাণিক অপ্রাপ্য হেতু বহু সমাদর॥

 ৩৮। ধীরতা ও ধৈর্য্যতাতে কর্ম্ম সকল সু সম্পন্ন হয়, যে ব্যক্তি শীঘ্র২ করিতে চাহে সে স্বয়ং অপমান ও অপচয় গ্রস্ত হয়।

 দেখিয়া স্বচক্ষে মরা প্রত্যেক মাঠেতে। ধিরণ প্রথমে গেল শীঘ্রগামী হইতে॥ দ্রুত গামী অশ্বগণ অত্যন্ত দৌড়িয়া। স্থগিত হইল শ্রমে বিবশ হইয়া॥ উষ্ট্রের রাখাল উষ্ট্র ধীরে চালাইয়া। পঁহুছিলেক অগ্রভাগে তথায় যাইয়া॥

 ৩৯। বুদ্ধি হীনের নিঃশব্দ থাকাই ভাল, যদি ইহা উত্তমরূপে জানিতে তবে নির্ব্বুদ্ধি হইতা না।

 যদি বিদ্যা বুদ্ধি কিছু না থাকে তোমায়। বন্ধ করি রাখ তবে আপন জিহ্বায়॥ মনুষ্যের জিহ্বা অনর্থক কর নষ্ট। যে কিছু আছয়ে বুদ্ধি তাহা কর ভ্রষ্ট॥ মূর্খ দিত শিক্ষা এক গর্দভ অন্তরে। করিত সে কাল গত এমন উত্তরে॥ এক বিজ্ঞ কৈল এই চেষ্টা মিথ্যা ভাবে। এ মনস্থে পাবে তুমি ক্লেশ বহু তবে॥ ওহে অজ্ঞ নিঃশব্দ থাকিবে খর স্থানে। যদিহ সে না কিছু শিখিল তব স্থানে॥ বিবেচনা বিনা যেবা করিবে উত্তর। অবশ্য করিবে সেহ অসত্য উত্তর॥ বুদ্ধিমান মত কর বাক্যের প্রবন্ধ। কিবা খর তুল্য তুমি থাকহ নিঃশব্দ॥

 ৪০। লোক সমূহের বুদ্ধিমান রূপে পরিচিত হওনাশয়ে যে ব্যক্তি আত্মপক্ষীয় সুধীরের সহ বাস করে সে একদা বুদ্ধি রহিত, উহাকে লোকেরা বুদ্ধি হীনই জানিবেক।

বাক্যালাপে কেহ যদি বাড়ে তোমাহতে।
নৈতে ক্ষান্ত জান যদি ভাল তাহা হতে॥

 ৪১। যে ব্যক্তি সল্লোকের সহবাসী হয় তাহার কদাচ ভাল হবে না।

যদ্যপি সূরিতে করে মূর্খ সহ বাস।
পর পীড়া বঞ্চনাদি শিখিবে নির্যাস॥
না শিখিবে দুষ্ট হটদুষ্টতা ব্যতীত।
জান এই সার কথা অন্তরে নিশ্চিত॥

 ৪২। লোকেরদের অস্পষ্ট দোষ সকল রাষ্ট্র করিও না কেননা তুমি তাহাতে উহাদিগকে দুর্নামি ও আপনাকে লোকাগ্রে অবিশ্বাসি করিব।

 ৪৩। যে ব্যক্তি অধ্যয়ন করে ও তন্মতাবলম্বী না হয় সে ঐ ব্যক্তির অতুল্য যে চাস করে কিন্তু বীজ বপন করে না।

 88। অন্যাসক্ত চিত্ত লোকের দ্বারা ঈশ্বরের ভজনা হয় না ও সার রহিত চর্ম্ম অকর্ম্মণ্য হয়, যে কথোপ কথনে সুচতুর সে বিষয় ব্যাপারেও পারগ এমত নিশ্চয় নাই।

 উড়নিতে ছাপা জানি কেমন সুন্দরী। মাতামহী তুল্য বৃদ্ধা দেখহ উগারি॥ শরত পূর্ণিমা রাত্রি সদা যদি হৈত। তবে তার মান হানি অবশ্য হইত॥ প্রস্তর মাত্রই যদি মাণিক্যাদি হৈত। মণি প্রস্তর তবে দেখ তুল্য মূল্য হত॥

 ৪৫। সুন্দরাকৃতি হইলেই যে প্রকৃতি উত্তম হয় এমত নহে কেননা কর্ম্মের ভাল মন্দ অন্তরের সহিত সম্পর্ক রাখে, বাহ্যাঙ্গে নহে।

মনুষ্যের চালি তথা চলন দ্বারায়। কিপর্য্যন্ত বিদ্যা তার হঠাৎ জানা যায়॥ আন্তরিক কর্ম্মে তার দৃষ্টি না করিবে। কদাশয় নাহি যায় কদাচ জানিবে॥

 ৪৬। যে ব্যক্তি আপন মান্য লোকের সহিত বাদ বিতণ্ডা করে সে আপন বধের উপায় করে।

 আপনাকে তুমি যদি বড় করি জান। তোমার দ্বিগুণ বড় দেখিবায় পুন॥ মেষ সহ মাতা মাতি যে জন খেলায়। দেখিবে ফুটিবে তার মাতা সর্ব্বথায়॥

 ৪৭। ব্যাঘ্রের সহিত মল্ল যুদ্ধ করা ও করবালের উপর মুষ্ট্যাঘাত করা ধীমানের কর্ম্ম নহে।

বলবান হয় যেবা আপন হইতে।
থাক ক্ষান্ত তার সাতে সম্মুখ যুদ্ধেতে॥

 ৪৮। যে দুর্ব্বল ব্যক্তি সবলের সহিত বল প্রকাশ করিতে চাহে সে আপনার বিনাশ দ্বারা শত্রুদের সহায়তা করণের ইচ্ছা করে।

 সর্ব্বদা ছায়াতে বসি থাকে যেই জন। কিমতে মল্লের সঙ্গে যুঝিবেক রণ॥ নির্ব্বলেরা বলবান ব্যক্তির সহিতে। করে যুদ্ধ নিজ মৌর্খ আর নির্ব্বুদ্ধিতে॥

 ৪৯। যে ব্যক্তি নীতি বাক্য শ্রবণ না করে সে নিন্দা ও অভিযোগ শ্রবণে বাঞ্ছিত হয়।

ওহে ভাই নীতি বাক্য যদি নাহি শুন।
কেহ গ্লানি কৈলে কিছু না কহিও পুনঃ॥

 ৫০। মূর্খেরা কৃতবিদ্য লোককে দেখিতে ভাল বাসে না যেমন অকর্ম্মণ্য কুক্কুরেরা স্বীকারি কুক্কুর দেখিলে দূরে থাকিয়া গর্জ্জন করিতে থাকে নিকটে আসিতে পারে না তদ্রূপ, অপর মূর্খেরা কাহার সহিত বিদ্যাদিতে পরাস্ত হইলে তাহার শত২ দোষ অন্যের নিকট কহে।

দেখ শত্রু এবে দোষ কহে পরস্থানে।
যে ছিল নিঃশব্দ তব অগ্রেতে কখনে॥

 ৫১। যদি উদরের পীড়া না হইত তবে কোন জন্তু ব্যাধের জালে পতিত হইত না এবং ব্যাধও জাল ফেলিত না।

অবশ করয়ে সবে দুর্ভর উদরে।
কি ভজিবে উদরের দাস ঈশ্বরেরে॥

 ৫২। বিদ্বানেরা গৌণে ও জ্ঞানিরা অর্দ্ধ পুরিত ক্রমে ও সংসার বিরক্তেরা প্রাণ ধারণোপযোগি মতে ও পশুরা আকণ্ট পূর্ণ ক্রমে ভোজন করে অপর বুদ্ধেরা গলৎঘর্ম্ম হওয়া পর্য্যন্ত ভোজন করে কিন্তু উদরার্থে ভেকধারিরা এপর্য্যন্ত খাইতে থাকেন যে উদরের মধ্যে শ্বাস প্রবর্ত্তের স্থূল ও ভোজ্য স্থানে অপর খাদ্য কিছু মাত্রই থাকিতে পারে না।

উদর আবদ্ধে নিদ্রা রাত্রিতে না হয়।
যে রাত্রে অধিক খায় অজীর্ণেতে বয়॥

 ৫৩। স্ত্রীরদের সহিত পরামর্শ করা ও দুরাত্মা দিগকে দান করা অকর্ত্তব্য।

লেকদের প্রতি কর দয়া বিতরণ।
অযত্ন করিলে হয় দৌরাত্ম্য করণ॥

 ৫৪। যে ব্যক্তির শত্রু সাক্ষাৎ হয় সে যদি উহাকে বিনাশ না করে তবে সে আপনি আপন প্রাণের বৈরী হয়।

হাতেতে পাথর সর্প প্রস্তর উপরে।
অবোধতা ক্ষণ ক্ষমা কর যে তাহারে॥

 কতক লোক ইহার বিপরীত কর্ম্মাকে উত্তম করিয়া মানেন ও কহেন যে দোষিদের বিনাশে গৌণ করা ভাল কেননা বিবেচনাধীন মারণ ও রক্ষা করণের শক্তি আছে যদি হঠাৎ বিনাশ কর হইতে পারে যে কোন অশুভ পরামর্শে বিনষ্ট হয় তাহাতে তদনুসারীয় কর্ম্মের প্রতিকার হইতে না পারে।

 অল্পায়াসে মারা যায় জীবিত জনারে। কিন্তু শক্তি নাহি পুন প্রাণ দিতে তারে॥ বিবেচনা বিনা তীর ছাড়া অতি দোষ। ছুটিলে ধনুক হতে না ফিরিবে রোষ॥

 ৫৫। যে ধীমান ব্যক্তি মূর্খেরদের সঙ্গে পতিত হয় সে মান্যতার বাঞ্ছা রাখে না এবং যদি কোন মূর্খ বাক্য দ্বারা কোন বিদ্বান হইতে জয়ি হয় আশ্চর্য্য নহে কেননা এমত সুকঠিন প্রস্তর আছে যে তৎ প্রহারে মাণিক্যাদি ভগ্ন হইয়া যায়।

 এক পিঞ্জরেতে যদি কাক পিক রয়। পিকের স্বভাব দূর হইবে নিশ্চয়॥ সুবোধ লোকেরা কভু নাহি দুঃখী হবে। মূর্খের হস্তেতে যদি দৌরাত্ম্য পাইবে॥ কনকের পাত্র যদি প্রস্তরে ভাঙ্গয়। স্বর্ণ মূল্য অনাদরে তাহে না বাঢ়য়॥

 ৫৬। যদি কোন ধীমানের বাক্য মূর্খেরদের নিকটে গ্রাহ্য না হয় তাহা আশ্চর্য্য নহে কেননা সেতারের স্বর উচ্চতায় ঢোলের সহিত তুল্য হইতে পারে না ও অগুরুর সুগন্ধকে পলাণ্ডুর দুর্গন্ধে ঢাকিয়া রাখে।

 উচ্চস্বরে বহু কথা করিয়ে প্রচার। লজ্জা দেয় মূর্খ ধীর জনে বার২॥ ইহা না জানয় উচ্চ তবলের বাদ্যে। ঢাকিয়ে রাখয়ে মিষ্ট বয়ারের শব্দে॥

 ৫৭। মণি মাণিক্যাদি যদি পঙ্ক কর্দ্দমাদিতে পতিত হইয়া থাকে তথাপি উত্তম ও পবিত্র, কিন্তু কাঁটা কুটা ইত্যাদি যদি স্বর্গ মার্গারোহী হয় তথাপি ঘৃর্ণিত ও হেয় থাকে, যদি বুদ্ধিমান ব্যক্তি উপদেশ প্রাপণে নিরাশ থাকেন তবে খেদের বিষয় বটে। নিব্বদ্ধি সদ্বংশজ হইলেও তাহাকে উপদেশ করা অনর্থক কেননা মাণিক্যাদি প্রস্তরের অগ্নি অত্যুত্তম বটে কিন্তু স্বয়ং উত্থিত হইতে পারে না কারণ ছাই তুল্য হেয় ও সুমিষ্ট ইক্ষুরসের মূল্য ইক্ষুদণ্ডের হেতুতে নহে সে স্বয়ং সুমিষ্ট এই হেতু সমাদরণীয় হয়।

 কি লালের ভাব জাতে ছিল মন্দ অতি। পয়ম্বর বংশে তার না হল সুখ্যাতি॥ প্রকাশ উত্তম বৃত্তি বুদ্ধি ধন হৈতে। অধিক পুষ্পের শোভা কারক হইতে॥

 ৫৮। কস্তুরী সেই হয় যে স্বয়ং আপন সদ্গন্ধ বিতরণ করে, বিক্রীকারকের কথার উপর নির্ভর হইলে কি কর্ম্মের হয়? পণ্ডিতেরা গন্ধ বণিকের তুল্য শব্দে আপন২ চাতুর্য্য দেখান, আর অজ্ঞেরা ভোজ বিদ্যার খেলা কারকের ঢোলের তুল্য উচ্চ শব্দ করিতে থাকে ও তদ্বৎ অন্তরে সার রহিত ও শূন্য হয়।

 মূর্খদের মাঝে যদি থাকয়ে ধীমান। কবিবা কহিয়াছেন তাহার প্রমাণ॥ পরম সুন্দরী মন্দদার মধ্যে যেন। বিধর্ম্মির ঘরে যথা থাকিয়ে পুরাণ॥

 ৫৯। যে মিত্রের মিত্রতা চিরকালে হস্তগত হয় এক মূহূর্ত্ত মধ্যে তাহা বিনষ্ট করা উচিত নহে।

বহু দিনে হয় মাণিক্য যদি প্রস্তরে।
ত্রুটি কাল মধ্যে তারে না ভাঙ্গ প্রস্তরে॥

 ৬০। পুরুষেরা মায়ারূপিণী ও কপট স্বরূপিণী রমণী দের হস্তে নিরপায় হয় বুদ্ধি স্বভাবের অনুযায়ি হইলে তদ্রূপ হয় না।

সে ঘরে সুখের আশা কর তুমি নাশ।
উচ্চৈঃস্বরে নারী যথা করয়ে সম্ভাষ॥

 ৬১। শক্তি বিনা বুদ্ধি প্রপঞ্চ এবং বঞ্চনা ও বুদ্ধি বিনা শক্তি মূর্খতা ও বাতূলতা স্বরূপ হয়।

বুদ্ধি ও সাধুতা পূর্ব্বে রাজ্য পাউক পরে।
ধনে মূর্খ দৌরাত্ম্য করয়ে আত্ম পরে॥

 ৬২। যে সুমতি ব্যক্তি ভোগ ও দান করে সে উপবাস ক্রমে সঞ্চয়কারক জ্ঞানি হইতে ভাল।

 ৬৩।যে ব্যক্তি এই সংসারের লোকেরদের অগ্রে মান্য হওয়ার জন্যে স্বীয় স্বভাবকে পরিহার করে সে বিধি কর্ম্ম ত্যাগে আর নিষিদ্ধ আচরণে প্রবর্ত্ত হইল।

নির্জ্জনে ঈশ্বর তরে নাহি বৈসে যেই।
মলিন দর্পণে কিবা দেখিবেক সেই॥

 ৬৪। অল্পে অল্পে অনেক হয়, ও বিন্দুপাতে ক্রমে পুষ্করিণী হইয়া যায়, নিঃশক্তি লোকেরা প্রস্তরাঘাত প্রাপ্ত হইয়া নিঃশব্দে থাকেন, ও অবকাশ ক্রমে দৌরাত্ম্যকারির মস্তক বিদীর্ণ করেন।

বিন্দু২ সঞ্চয়েতে নালা তাহে হয়। নালা২ মিল্যে নদী হইয়া বহয়॥ অল্পে২ ক্রমে২ ধনু হয়্যে যায়। গোটে২ ধান্য দেখ ঢের উপযায়॥

 ৬৫। পণ্ডিতের কর্ত্তব্য নহে যে দুষ্টেরদের প্রপঞ্চ রচিত বাক্ চাতুরীর বশ হন অথবা ধৈর্য্য হেতু তাহা সহ্য করিয়া থাকেন তাহাতে উভয়ের হানি হয়, তদ্বারা উহার ভয়ের বিনাশ হইবেক ও দুষ্টতা বর্দ্ধিষ্ণু হইবেক।

আনন্দ মগনে যদি দুষ্ট কহে কথা।
দুষ্টতা তাহার আরো বাড়িবে সর্ব্বথা॥

 ৬৬। পাপ যাহার দ্বারায় হউক মন্দই বটে কিন্তু যদি পণ্ডিত কর্ত্তৃক হয় তবে অত্যন্তমন্দ কেননা ইন্দ্রিয় গ্রামের সহিত যুদ্ধ করণার্থ বিদ্যা তীক্ষ্ণ অস্ত্র স্বরূপ তাহাতে অস্ত্রধারি ধৃত ও নীত হইলে অত্যন্ত লজ্জার বিষয় হয়।

 আজ্ঞ নির্ধন যদি হয় দুরাচার। কুৎসিত পণ্ডিত হতে ভাল শতবার॥ বন্ধ হেতু পর হারিলেক সেই জন। পড়িল কূপেতে এই থাকিতে নয়ন॥

 ৬৭। যাহার জীবনাবস্থায় দীন দরিদ্রেরা অন্ন প্রাপ্ত না হয় তাহার মরণান্তে কেহ তাহার নাম করে না।

 ৬৮। প্রসিদ্ধ যিশুফ নামক ব্যক্তি মিছির দেশে যখন অন্নের কাল উপস্থিত হইয়াছিল তখন উদর পুরিয়া ভোজন করিতেন না, কেননা পাছে অভুক্ত দিগকে বিস্মৃত হইয়া যান, যথা কথিত আছে যে আঙ্গুরের আস্বাদ বিধবারা জানেন দ্রব্যবান ধনিরা তাহা জ্ঞাত নহেন।

 কাঙ্গাল দুঃখির দুঃখ জানে সেই জন। নিজ অবস্থায় আছে অসক্ত যেজন॥ ওহে তেজ গামি অশ্বারোহী দেখ ভাব্যে। পঙ্ক কর্দ্দমেতে চলে কাঠুরে গর্দ্দভে॥

 ৬৯। দরিদ্র ও দুঃখি কাঙ্গালদিগকে তাহারদের অবস্থার ক্লেশ ও সঙ্কীর্ণতা কালে জিজ্ঞাসা করিও না যে কেমন আছ কিন্তু যদি তাহার দুঃখ উপশম করিতে কি তাহাকে কিছু দান করিতে চাহ তবে করিও।

 যদি দেখ বোঝা সহ অনেক গর্দ্ধভ। কর্দ্দমেতে হয়্যে মগ্ন পাত্র পরাভব॥ তার জন্যে মনে২ দয়া না করিবে। কদাচ তাহার তুমি নিকটে না যাবে॥ কিমতে পড়িল পুছ যদি তাহে যায়্যে। তবে প্রকাসহ শক্তি তারে উঠাইয়ে॥

 ৭০। দুই বিষয় বুদ্ধির অগোচর প্রথম প্রালব্ধের অগ্রে খাওন, দ্বিতীয় জানিত মৃত্যুকালে অগ্রে মরণ।

 করিবেক শত লোক খেদ অনিবায়। কিবা ভাল কিবা মন্দ কহিয়া তোমায়॥ বিধবা নারীরদের দীপের নির্ব্বাণে। কি দুঃখ বটয়ে বায়ু প্রতি নিধি জনে।  ৭১। হে খাদ্যান্বেষকেরা আবশ্যক ভক্ষণ করিও ওহে মৃত আকাঙ্ক্ষিরা পলাইও না প্রাণ রক্ষা করিয়া লইতে পারিবা না।

 প্রালব্ধের বাষ্প তুমি কর বা না কর। দিবেন ঈশ্বর তাহা তোমার গোচর॥ যদি সিংহ ব্যাঘ্রাদির মুখে তুমি যাবে। মৃত্যু দিন বিনা তরে কদাচ না খাবে॥

 ৭২। যাহা আমার প্রার্থনের নহে তাহা হস্তগত হয় না, আর স্বীয় প্রালব্ধীয় বিষয় যথা তথা হইতে আসিয়া হস্তগত হয়॥

শুনিয়াছ শীকন্দর ঘোর অন্ধকারে।
গিয়াও বহু ক্লেশে না পাইল অমৃতেরে॥

 ৭৩। ভাগ্যে না থাকিলে ধীবরেরা নদীতে মৎস্য ধরিতে পারে না, এবং মৃত্যুকাল বিনা মৎস্য শুখনায় আগত হইলেই মরে না।

লোভি ব্যক্তি দিবারাত্রি সর্ব্বত্র ভ্রমিছে।
সে লোভের পাছে কাল তার পাছে২॥

 ৭৪। ধনি ব্যক্তি কাঞ্চনে আবৃত ভেলার ন্যায় ও উত্তম সাধুরা ভস্মাবৃত সুন্দরীর ন্যায় হয়েন ইহার উদাহরণ প্রসিদ্ধ মোছা নামক পেগম্বরের শত ছিদ্র যুবা ও তাহার প্রমাণ ফবউন নামকের জড়াও শ্মশ্রু বটে।

 ধন সম্পত্তি বহু আছয় যাহার। কোনমতে মন দুঃখি নারবে তাহার॥ কহ তারে এই ধন সম্পত্তি হইতে। তুমি কিছু নাহি পাবে উত্তরকালেতে॥

 ৭৫। হিংসকেরা পরমেশ্বরীয় দত্ত ধনে বঞ্চিত ও নিরপরাধ ব্যক্তিদের শত্রু হয়।

 কোন নিরর্থক বাদি চঞ্চল মানুষ। দিতে ছিল কোন ধনি লোকে বহু দোষ॥ কহিলাম তুমি যদি বট ভাগ্যহীনে। ইহাতে কি বটে দোষ ভাগ্যবান জনে॥ মন্দ বাঞ্ছা নাহি কর শত্রুর জন্যেতে। সে দুর্ভাগা পড়িয়াছে স্বয়ং বিপদেতে॥ কি হেতুতে, তার প্রতি পাঠাও অন্য শত্রু। তার পাছে আছে জিহিংসিকা মহাশত্রু॥

 ৭৬। অমনোযোগি শিষ্য ধনহীন অনুরাগির তুল্য এবং অজ্ঞাতসার পথিক পাখা রহিত পক্ষির ন্যায় ও অনাচরণকারি পণ্ডিত ফলহীন বৃক্ষের সদৃশ ও বিদ্যহীন সন্ন্যাসি দ্বার রহিত গৃহের মত হয়। বিদ্যা স্বভাবের উত্তমতা প্রাপ্ত করণের জন্যে প্রদত্ত্ব হয় কেবল পাঠশালার পাঠনের তুল্য পাঠ করণের জন্যে নহে, মূর্খ ভক্তিকারকেরা শীঘ্র গামি পেয়াদার তুল্য ভজনে ও শিথিল, পণ্ডিত ব্যক্তি নিদ্রিত অশ্বারোহির ন্যায় হন, অপরাধ হইতে ক্ষান্ত অপরাধী এবং অহঙ্কার ত্যাগ করিয়া ভক্তিকারক ব্যক্তি ভাল হইতে পারেন।

উত্তম স্বভাব উদার কোতয়াল।
দুঃখ দায়ি পণ্ডিত হইতে বহু ভাল॥

 ৭৭। কেহ কোন ব্যক্তির নিকট প্রশ্ন করিলেক যে অনাচরণ কারি পণ্ডিত কি প্রকার হয়? উত্তর করিল মক্ষিকা নির্ম্মিত মধু রহিত মধু চক্রের ন্যায়।

কহ তুমি সেই দুষ্ট মক্ষিকার স্থানে।
না দেউক মধু ভাল নাকরে দংশনে॥

 ৭৮। উপরোধ ও অনুরোধ হীন পুরুষ স্ত্রীর তুল্য ও লোভি যোগি দস্যুর সমান হয়।

 হে ভাই বঞ্চনাদিতে জামা শ্বেত কর‍্যে। লোক দেখাবারে ফের দুঃখে কাল ধর‍্যে॥ সংসার হইতে হস্ত আপনার তুল। আস্তিন দির্ঘীকি খর্ব্ব উভয়হি ভাল॥

 ৭৯। দুই ব্যক্তির খেদ অন্তর হইতে দূর হয়না আর তাহাদের হানি দুর্নাম ও লজ্জারূপ পঙ্ক নিমগ্নতা হইতে উদ্ধার হয়না, প্রথম এই যে বণিকের নৌকা হারাণ যায়, দ্বিতীয় এই যে ব্যক্তি সংসার ত্যগিদের সহিত আচার ব্যবহার করে তাহার উত্তরাধিকারী।

 যোগিরা তোমার জন্যে জানে বিধি নিধি। ধন দিয়া নিজ পন্থা নাহি কর যদি॥ রঙ্গবস্ত্র ধারিদের নিকটে না যাবে। সংসার হইতে কিম্বা হস্ত উঠাইবে॥ হস্তির মাহুত সনে প্রীতি না করিবে। গজ খাদ্য স্থলে কিম্বা বসতি করিবে॥

 ৮০। রাজাদের দত্ত শিরোপা যদিও উত্তম, তথাপি তদপেক্ষায় আপন জীর্ণ বস্ত্র অত্যন্ত প্রিয়তম হয়। ধনিদের খাদ্য স্থানে যদিচ সুখাদ্য সুস্বাদ দ্রব্য সকল থাকে, কিন্তু আপন ঝুলি স্থিত ভিক্ষান্ন তদপেক্ষা অধিক সুস্বাদ লাগে।

সীচক ও শাক নিজ শ্রমে যাহা হয়।
ধনিদের সুমিষ্টান্ন হইতে ভাল কয়॥

 ৮১। স্বীয় বিবেচনাতে ঔষধ সেবন ও জ্ঞাত সার লোকের সঙ্গ বিনা অজ্ঞাত পথে গমন করিলে সুবুদ্ধির বিপরীত কর্ম্ম ও নীতিজ্ঞদের উক্তি উল্লঙ্ঘন করা হয়। ইমাম গজাকি নামক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা হইয়াছিল তুমি কি মতে বিদ্যাতে এপ্রকার পার হইলে? তিনি উত্তর করিলেন আমি যাহা জানিতাম না তাহা জিজ্ঞাসা করিতে লজ্জা করি নাই।

 বুদ্ধিমতে চাহ যদি আপন সম্মান। অজ্ঞাত বিষয়ে প্রশ্ন কর বিজ্ঞ জন॥ না মান লাঘব কিছু যাহা নাহি জান। বুদ্ধিতে তোমারে পন্থ দেখাবে সেজন॥

৮২। যে বিষয়ে তুমি এমত বিবেচনা কর যে নিশ্চয় বুদ্ধি গম্য হইয়া যাইবেক তাহার জিজ্ঞাসা বাদ শীঘ্র শীঘ্র করিও না কেননা তাহাতে পাণ্ডিত্যের খর্ব্বতা ও বুদ্ধির অতীক্ষ্ণতা হয়।

 দেখিল যখনে, লোক বুদ্ধিমানে, দাউদের কর স্থিত। সে কৌশলে সব, হবে নর্ম্ম তব, যেমন মনের মত॥ নাহিক বুঝিল, সে কিবা করিল, অথবা কিবা কহয়। জেনেছিলাম মনে, বিনা জিজ্ঞাসনে, বুঝিবে তাহা নিশ্চয়॥

 ৮৩। প্রণয়ের জন্য ন্যায্য ও আর স্বকীয় কর্ম্ম এই হয় যে গৃহাধিকারির বিমতে কোন কর্ম্ম করিওনা ও কিছু কহিওনা তাহাতে উহার সঙ্গে তোমার সম্প্রীতি থাকিবে।

 শ্রোতার অন্তর বুঝি কহিবেক কথা। কিছুমাত্র না কহিবে তাহার অন্যথা॥ বিজ্ঞ ব্যক্তি যদি মজ‍্নু সহিতে বসিবে। লয়লা প্রসঙ্গ তবে অবশ্য করিবে॥

 ৮৪। যেব্যক্তি কদাচারিদের সহবাসী হয় যদি তাহার কদাশয় আশয় পরিবর্ত্ত না হয় তথাপি কাজে২ উহারদের কৃত কর্ম্মে তাহাকেও অপরাধি হইতে হয় যথা যদি কেহ ঈশ্বরের ভজনার্থে মদ্যালয়ে গমন করে লোকেরা উহাকে মদ্য পায়ী বলেন।

 নিজ নির্ব্ব দ্ধিতা তুমি করিলে প্রকাশ। স্বয়ং করিলে যাতে দুষ্ট সহ বাস॥ বিজ্ঞস্থানে আমি জিজ্ঞাসিনু এক নীতি। কহিলেন দুষ্ট সনে না করিও প্রীতি॥ যদি বিজ্ঞ হয় কভু অজ্ঞ নাহি হবে। যেবা মূর্খ ঘোরতর মূর্খ নাহি হবে॥

৮৫। উষ্ট্রের অতুল সহিষ্ণুতা সুপ্রকাশ আছে,যদি এক বালক উহার নাসিকা রন্ধ্রস্থ রজ্জু আকর্ষণ করিয়া শত ক্রোশের অধিক পথ লইয়া যায় তথাপি ঐ জন্তু আজ্ঞাবহতা হইতে কদাচ বিমুখ হয় না, কিন্তু যদি কোন ভীতি জনক ও ভয়ানক পথ অগ্রবর্ত্তি হয় ও বালক অজ্ঞনতা প্রযুক্ত তথায় যাইতে চাহে, তবে ঐ রজ্জ উহার হাত হইতে ছিড়িয়া ফেলিবেক, তখন আজ্ঞাবহ থাকিবেক না, কেননা বিপদ কালে নম্রতা করা মন্দ, এবং কথিত আছে যে অনুগ্রহ ও দয়াতে শত্রুরা পরাস্ত হয় না, বরং অধিক লোভ করিয়া থাকে।

 হও পদধূলি তার যে করয়ে দয়া। দেও তারচক্ষে ছাই যে করে অসূয়া॥ মিষ্ট ভাষাতে কি ফল কটুভাষা সনে। জাঙ্গার না যায় মর্ম্ম আরার ঘর্ষণে॥

 ৮৬। যে ব্যক্তি স্বীয় বুদ্ধি ও পাণ্ডিত্য প্রদর্শনার্থে জিজ্ঞাসা বিনা অন্যেরদের কথাতে কথা কহে তাহার ঐ মনস্থ একদা মিথ্যা হয়, এবং লোকেরা উহাকে নির্ব্বদ্ধি বোধ করে।

 না দেয় উত্তর বুদ্ধিমান যেই জনা। কেহ তার ঠাঁই কিছু জিজ্ঞাসন বিনা॥ যদি অতি বক্তা আর হও সত্যবাদী। তদর্থে গর্ব্বিতা করা হয়ত অবিধি।

 ৮৭। আমার মধ্যে এক বিষয় আমি সংগোপনে রাখিতাম হজরত সেখ আমাকে প্রত্যহ প্রশ্ন করিতেন যে তোমার ঘাও বোমত বটে, কিন্তু তাহা কথায় জিজ্ঞাসিতেন না আমি বোধ করিলাম সে সকল শরিরের প্রসঙ্গ করা উচিত নহে, এপ্রযুক্ত তাহা কথায় জিজ্ঞাসেন না, বিজ্ঞরা কহিয়াছেন যে ব্যক্তি কথা না বুঝিয়া উত্তর করিবেক তাহার প্রত্যুত্তর সমাপ্ত হইবেক।

 কহিতে উচিত কথা না বুঝ যাবত। মুখমধ্যে জিহ্বা নাহি নাড়িবে তাবত॥ সত্যেতে আটক থাক ভাল তাহা হইতে। মোচন হইবা তুমি মিথ্যার দ্বারাতে॥

 ৮৮। মিথ্যা কহা খড়ে‍্গের আঘাতের ন্যায় হয় যদি আঘাত ভাল হইয়া যায় তথাচ তাহার দাগ দূর হয় না, যথা ইশুফের ভাই একবার নিন্দক হইয়া ছিলেন পরে উহার সত্য কথাতেও কোন ব্যক্তি বিশ্বাস করিত না।

 সত্যবাদি বলি লোকে জানয় যাহারে। কভু কোন দোষ হইলে ক্ষমহ তাহারে॥ মিথ্যুক ও প্রবঞ্চি বলে খ্যাতি হইল যার। সত্য কহিলেও মিথ্যা জানে কথা তার॥ বহু কথা সত্য সদা হয়তো যাহার। এক মিথ্যা কথা বিজ্ঞ না ধরে তাহার॥

 ৮৯। জগতের মধ্যে মনুষ্য সকলের নিকটেই প্রিয় পাত্র ও কুক্কুর অপ্রিয় হয়, কিন্তু বিজ্ঞের দের নিকটে উত্তম কুকুর অকৃতজ্ঞ মনুষ্যের অপেক্ষা উত্তম হয়।

 এক গ্রাস অন্ন মাত্র দিয়া ভুলাইবে। প্রস্তরাদিতেও যদি কুক্কুর তাড়িবে॥ দুষ্ট জনে চিরকাল যদি কর দয়া। করিবে সে দ্বন্দ্ব তবু অল্প কথা নিয়া॥

 ৯০। ইন্দ্রিয়ের আজ্ঞাবহ লোকেরা কৃত বিদ্য হইতে পারে না, ও বিদ্বান্ হইয়া অগ্রগণ্য হয় না।

 যদি বৃষভেরা বহু ভার বাহী হয়। নাহি কর দয়া বহু খায় বহু শোয়। যদি গর্দ্দভের মত বাদ তুমি বল। তার মত লোকানিষ্ট করিতে কেবল॥

 ৯১। ইঞ্জিনেতে লিখিয়াছেন যে হে মর্ত্ত্য যদি তোমাকে ধন দেই তবে তুমি আমার ধ্যানাদি বিস্মৃত করিয়া তাহাতে মোহিত হইয়া যাও ও যদি দরিদ্র করি তবে ক্লেশের হেতু আপন অবস্থার প্রতি ক্রন্দন কর এমত আমার প্রসঙ্গাদি করণের অবসর তুমি কবে প্রাপ্ত হইলা ও আমার ভজনাদি কখন করিলা।

 কখন ধনেতে হও অহঙ্কারে মত্ত। দারিদ্র জনিত ক্লেশ দুঃখে কভু রত॥ সুখেও দুঃখেতে তব হয় এ ঘটনা। পুনঃ ঈশ্বরের কবে করিবে ভজনা॥

 ৯২। ঈশ্বরেচ্ছায় কেহ সিংহাসন হইতে চ্যুত হয় ও কেহ মৎষ্যের উদরেই জীবিত থাকে যথা ফরউনকে সিংহাসন হইতে চ্যুত করিয়াছেন, এবং ইউছপকে মৎস্যেদরে জীবিত রাখিয়াছেন।

ইউছপের মত যদি মৎস্যোদরে থাকে।
তোমার প্রসঙ্গ করে শুভক্ষণ তাকে॥

 ৯৩। যদি তুমি ক্রোধের খড়‍্গকে ধারণ কর তবে উত্তম২ লোকেরাই তোম| হইতে সংগোপনে থাকিবেন, ও যদি কৃপা কপাক্ষ করিতে থাক, তবে মন্দ স্বভাবিরাও সৎস্বভাব হইতে পারে।

 যে ব্যক্তি সুভাব ও ইহ লোকে সৎপথাবলম্বী না হয় সে পরলোকে অত্যন্ত ক্লেশে আবদ্ধ হয়।

বিজ্ঞেরা অজ্ঞেরে সৎ উপদেশ করে।
না শুনিলে রাখে নিজ বাক্য বন্ধ করে॥

 ৯৫। ভাগ্যবানেরা কেহ তাহাদের অবস্থা দ্বারা উদাহরণ করিবার পূর্ব্বে পুরাতন লোকেরদের ইতিহাসাদি শুনিয়া শিক্ষা করেন॥

 যেতে দেখে এক পক্ষি বদ্ধ হয়্যে আছে। অন্য পক্ষি নাহি যাবে সে তণ্ডুল কাছে॥ পূর্ব্ব লোকের দশা শুনি লিখবে নীতি। তবে জগতেতে তব থাকিবে সুখ্যাতি॥

 ৯৬। যাহার বাক্য শ্রবণের ইচ্ছা রূপা শ্রবণ শক্তি নাহি সে কিপ্রকারে শ্রবণ করিবেক? ও যাহাকে সৌভাগ্য রজ্জু আকর্ষণ করে সে কিমতে তথায় গমন না করিবেক।

 ঈশ্বরের মিত্রগণে অন্ধদায় নিশি। সুন্দর দিবস হইতে হয় সুপ্রকাশি॥ সৌভাগ্য শক্তিতে স্ব২ কদাচ নাহি হয়। তাহার কৃপাহি মূল জানিবে নিশ্চয়॥ তাহা হইতে কিবা চাহিব বিচার। সর্ব্বত্রতে তার আজ্ঞা হয় সুপ্রচার॥ সে যাহাকে কবে নীতি নাহি কভু লয়। সে যারে ভুলাবে তার শ্রুতি কথা রয়॥

 ৯৭। সদাচারি দরিদ্র ব্যক্তি অসদচারি রাজা হইতে গরীয়ান্ হয়।

যে দুঃখের পরে সুখ ভাল জান তারে।
তাহা হইতে হয় দুঃখ সুখ পরে॥

 ৯৮। আমার স্বভাব ভাল লাগিবে তোমাকে। নাহি শুভ তুমি নিজ শুভস্বভাবকে॥

 ৯৯। পরমেশ্বর লোকের পাপ দেখিয়া ও গোপন করেন কিন্তু নিকট বাসিরা না দেখিয়াও তাহা রাষ্ট্র করে।

লোক যদি ভবিষ্যতে জানিতে পারিত।
কেহ কেহকেই সুখে থাকিতে না দিত॥

 ১০০। গর্ত্তাদি খনন দ্বারা খাল নির্গত হয় ও পরে প্রাণ পর্য্যন্তকে ক্লেশ দেয়।

কৃপণের হস্ত হৈতে নির্গত না হয়। আশায় থাকয়ে মাত্র ভোগ নাহি লয়॥ দেখিবা তাহার সর্ব্ব ধন এক কালে। যাবে শত্রু হস্তে তারে গ্রাসিবেক কালে॥

 ১০১। নির্ব্বলদিগকে যে ব্যক্তি দান না করে সে সবলের হস্তে পতিত হয়।

 এ নহে উচিত যেবা বটহে সবল। সতত পীড়ন করে দরিদ্র দুর্ব্বল। দুর্ব্বলেরে ক্লেশ নাহি দিবে সাবধানে! তুমিহ অশক্ত হও সবলের সনে।

 ১০২। বুদ্ধিমানেরা আত্মীয় মধ্যে দ্বন্দ্ব ও কদাচার দেখিলে তাহা হইতে পৃথক হইয়া যায়েন, ও ঐক্যতা দৃষ্ট করিলে সম্মিলিত হইয়া বৈসেন কেন না তৎকালে পৃথক হইয়া থাকাই ভাল ছিল ও এক্ষণে সম্মীলনে সুখ বটে।

 ১০৩। মাঠ হইতে চরণের স্থান ভাল হয়॥

 কিন্তু অশ্ব হস্তে তাহার প্রবোধ রজ্জু নয়॥

 ১০৪। এক যোগি পরমেশ্বরের নিকট গিয়া প্রার্থনা করিত হে জগৎ কর্ত্তা পাপি লোকের দের প্রতি দয়া কর সল্লোকেরদের প্রতি তুমি স্বয়ং কৃপা করিয়াছ,এবং উহাদিগকে উত্তম ও সদ্ রূপে জাত করিয়াছ, জামার উপর চিত্র বিচিত্র করণ ও হস্তেতে রত্নখচিত অঙ্গুরি ধারণ প্রথমে যমসেদ নামক ব্যক্তি চালাইয়াছিল লোকেরা উহাকে জিজ্ঞাসিলেন যে বাম হস্তকে কিজন্যে সুশোভিত করিয়াছ দক্ষিণ হস্ততে। উত্তম উহা অপেক্ষা উত্তর করিল যে দক্ষিণ হস্ত স্বয়ং পবিত্র।

 ফেরেস্ব কহিলেক খরাগার পাসে। চীন‍্চিত্র করে ইহা লিখয়ে বিশেষে॥ হে ধীমান পাপি দের ভাল চিন্তা কর। যেহেতু সতেরা হয় স্বতঃ গুণাকর॥

 কোন মান্য লোকের নিকটে জিজ্ঞাস্য হইল যে পবিত্র ও উত্তমতা দক্ষিণ হস্তের সুপ্রকাশ আছে তথাচ যে লোকেরা বাম হস্তে অঙ্গুরী ধারণ করে, ইহার কারণ কি? তিনি কহিলেন যে বুদ্ধিরত্নে বিভূষিত জনেরা সংসারীয় বেশ ভূষাতে নিরাশ থাকেন।

ভাগ্য ও আহারাদির সৃষ্টি কৈল যেই।
রাজ্য বিদ্যা মান্য হয় তাহাদের সেই॥

 ১০৫। ধন ও জীবনের আশাকে যে ব্যক্তি পরিত্যাগ করিয়াছে সেব্যক্তি রাজাদিগকে উপদেশ করার যোগ্য পাত্র।

 বিরক্তের পদতলে ফেল তুমি ধনে। কিবা শিরে রাখ অস্ত্র বধের কারণে॥ ইহাতে সে তুষ্ট কিবা ভয় না পাইবে। বিরক্তের নিদর্শন এমতে জানিবে॥

 ১০৬। রাজা দৌরাত্ম্য কারিদের বিনাশার্থ ও কোতয়াল উৎপাত কারক দুষ্টেরদের দমনার্থ ও কাজি চোর ইত্যাদির ভয় হইতে লোকেরদের পরিত্রাণার্থ হয়েন কেননা দুই শত্রু পরস্পর স্বীক্বত হইয়া কদাচ কাজীর নিকটে গমন করে না, বরং তৎকালে ইহা তাহাদের মনেও হয় না।

 দেওন তোমার যদি স্থিরীকৃত হয়। সাদ ও দুঃখি হওয়া বিনা তাহা দেও॥ দেখ যারা ন্যায্য কর দিতে ত্রুটি করে। লয় তাহা বল দ্বারা প্যাদা গিয়া দ্বারে॥

 ১০৭। সকল লোকের দন্ত আম বস্তুতে আরোষ্ট হইয়া থাকে কিন্তু কাজীদের দন্ত মিষ্টেতে আরোষ্ট হয়।

 কাজীর জন্যেতে, যদি ঘুষ মতে, পঞ্চখীরা দেহ তত্র। তোমার কারণে, করিবে প্রমাণে, তরবুজের শত ক্ষেত্র॥

 ১০৮। ব্যভিচারিণী বৃদ্ধা স্ত্রী দুষ্কর্ম্ম হইতে ও কর্ম্মচ্যুত কোতয়াল লোকদিগকে পীড়া দেওন হইতে ক্ষান্ত থাকন বিনা আর কি করিবেক।

 যুবাকালে ক্ষান্ত হয় সংসার হইতে। তাহাকেই মানি ধন্য ঈশ্বরের পথে॥ বৃদ্ধ হইলে কাজেই সে উঠিতে না পারে। এতদর্থে প্রশংসা না করিও তাহারে॥ যুবাকালে কামে ক্ষান্ত থাকন উচিত। বৃদ্ধের সহজে লিঙ্গ না হয় উত্থিত॥

 ১০৯। কোন নীতিজ্ঞ ব্যক্তির নিকট লোকেরা জিজ্ঞাসা করিলেন যে জগদীশ্বর কত২ নামবন্ত ও ফলবন্ত বৃক্ষের সৃষ্টি করিয়াছেন, কিন্তু কাহাকে ত্যাজ্য বলেন নাই, ও ছরব বৃক্ষ যে নিষ্ফল তাহাকে ত্যাজ্য বলিয়া থাকেন ইহার কারণ কি, উত্তর করিলেক ঐ বৃক্ষ বসন্ত ও নিদাঘের ব্যাপ্য হয় কেননা তখন নব২ পল্লবে বিভূষিত ও প্রফুল্লিত না হইয়া পত্রাদি সরিয়া একদা মৃত কল্প হইয়া যায়, আর ছবব বৃক্ষের এ দুই অবস্থা নাই, তাহার সর্ব্বদা প্রফুল্লতা থাকে, আর ত্যাগিরদের নিদর্শন এই বটে।

 যাহা তুমি প্রাপ্ত হও ইহা না বুঝিবে। যে ইহা চিরকাল পর্য্যন্ত রহিবে॥ যদি হও ধনি দান কর বৃক্ষ সম। নও হও ত্যাগী ছবব বৃক্ষ সম॥

 ১১০। দুই ব্যক্তি আক্ষেপকে অন্তরের মধ্যে লইয়া পরলোক গত হয়েন প্রথম যে ধনস্বত্বে ও ভোগ করে না, ও দ্বিতীয় যে বিদ্যা জানিয়া তদসারী হয় না।

 বিদ্বান ও পণ্ডিত যদি বটয়ে কৃপণ। লোক তায় কহে সদা নানা দোষ গণ॥ শত পাপে পাপী ব্যক্তি যদি দানী হয়। দানে তার পাপগণে ঢাকিয়া রাখয়॥

সমাপ্তঃ।

এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।