মধ্যাহ্নে।

শরতের দ্বিপ্রহরে,  সুধীর সমীর-পরে
জল-ঝরা শাদা শাদা মেঘ উড়ে যায়;
ভাবি, একদৃষ্টে চেয়ে—  যদি ঊর্দ্ধ পথ বেয়ে
শুভ্র অনাসক্ত প্রাণ অভ্রভেদি’ ধায়!
ঝরে যায় অশ্রুজল,  বেদনার কল-কল,
অধীর বিদ্যুৎ-দীপ্তি, দৃপ্ত গরজন!
বাসনা-বন্ধন ছিঁড়ে,  স্নিগ্ধ নীলিমার নীরে
ধীরে ধীরে শূন্য ঘিরে করি সন্তরণ।

অতি স্তব্ধ বন-ভূমে  ছায়া আছে শুয়ে ঘুমে,
সানুতলে সূর্য্যকার অলসে লুটায়;
তুঙ্গ শৃঙ্গ-শিরে নীল  অতি গাঢ়, অনাবিল;
সুগতের ধ্যান যেন জগৎ ফুটায়।
পাখা দিয়ে বিশ্ব জুড়ে,  বসে আছে শৈল চূড়ে
অতিকায় প্রশান্ততা; স্তব্ধ চরাচর।
এড়াইয়ে দুঃখ শোক,  স্বর্গ আর পরলোক,
স্থাবর জঙ্গম আজি অজর অমর।


মিলাইয়ে গেছে আধা— জল-ঝরা মেঘ শাদা,
শারতের দ্বিপ্রহরে তুঙ্গ শৈল-গায়।
গাঢ় নীলে শাদা দাগ্‌ আরো মিলাইয়ে যাক্‌;
আমি যাই মিশে, ভেসে, সীমাহীনতায়।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থ, আশা, বাসনার ভালবাসা,
ঝরে যাক্‌, মরে যাক্‌, আত্ম-বেদনায়।
চরণে বন্ধন নাই,  পরাণে স্পন্দন নাই;
নির্ব্বাণে জাগিয়া থাকি স্থির চেতনায়।