পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রস্তাবনা
৪১

 অয়নদেবকে আমি দেখালাম চিনেমাটির মূর্তি থেকে ধাতুর মূর্তিও দুধপান করছে হৈ-হৈ করে।

 রাতে ‘এখন বাংলা’ এবং তারপর ‘তারা’র স্টুডিওতে হাজির হলাম। সেখানে সঞ্চালক ও দর্শকদের প্রশ্নের উত্তরের ফাঁকে ফাঁকে দেখাতে হলো, ঘোড়া থেকে সাপ সব্বাই দুধ, ঠাণ্ডা পানীয়, কেরসিন—সব পান করছে। খাচ্ছে না শুধু আপেল-আঙুর।

 দেবমূর্তিরা যখন ‘দুধপান’-এ ব্যস্ত, তখনই আরব সাগরের জল মিষ্টি হয়ে গেছে—গুজবে সারা মুম্বাই নাচলো। সুফি সন্ত মকদুম শাহের কৃপায় নাকি এমনটা ঘটেছে। সর্বরোগহর এই মিষ্টি জল বোতলবন্দি করতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। লবণাক্ত সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ কমে সাদা জল (plain water) হয়ে যায় জলে ফ্লোরাইড ও ক্লোরাইডের যৌগ বৃদ্ধি হলে। এই প্রাকৃতিক ঘটনার মধ্যে অপ্রাকৃতিক ঘটনাকে আবিষ্কার করার মতো অপ্রকৃতিস্থ শিক্ষিত মানুষের আজও অভাব ঘটেনি ভারতে।

 মোবাইল ভূত থেকে লাইট ভূতের আঁচড়ে দেওয়ার মত ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গ তোলপাড় হয়। ভূতের ভয়ে বর্ধমানের ‘বেনাগ্রাম’-এর সব মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালায়।

 এতসব তোলপাড় করা ঘটনা দেখে মনে হয় ভারতের শিক্ষিতরা কি মধ্যযুগের দিকে ফিরছেন? এতসব অলৌকিক কাণ্ডকারখানাগুলো সবই কি আকস্মিক? নাকি এটাই ‘মূর্খ’-ভারতের ধারাবাহিকতা?

মানুষ ও দেবতা

এককালে অসহায় মানুষ প্রকৃতির শক্তিকে ভয় ও শ্রদ্ধা করেছে। জল, ঝড়, বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র, বন্যা, আগুন, পাহাড়-পর্বত, মাটি সমস্ত কিছুরই প্রাণ আছে বলে বিশ্বাস করেছে, বসিয়েছে দেবত্বের আসনে। সুর্য, চন্দ্র, পৃথিবী, বৃহস্পতি, শনি প্রভৃতি জড় নক্ষত্র ও গ্রহগুলোর পুজো করেছে জীবন্ত দেবতা হিসেবে। মানুষের জীবনে সম্পদ হিসেবে প্রবেশ করেছে বৃক্ষ, অরণ্য, গরু, ছাগল, শুয়োর আরও নানা ধরনের গৃহপালিত জন্তু। এরাও দেবতা হিসেবে পুজো পেয়েছে। শিক্ষা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক মানুষের কাছেই এইসব দেবতারা দেবত্ব হারালেও সবার কাছে হারায়নি।

 প্রাচীন মানুষ জীবাণুর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত না থাকার দরুন অসুখকে কখনও বলেছে পাপের ভোগ, কখনও বা বলেছে অশুভ শক্তির ফল। তন্ত্র-মন্ত্র, মাদুলি, যাগ-যজ্ঞ, জলপড়া, তেলপড়া, ঝাড়ফুঁক, স্বপ্নাদিষ্ট ওষুধ রোগের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আজও এই ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুন্নত দেশে এবং কিছু কিছু