পাতা:আনন্দমঠ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
আনন্দমঠ

 ক। তোমারই মুখে শুনিয়াছি যে, সন্তানধর্ম্মের এই এক নিয়ম যে, যে ইন্দ্রিয়পরবশ হয়, তার প্রায়শ্চিত্ত মৃত্যু। এ কথা কি সত্য?

 ভব। এ কথা সত্য।

 ক। তবে তোমার প্রায়শ্চিত্ত মৃত্যু?

 ভব। আমার একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত মৃত্যু।

 ক। আমি তোমার মনস্কামনা সিদ্ধ করিলে, তুমি মরিবে?

 ভব। নিশ্চিত মরিব।

 ক। আর যদি মনস্কামনা সিদ্ধ না করি?

 ভব। তথাপি মৃত্যু আমার প্রায়শ্চিত্ত; কেন না, আমার চিত্ত ইন্দ্রিয়ের বশ হইয়াছে।

 ক। আমি তোমার মনস্কামনা সিদ্ধ করিব না। তুমি কবে মরিবে?

 ভব। আগামী যুদ্ধে।

 ক। তবে তুমি বিদায় হও। আমার কন্যা পাঠাইয়া দিবে কি?

 ভবানন্দ সাশ্রুলোচনে বলিল, “দিব। আমি মরিয়া গেলে আমায় মনে রাখিবে কি?”

 কল্যাণী বলিল, “রাখিব। ব্রতচ্যুত অধর্ম্মী বলিয়া মনে রাখিব।”

 ভবানন্দ বিদায় হইল, কল্যাণী পুথি পড়িতে বসিল।


পঞ্চম পরিচ্ছেদ

 ভবানন্দ ভাবিতে ভাবিতে মঠে চলিলেন। যাইতে যাইতে রাত্রি হইল। পথে একাকী যাইতেছিলেন। বনমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, বনমধ্যে আর এক ব্যক্তি তাঁহার আগে আগে যাইতেছে। ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে হে যাও?”

 অগ্রগামী ব্যক্তি বলিল, “জিজ্ঞাসা করিতে জানিলে উত্তর দিই—আমি পথিক।”

 ভব। বন্দে।

 অগ্রগামী ব্যক্তি বলিল, “মাতরম্।”

 ভব। আমি ভবানন্দ গোস্বামী।

 অগ্রগামী। আমি ধীরানন্দ।