পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

তার হৃদয়ের প্রেম দেহ প্রাণ মন সব নিয়েই জাগবে, মনের খোঁটায় বাঁধা হয়ে হৃদয়ের গণ্ডীতেই আটকে থাকবে না, দেহের ক্ষুধার রাজ্যেও সে পঙ্কজিনী ফুটে উঠবে দেহের মিলন-রসে শতটি প্রস্ফুট দলে। সেইটেই স্বাভাবিক, প্রকৃতির নিয়মই যে তাই। কুলের বংশের গোত্রের বাহির থেকে তাজা নতুন রক্ত না এলে জাতি নাকি সুস্থ সবল হয়ে ওঠে না; বেশ কথা, কিন্তু এ যেমন একটা নিয়ম, তেমনি হৃদয়ের প্রাণের ও দেহের রাজ্যের আরও হাজারটা নিয়ম যে রয়েছে যার বশে একজন আর একজনকে না টেনে না ভালবেসে পারে না; সে টান ব্যর্থ করলে স্নায়ুমণ্ডল আঘাত পায়, ছিঁড়ে যায়, মানুষ পাগল হয়ে আত্মঘাতী হয়, হিষ্টিরিয়ার রুগী হয়ে সারা জন্ম থাকে। অতি জটিল সুকুমার যন্ত্র হচ্ছে মানব সত্তা—তার মন প্রাণ হৃদয় দেহময় এই চতুর্ম্মুখ চেতনা। একটা মাত্র নিয়মকে কঠিন rigid করে জীবনের আরও অসংখ্য ধারাকে অবহেলা ও দমন করতে গিয়ে ট্র্যাজেডিই বাড়ে,—জীবন ও সমাজ দেহ বিষিয়ে ওঠে। রক্তের সম্বন্ধ যেখানে নিকট সেখানে বিবাহকে অবৈধ করে যেমন একদিক দিয়ে রেখেছি আবার অন্যদিক দিয়ে কৌলিন্যের লোভে ক্রমশঃ দু’ চারটি পরিবারে বিবাহ করে সেই নিয়মেই ব্যভিচার আমরা নিত্য নিয়ত করছি। কে জানে বাঙ্গালী জাত হয়তো তাইতেই এত নিস্তেজ দুর্ব্বল ও ক্ষীণপ্রাণ হয়ে পড়েছে কি না? কূপমণ্ডুক এ জাতির বিবাহপ্রথা এত সঙ্কীর্ণ, ছত্রিশ জাতের আর শত শত উপজাতের গণ্ডীতে গণ্ডীতে এমন করে বাঁধা বলে

৯৬