পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

তারিণী বাবুদের বাড়ীতে, তা’ আগেই বলেছি। মাসান্তে এক আধবার রবিয়া বা আস্রফিকে সঙ্গে নিয়ে আমি মাকে দেখে আসতুম। একবার পাল্কী করে গিয়ে ফিরবার পথে রাত হয়ে যায়, একে অন্ধকার রাত, তায় উঠলো প্রচণ্ড ঝড় ও মুসলধারে বৃষ্টি। দরবারীরা পাল্কী নিয়ে দাড়োয়া নদীর ধারে এসে দেখলো নদীতে বিপুল বাণ এসেছে, একূল ওকূল ভরা দুর্ব্বার তরঙ্গক্ষুব্ধ ঘোলা জল, তাতে নামে কার সাধ্য। তখন মাঠে ধান ক্ষেতের আলে আলে সেই দুর্ভেদ্য অন্ধকারে কোন গতিকে বিদ্যুতের আলোয় পথ দেখে দুই ক্রোশ দূরে ব্রিজের ওপর আসা গেল। পাল্কী সমেত অতি সন্তর্পণে ব্রিজ পার হয়ে বাড়ী পৌছান গেল, তখন রাত বারটা। আর একবার এমনি দুর্য্যোগে পড়েছিলুম বাবার সঙ্গে খুলনায়। বাগেরহাটে কোথায় এক গ্রাম্য স্কুলে বাবা গেছিলেন পারিতোষিক বিতরণে সভাপতি হয়ে, আমি গেছিলুম সঙ্গে। ফিরতি পথে থালে থালে ভরা মেঠাই-মণ্ডায় আমাদের নৌকো বোঝাই করে আধপথে আসতে না আসতে ঝড় উঠলো। নৌকা ডুবু ডুবু দেখে এক আঘাটায় নৌকো বেঁধে আমাকে পাল মুড়ি দিয়ে ডাঙ্গায় বসিয়ে রাখা হ’লো, ঝড় থামলে আমরা ভিজে তোয়ালে পরে বাড়ী এলুম। সেই থেকে কেমন এক রকম হয়ে গেছে; সত্তার স্নায়ুমণ্ডলে কোথায় একটা ভয়ের ছাপ পড়ে আছে, ভিজে পূবে বা উত্তরে হাওয়া অন্ধকার রাত্রে মাঠের পথে বইলেই কেমন একটা অসহায় ভাব মনে জাগে, বুক গুর গুর করতে থাকে।

১১১