পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

 দ্বিতীয়বার রোগ সেরে মা চলে গেলেন। স্নিগ্ধ ঝির ঝিরে ঊষায়, মহুয়ার গন্ধে, মহিষ চড়া মেঠো রাখালের বাঁশীতে, মাঠ ছাওয়া পলাশের রক্তিমায় আরো দু’তিন বছর আমার কেটে গেল। ইতিমধ্যে বিলেত থেকে দাদা দেশে এলেন, তার পরে এলেন সেজদা, সব শেষে এলেন মেজদা’। যতদূর মনে আছে দেশে এসে মেজদাই আগে দেওঘরে আসেন, দাদা আসেন সব শেষে। সেজদা শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে দাদাবাবু রাজনারায়ণ বসুর খুব মনের মিল হয়েছিল, মেজদা কিন্তু বাঙলা ভাষাকে monkeys jabber বলাতে দাদাবাবুর সঙ্গে তাঁর ভাব গোড়াতেই চিড় খেয়ে গেল। মেজদা ও সেজদা দুজনেরই সঙ্গে আমি প্রথম দেখায় লুকোচুরি খেলেছি, কত ফষ্টি-নষ্টী করেছি, সমানে সমানে ইয়ার্কি দিয়েছি। মেজদা ঢাকার ব্রাহ্ম কৈলাসচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়েকে বিয়ে করায় অসবর্ণ বিয়ের বিরোধী দাদাবাবু আর তাঁর মুখ দেখেন নি। পুজোর ছুটিতে সেজদাই বছর বছর আসতেন আর আমাকে দেশপ্রীতি ও দেশসেবার সম্বন্ধে বোঝাতেন।

 এত ঘটনার মধ্যেও অন্তঃসলিলা ফন্তু ধারার মত আমার প্রথম প্রেম সেই আত্মীয়া প্রণয়িণীকে ঘিরে অবাধে অবিচ্ছেদে তখনও বইছিল। তারাও পূজোর সময়ে দেওঘরে আসতো আর আমিও দূর থেকে তাকে দু’চোখ ভরে দেখতুম; তার উপেক্ষা ও অবহেলার আঘাতে বসে বসে দু’চোখে ধারা ফেলতুম ও কবিতা লিখে সে দুঃখ লাঘব করতুম। আমার মাস্‌তুত ভাই

১১২