পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

চেয়ে দেখছি, হঠাৎ আমার নাম ধরে কোমল নীচু গলায় কে ডাকলো। ফিরে দেখি পাশে গা-ঘেঁসে সে দাঁড়িয়ে! আমি আর থাকতে পারলুম না, তাকে কাছে টেনে নিয়ে কপালে একটি চুমো খেয়ে বললুম, “কি এত সকালে ছাদে যে?” হঠাৎ আমার বাহুর বাঁধনে তার দেহ আড়ষ্ট হয়ে উঠলো, মুখখানি ভয়ে কেমন বিবর্ণ হয়ে গেল, শঙ্কাতুর চোখ দুটি ছাদের দরজার দিকে আশঙ্কায় বিরল হয়ে রইল চেয়ে। সেই দিকে ফিরে দেখি ছাদের সিঁড়ির দরজায় তার মা মুখখানা কালে। গম্ভীর করে এসে বসে আছে।

 মেয়েকে নিয়ে তিনি নেমে গেলেন, বলির পশুটির মত আড়ষ্ট শঙ্কিত পায়ে সে সঙ্গে গেল। সেই দিন দুপুর বেলা সে-বাড়ী ছেড়ে যাবার সময় দেখলুম একটা অন্ধকার ঘরে খালি তক্তপোষের উপর উপুড় হয়ে পড়ে সে কাঁদছে। সেই আমাদের শেষ ছাড়াছাড়ি, অথচ কিই বা ঘটেছিল যার জন্যে মা হয়ে এত বড় শাস্তি ও গঞ্জনাটা তাকে দিল! আমরা এর আগে সেই বার তের বছরের ভালবাসায়ও কখন এতদূরও এগোই নি, দু’জনকে দুজনে প্রায় দেহসম্পর্ক শূন্য হয়ে তবু নিবিড় একাত্মতায় ভালবেসেছিলুম। অবশ্য এটা ঠিকই যে, এসব ক্ষেত্রে ভালবাসা মনের বা হৃদয়ের গণ্ডীতেই আটকে থাকে না, অবসর ও সান্নিধ্য পেলেই ক্রমে ক্রমে প্রাণে—শেষে স্নায়ুতে তরঙ্গ তোলে, পরিণামে দেহেতেও গড়িয়ে আসে। সেই সন্তানকে কলঙ্ক থেকে রক্ষা করতে আগে থেকেই মা-বাপ

১৩৮