পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

স্বজনের সঙ্গে দেওঘরে এসেছে। দেখা আমাদের বড় একটা হ’তো না, কারণ তার মায়ের সতর্ক দৃষ্টি এড়িয়ে দু’জনে একান্ত হবার কোন উপায়ই আর ছিল না সেই কলকেতার ছাদের ঘটনার পর। তাই রোজ আমি লুকিয়ে একটা করে চিঠি দিতুম আর একটা করে তার মধুমাখা উত্তর পেতুম। সে লিখতো নিতান্তই সাদাসিধে চিঠি, তার গদ্যময় মোটা মনের সহজ ভাষায় একটু আদর সোহাগের চিনি মাখিয়ে চলনসই মিঠে করে লেখা দশ বারটি লাইন। তারই প্রতি ছত্রে প্রতি বর্ণে আমার চোখে কি মধুই যে ঝরতো, বার বার তাই পড়ে চোখের জল রাখতে পারতুম না। এই সময় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলুম দু’জনে পরস্পরের জন্যে আজীবন চিরকৌমার্য্য নিয়ে আশা পথ চেয়ে থাকবো, একটি সুদূর ভবিষ্যৎ মিলনের সুদিনের প্রতীক্ষায়। এই চিঠির একখানি একদিন দৈবাৎ ধরা পড়ে গেল।

 কাপড় ছাড়তে গিয়ে স্নানের ঘরে সে বুঝি ফেলে এসেছিল আঁচলের খুঁটে বাঁধা চিঠি। মুখ অন্ধকার করে তার বাপ এসে আমায় যৎপরোনাস্তি তিরস্কার করলেন, তার চিঠিগুলি ফিরে চাইলেন। আমি তখনই পোষ্ট অফিস থেকে টাকা ক’টি তুলে নিয়ে আমার ঘর-ছাড়া নিরুদ্দেশ যাত্রার পথে পা বাড়ালুম। যাবার সময় বড় মামাকে লিখে গেলুম—আমায় যেন খোঁজা না হয়, কারণ আমি ইহা জীবনে আর ঘরে ফিরবো না। আস্‌রফিয়াকে নিয়ে জসিডি ষ্টেশনে গিয়ে প্রথমে আপ ট্রেনে

১৪৫