পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

ছিল আমার বাগানের মালি আর শিকারের সঙ্গী। তার ফরসা ছিপ্‌ছিপে বোনটির ছিল তরুণ সৌখীন বাঙালী বাবু আমার ওপর ভারি লোভ, ঘর সংসারের কাজের অছিলায় সে বার বার ঘর-বাহির করতে শুধু আমাকে ঐ ফাঁকে দুচোখ ভরে দেখবার জন্যে। বৈধব্যের নিরস গৃহকর্ম্মরত এক ঘেয়ে জীবনে সে বোধহয় ঠিক মনের মানুষ কখনও পায় নি, ধনী বাঙালী যুবকের রহস্যময় অজানা সঙ্গ তার প্রাণকে হাতছানি দিয়ে সদাই ডাকতো, সেই ডাকের টানের সুখে অস্থির হয়ে চঞ্চল পদে তৃষিত নেত্রে তার আসা-যাওয়া ও দুয়ার ধরে আমার দিকে চেয়ে থম্‌কে থাকার আর অন্ত ছিল না; তার মন ভোলাবার মুচকি হাসিটুকু কৃষিকর্ম্মরত আমাকেও তার দিকে না চাইয়ে ছাড়তো না। গ্রামা বিধবা গুজরাটী বালিকার এই নীরব আত্মনিবেদন আর আমাদের দু’জনের ব্যর্থ ব্যাকুল চাওয়া-চাওয়ি সেই ভাঙা পাঁচিটাকে আড়াল করে কি গুঞ্জনই তুলতো!

 এক এক দিন খুব ভোরে চারটের সময় উঠে আমি বের হতুম শিকারে। মাধব রাও আমাকে একটি ব্রিচলোডিং বন্দুক এ একটা ছোট্ট স্পোর্টিং রাইফেলও দিয়েছিলেন। একটা বেতের বাস্কেটে চায়ের সরঞ্জাম ও Sandwitch নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়তুম মাঠের পথে। তখন হয়তো দিনের আলোর আভাষও জাগে নি, তবু শেষ রাতের অন্ধকারে আমার দূর পদধ্বনির সাড়া পেয়ে গাছের কালো তাল পাকানো ছায়ামূর্ত্তির মাঝ থেকে পাখীরা দু’ একজন সাড়া দিচ্ছে ও পাখা ঝাপটাচ্ছে।

১৬৮