পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯৮
আ মা র বা ল্য ক থা

 তখনকার কালে অক্ষয়কুমার দত্ত আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এঁরা বঙ্গভাষার দুই স্তম্ভ ছিলেন। যখন তাঁরা সেই ভাষা গড়ে তুললেন তা সংস্কৃতবহুল হয়ে দাঁড়াল। বিদ্যাসাগর মহাশয় ও অক্ষয়বাবু উভয়েই সংস্কৃত ভাষাভিজ্ঞ ও সংস্কৃত ভাষানুরাগী ছিলেন, সুতরাং তাঁরা বাঙলাকে যে পরিচ্ছদ পরালেন তা সংস্কৃতের অলঙ্কারে পরিপূর্ণ হল। অক্ষয়বাবুর লেখার আর এক নমুনা আরম্ভে দিয়েছি, আর একটি নমুন। এখানে দিচ্ছি, তা হতেই এ কথার যাথার্থ্য সপ্রমাণ হবে।

সূর্যোদয়ের বর্ণনা

 “অনন্তর বিশ্বলোচন তিমিরমোচন তরুণ বিভাকর, জবাকুসুমসদৃশী আশ্চর্যময়ী মহীয়সী মূর্তি ধারণপূর্বক, পূর্ব দিকস্থিত সুরাগ-রঞ্জিত প্রবাল-মণ্ডিত সুরম্য প্রাসাদ হইতে ক্রমে ক্রমে বহির্গত হইতেছে এবং স্বকীয় সুবর্ণময় রশ্মিজাল বিকীর্ণপূর্বক, নবপল্লব-পরিবেষ্টিত সমুন্নত তরুশিখা সকল অতি মনোহর হিরন্ময় মুকুটে ভূষিত করিতেছে এই আশ্চর্য দর্শন দর্শন করিয়া ইত্যাদি।”

 “১৮৪৩ হইতে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত অক্ষয়বাবু সুদক্ষতাসহকারে তত্ত্ববোধিনীর সম্পাদন কার্যে নিযুক্ত ছিলেন, ইতিমধ্যে অর্থোপার্জনের কত উপায় তাঁর হস্তের নিকট এসেছে, তিনি তাহার প্রতি দৃক্‌পাতও করেন নাই। এই কার্যে তিনি এমনি নিমগ্ন ছিলেন যে, এক একদিন জ্ঞানালোচনাতে ও তত্ত্ববোধিনীর প্রবন্ধ লিখতে সমস্ত রাত্রি অতিবাহিত হইয়া যাইত, তিনি তাহা অনুভব করিতে পারিতেন না।”

 “অক্ষয়বাবু আমাদের ব্রাহ্মমাজের জ্ঞানমার্গের প্রহরীরূপে দণ্ডায়মান ছিলেন। তাঁহারি প্রভাবে ব্রাহ্মধর্ম অগ্রে বেদান্তধর্ম ছিল। ব্রাহ্মগণ বেদের অভ্রান্ততায় বিশ্বাস করতেন। অক্ষয়কুমার দত্ত মহাশয় এই উভয়ের প্রতিবাদ করিয়া বিচার উপস্থিত করেন। প্রধানতঃ তাঁহারি প্ররোচনাতে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর উক্ত উভয় বিষয়ে গভীর চিন্তা ও শাস্ত্রানুসন্ধানে প্রবৃত্ত হন। অবশেষে বহু