পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর (ছোটকাকা)

 ছোটকাকার কাছে আমরা অনেক সময় যেতুম। তিনি গৌরবর্ণ তেজীয়ান্ সুশ্রী পুরুষ ছিলেন কিন্তু কড়া মেজাজের লোক বলে মনে হত, আমরা তাঁকে ভয় করে চলতুম। তাঁর বৈঠকখানায় নানা রকম লোভনীয় জিনিস ছড়ান থাকত। একবার মনে আছে ছোট ছোট ছর্‌রা-ভরা মকমলের কাপড় মোড়া একরকম সর্পাকৃতি কাগজ চাপা তাঁর লেখবার টেবিলে ছিল, তার উপর আমার দৃষ্টি পড়ল। কাপড় ঢাকার ছিদ্র দিয়ে গুলিগুলো ঝরে পড়ছে, তাই এক মুঠা কুড়িয়ে নিয়েছিলুম। একটু পরে আমায় তলব পড়ল, চোরামাল শুদ্ধ ধরা পড়ি আর কি! তখন কি করি সীসার গুচ্ছ মুখে পুরে রেখে ছোটকাকার কাছে হাজির। তার কিয়দংশ গলাধঃকরণ হয়েছিল কি না মনে নাই, আর গেলবার দরুণ পরে কোন অসুখ ভোগ করতে হয়েছিল কিনা বলতে পারি না।

 ছোটকাকা দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে বিলাত যাত্রা করেছিলেন। তিনি সেখান থেকে তাঁর আত্মীয় বন্ধুদের যে সকল চিঠিপত্র লিখতেন তা দেখে বোধ হয় তিনি সে দেশে বেশ আমোদে ছিলেন, আর তাঁর প্রবাসকালে ইংলণ্ড, স্কটলণ্ডের নানা স্থানে ভ্রমণ করে ব্যাড়াতেন। তাঁর রূপ লাবণ্যের দরুণ তিনি সাহেব বিবিদের, বিশেষতঃ বিবিদের অতি প্রিয়পাত্র ছিলেন, প্রবাস থেকে স্বদেশে সহজে ফিরতে চাইতেন না। তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তাঁর পিসতুত ভাই চন্দ্রবাবু তাঁকে দেশে ফেরবার জন্য বিশেষ অনুরোধ করে পত্র লেখেন, তাতে তাঁকে এইরূপে লোভ দেখাচ্ছেন—

 “আগামী মাসে অক্সফোর্ড কেম্ব্রিজের আদর্শে উচ্চ শিক্ষা বিধান উদ্দেশে কলিকাতায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবে, তাহাতে তুমি প্রবেশ করিয়া তোমার ইচ্ছামত বিদ্যাশিক্ষা করিতে পারিবে।