পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা
৭৫

যাঁদের নাম স্মৃতি মাত্রই রয়ে গিয়েছে কিন্তু এই যে বন্ধুতার কথা বলছি এ এখনো পর্যন্ত অক্ষুন্ন রয়েছে।

 আমি যাঁর কথাগুলি এই লিখছি আমার সেই প্রিয়সুহৃৎ এ সময়ে রোগশয্যায় শয়ান। ৫, ৬ বৎসর ধরে তিনি উৎকট পীড়ার কষ্ট পাচ্ছেন কিন্তু পীড়ার যন্ত্রণায় তাঁর স্বাভাবিক স্ফূর্তি কখনো ম্লান হতে দেখিনি। কোন দিন একটু ভাল কোন দিন মন্দ, এই উত্থানপতনের মধ্যে তিনি ধীরভাবে দিনযাপন করছেন। এই দুঃখ কষ্টে তাঁর ধৈর্য অসীম, তাঁর বীর্য ও সাহসের হ্রাস নাই। তাঁর কি রোগ, চিকিৎসায় কি কি প্রয়োজন, তিনি এ সকলি তন্ন তন্ন করে জেনেছেন আর ডাক্তারেরা ঔষধ পথ্য যা কিছু ব্যবস্থা করেন, যাতে তার তিলমাত্র ব্যতিক্রম না হয় তিনি নিজেই তার তত্ত্বাবধান করেন। বলতে গেলে তিনি আপনিই আপনার চিকিৎসক, আপনি ধাত্রী। আমার একজন ইংলণ্ডপ্রবাসী বন্ধু এদেশে এসে তাঁর এই অবস্থা দেখে বলছিলেন, “তারক যেন যমের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন”,—সত্যই করছেন—যমের সঙ্গে যুদ্ধ করেই তিনি এতদিন পর্যন্ত জীবিত রয়েছেন।

 ডাক্তার Lukis বলতেন, “পালিত কেবল তাঁর Will-powerএর জোরে বেঁচে আছেন— আমাদের ডাক্তারি শাস্ত্রের সবই যেন উলটে দিয়েছেন।”

 মৃত্যু আসুক তাতে তাঁর কোন ভয় নাই, কেবল ভয় এই যে, যে মহৎকার্য সমাধা করতে তিনি উৎসুক, পাছে মৃত্যুতে সে কাজের কোন ব্যাঘাত হয়। তিনি তাঁর স্বোপার্জিত প্রভূত ঐশ্বর্য দেশের কল্যাণব্রতে উৎসর্গ করেছেন, তা কারো অবিদিত নাই। আমাদের দেশে যাতে বিজ্ঞান-শিক্ষার প্রচার হয়, বিজ্ঞান বলে যাতে কৃষিশিল্পের উন্নতি এবং ঐ সঙ্গে দেশীয় লোকের অর্থোপার্জনের সহস্র দ্বার উন্মুক্ত হয়, এই তাঁর আন্তরিক ইচ্ছা। তিনি প্রথমে তাঁর ধনবল একত্র করে জাতীয় শিল্পবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সহায়তা করেন, পরে যখন সেই বিদ্যালয়ের