পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা
৮৯

কাছে একটি ছোট্ট নদী ছিল, তাতে আমরা কেহ কেহ বোটে করে ব্যাড়াতে বেরতুম। মনে আছে একবার আমি কৌতুকক্রমে তাঁর মনে ভারি আঘাত দিয়েছিলুম। তিনি আমাকে একটি ফুল উপহার দেন—সযত্নে আমার বুকের উপর কোটে পরিয়ে দিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে ফুলটি শীঘ্র শুকিয়ে গেল। কে একজন জিজ্ঞাসা করলেন—“এর মধ্যে ফুল শুকিয়ে গেল—এর কারণ কি?” আমি উত্তর দিলুম, ‘ভিতর থেকে রস পায়নি বলে বেচারা অত শীঘ্র মুষড়ে পড়েছে।” Miss G. মনে করলেন আমি তাঁর উপর কটাক্ষ করে এ কথা বল্লুম— যদিও আমি কেবল কথার কথামাত্র বলেছিলুম, কোনই গূঢ় অভিপ্রায় ছিল না। যা হোক্ আমার এই অনবধানের উক্তির দরুণ আমি তাঁর বিরাগভাজন হয়েছিলুম—কত সাধ্য সাধনার পর তাঁর মানভঞ্জন হল। এই ছাত্রাবাসে থেকে পাঠাভাসে আমাদের বিস্তর খাটতে হত; মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যা সকাল পর্যন্ত নিয়মিত পরিশ্রম করতে হত; এই অতিরিক্ত পরিশ্রমে যে আমার শরীর ভেঙ্গে পড়েনি এই আশ্চর্য। এই পরিশ্রমের কুফল হওয়া দূরে থাকুক সদ্যই সুফল ফললো। ১৮৬২ সালে আমি সিবিল সার্বিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলুম। যখন পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয় তখন আমি মনোমোহনের সঙ্গে য়ুরোপে ভ্রমণে বেরিয়েছি —প্যারী নগরীতে ‘পাস’ হওয়ার সংবাদ আমার হাতে এল। আমি ‘পাস’ মনোমোহন ফেল। আমি প্রথম বৎসরেই পরীক্ষোত্তীর্ণ হতে পারব এরূপ আশা করি নাই। আমার আশাতীত ফল লাভ হল তাতে আমার আনন্দ কিন্তু আমার বন্ধুর নৈরাশ্য সংবাদে সে এক রকম ‘হরিষে বিষাদ’ বোধ করলুম। সে যাই হোক্ আমাদের মনের কথা মনেই রইল। তখন আমরা ভ্রমণে বেরিয়েছি—আমাদের ব্রত উদ্‌যাপন করা প্রথম কাজ। প্যারী হতে আমার Switzerland-এ প্রবেশ করলুম। ‘প্যারী’ এই নামের সঙ্গে কি মধুর স্মৃতি জড়িত আছে। নগরটি কি সুন্দর দুই বৃক্ষ শ্রেণীর মধ্য দিয়ে প্রশস্ত পথ