পাতা:আলালের ঘরের দুলাল.djvu/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
[ ১৮৫ ]

মাৎসর্য্য ও আমোদ সকলই জলবিম্ববৎ। মতিলাল ঐ সকল ধ্যান করিয়া প্রতিদিন বারাণসী ধামের চতুর্দ্দিকে প্রদক্ষিণ করত বৈকালে গঙ্গাতীরস্থ এক নির্জন স্থানে বসিয়া দেহের অসারত্ব, আত্মার সারত্ব, এবং আপন চরিত্র ও কর্ম্মাদি পূনঃ২ চিন্তা করিতে লাগিলেন। এইরূপ চিন্তা করাতে তাঁহার তমঃ খর্ব্ব হইতে লাগিল সুতরাং আপনার পূর্ব্ব কর্ম্মাদি ও উপস্থিত দুর্মতি প্রভৃতি জাগরূক হইয়া উঠিল। মনের এবম্প্রকার গতি হওয়াতে তাঁহার আপনার প্রতি ধিৎকার জন্মিল এবং ঐ ধিৎকারে অত্যন্ত সন্তাপ হইতে লাগিল। তখন আপনাকে সর্ব্বদা এই জিজ্ঞাসা করিতেন —আমার পরিত্রাণ কিরূপে হইতে পারে —আমি যে কুকর্ম্ম করিয়াছি তাহা স্মরণ করিলে এখনও হৃদয় দাবানলের ন্যায় জ্বলিয়া উঠে। এইরূপ ভাবনায় নিমগ্ন থাকেন —আহারাদি ও পরিধেয় বস্ত্রাদির প্রতি দৃক্‌পাতও নাই —ক্ষিপ্তপ্রায় ভ্রমণ করিয়া বেড়ান। কিছুকাল এই প্রকারে ক্ষেপণ হইলে দৈবাৎ এক দিবস দেখিলেন একজন প্রাচীন পুরুষ তরুতলে বসিয়া মনঃসংযোগ পূর্ব্বক এক২ বার একখানি গ্রন্থ দেখিতেছেন ও এক২ বার চক্ষু মুদিত করিয়া ধ্যান করিতেছেন। ঐ ব্যক্তিকে দেখিলে হঠাৎ বোধ হয় সে বহুদর্শী —জ্ঞানের সারাংশ গ্রহণ এবং মনঃসংযম বিলক্ষণ হইয়াছে। তাঁহার মুখ দর্শন করিলে তৎক্ষণাৎ ভক্তির উদয় হয়। মতিলাল তাঁহাকে দেখিবামাত্রে নিকটে যাইয়া সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিলেন। কিয়ৎকাল পরে ঐ প্রাচীন পুরুষ মতিলালের প্রতি নিরীক্ষণ করিয়া বলিলেন —বাবা! তোমার আকার প্রকারে বোধ হয় তুমি ভদ্র সন্তান —কিন্তু এমত সন্তাপিত হইয়াছ কেন? এই মিষ্ট কথায় উৎসাহ পাইয়া মতিলাল অকপটে