পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আলোর ফুলকি
৩৫

এা্টেন-সা-ন অ-ব-ধা-ন।” অমনি সব পেঁচা ডানা ছড়িয়ে গোল চোখগুলো পাকিয়ে স্থির হয়ে বসল, এমনি গম্ভীর হয়ে যে, রাতটাও মনে হতে লাগল যেন কত বড়ো, কত-না গভীর। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে থেকে লক্ষ্মী পেচা আস্তে আস্তে বললে, “তাকে মারাতে হয় না। যে সময়ে সে ঘরের বাইরে এসে দাড়ায় সে সময় আমরা দেখতেই পাই নে, চোখে সব যে বোধ হয় ধোয়া আর ধাধী— ধা-ধা ধ।” ব’লেই লক্ষ্মী পেচা চুপ করলে, আর সব পেচা গুমরোতে থাকল।

 তখন পাকুড়গাছের আগডালের উপর থেকে কুটুরে পেঁচা মিহি আওয়াজ দিলে, “বোলুঙ্গা কুছ, সল্লা হ্যায় কুছ।” হুতুম উপর দিকে চেয়ে বললে, “শুনি, তোমার মতলবটা কী।” কুটুরে সট করে নীচের ডালে নেমে বসে আরম্ভ করলে, “পাহাড়ের ওদিকটায় একটা লোক অদ্ভূত সব পাখির চিড়িয়াখানা বানিয়েছে, নানা দেশী-বিদেশী মোরগ, নানা জাতের নানা কেতার ধরা আছে। ময়ুর যিনি রাজ্যের অদ্ভুত পাখির খবর রাখেন, তিনি কুঁকড়োকে কিছুতে দেখতে পারেন না, কেননা, ময়ুরের একটিমাত্র বৈ ফুটি স্বর নেই, তাও আবার কর্ণকুহর ভেদ করা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। কিন্তু কুঁকড়োর ডাক, সে সোজা অন্ধকারের বুকে গিয়ে বেঁধে আর তার পর যে কাগুটা ঘটে তা কারুর জানতে বাকি নেই। কাজেই ময়ূর স্থির করেছেন চিনেমুরগির কুলতলার মজলিসে তিনি এই-সব অদ্ভুত মোরগদের হাজির করবেন।” “চিনে-মুরগির সঙ্গে আলাপ করে দিতে বুঝি?” বলেই সব পেচা হেঁ হেঁ করে হাসতে থাকল।

 কুটুরে বললে, “এই-সব অদ্ভূত মোরগের কাছে কি কুঁকড়ে দাড়াতে পারবে। একেবারে খাড়া দাড়িয়ে মাটি হবে।” গোয়ালে পেচা বলে উঠল, “হাজির তারা হবে কেমন করে। খাচা না খুলে দিলে তো সেই সব খাসা মোরগদের এক পা নড়বার সাধ্যি নেই।”

 কুটুরে সবাইকে আশ্বাস দিয়ে বললে, “তারও উপায় করা গেছে। যে পাহাড়ী ছোড়াটা খাচ খুলে সকালে তাদের দানাপানি খাওয়ায় সে কাল যেমন খাচা খুলবে আর আমি অমনি। তার মুখে গিয়ে ডানার এক ঝাপটা দেব। নিশ্চয়ই সে কাদতে কঁদিতে দৌড় দেবে খাচ খোলা রেখে। পেঁচার বাতাস গায়ে লাগলেই অসুখ, সেটা জানো তো। তার পর সব মোরগকে নিয়ে সরে পড়ো আর কি।”

 চড়াই বললে, “ওদিকে কুঁকড়ে বলছেন যে তিনি মজলিসে মোটেই যেতে রাজি নন।”