পাতা:আলোর ফুলকি.djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
আলোর ফুলকি

যে কাঠামোটার পায়ে পেণ্টালুন লটপট করছে, ওটা কী বলছে জানো? আমার এই ছককাটা ছিট একদিন ফ্যাশান ছিল, উনোপঞ্চাশ টাকা গজ দরে আমি বিকিয়েছি, এক কালে। আর ওই যে ভাঙা তোবড়ানো সোলার টুপি ওটার মাথায় চড়ানো দেখছ, ওটাই-বা কী বলছে — আমিও একদিন ফ্যাশান ছিলুম, আশি টাকা দিয়ে লোকে আমায় কিনেছিল,এখন মেথরও আমাকে মাথায় দিতে লজ্জা পায়। আর ওই দেখো কোট, তার এখনো ভুল ভাঙে নি, সে এখনো দেখো, চলতি বাতাসে উড়ে উড়ে আকাশে ফ্যাশান হাতড়ে বেড়াচ্ছে। চলতি বাতাস চলে গেল আর ওই দেখে ফ্যাশান-ধরা নিষ্কর্ম কোটের হাতত্বটো নিরাশ হয়ে ঝুলে পড়ল।” এই কথা কুঁকড়ে যেমন বলেছেন আর সত্যি সত্যি বাতাস বন্ধ হল, সব পাখির দেখলে তুই হাত মাটির দিকে ঝুলিয়ে কুশে-পুতুলট স্থির হয়ে দাড়াল। তারা সব সেইদিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এমন সময় ময়ুর বললে, “রাখে, ওটা কি কথা বলতে পারে যে এ-সব বলবে। তুমিও যেমন।”

 কুঁকড়ো ময়ুরকে বললেন, “তুমি যা বললে ওটাকে, মানুষেরা ঠিক ওই কথাই তোমাকে বলছে ইস্ত-না-গা-দ।”

 ময়ুর তার কাছের এক পাখিকে চুপি চুপি বললে যে, এই-সব জাকালো জাদরেল পোষা মোরগকে সোনালির সামনে হাজির করাতেই কুঁকড়োটা তার উপর খাপ্পা হয়েছে। তার পর ময়ুর কুঁকড়োকে বললে, “আচ্ছা, এই যে সব জাদরেল মোরগ এসেছেন, এঁদের তুমি ঠাউরেছ কী শুনি?”

 বুক ফুলিয়ে কুঁকড়ো উত্তর দিলেন, “দর্জির হাতে সেলাই করা, কলে কাটা, কাচি দিয়ে ছাটা নকল ছাড়া এরা আর কিছুই নয়। সবটাই এদের জোড়াতাড়া দেখছি, ওর ডানা তার ঝুটি, এমনি সব টুকিটাকি দিয়ে গড়া এদের চেহারাগুলো কাসারিপাড়ার সঙের বিজ্ঞাপনে লাগতে পারে; আর-কোথাও এমন-কি, এই সামান্ত গোলাবাড়িতেও, এদের দরকার মোটেই নেই। এদের চলন, বলন, গড়ন সবই বেস্বরে, বেয়াড়, বেখাপ্পা। ডিমের সুন্দর ডোলটি নিয়ে সব পাখিই বেরিয়ে আসে জগতে, কিন্তু ডিম ফাটিয়ে এরা যে বেরিয়েছে তার কোনো লক্ষণ তো এদের শরীরে দেখছি নে ৷”