পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘা বেত লেগেছিল, পেছনে চেয়ে দেখে দুজন সাহেব। আর একজন মেম, দুই সায়েব বেত হাতে নিয়ে শুধু ডাইনে বায়ে মারতে মারতে চলেচে। তুলসী ‘ও মাগো’ বলে সভয়ে পাশ দিয়ে দাড়ালো। শম্ভু রায় ওদের হাত ধরে সরিয়ে নিয়ে এল; নালু পাল বাজার করতে গিয়ে লক্ষ্য করলে, এখানে তরিতরকারী বেশ আক্রা দেশের চেয়ে। তরিতরকারী সের দরে বিক্রয় হয় সে এই প্রথমে দেখলে। বেগুনের সের দু পয়সা। এখানকার লোক কি খেয়ে বাঁচে! দুধের সের এক আনা ছ পয়সা। তাও খাঁটি দুধ নয়, জল মেশানো। তবে শম্ভু রায় বললে, এই উৎসবের জন্যে বহু লোক কলকাতায় আসার দরুণ জিনিসপত্রের যে চড়া দর আজ দেখা যাচ্ছে এটাই কলকাতায় সাধারণ বাজার-দর নয়। গোল আলু যথেষ্ট পাওয়া যায় এবং সস্তা। এই জিনিসটা গ্রামে নেই, অথচ খেতে খুব ভালো। মাঝে মাঝে মুদিখানার দোকানীরা শহর থেকে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে বটে, দাম বড্ড বেশি। নালু পাল তুলসীকে বললে-কিছু গোল আলু কিনে নিয়ে যেতি হবে দেশে। পড়তায় পোষায় কিনা দেখে আমার দোকানে আমদানি করতি হবে।

 তুলসী বললে–ও সব সায়েবদের খাবার হাঁড়িতে দেওয়া যায় না সব সময়।

 —কে তোমাকে বলেচে সায়েবদের খাবার? আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে যথেষ্ট। আমি মোকামের খবর রাখি। কালনা কাটোয়া মোকামের আলু সস্তা, অনেক চাষ হয়। আমাদের গাঁ ঘারে আনলি তেমন বিক্রি হয় না, নইলে আমি কালনা থেকে আলু আনতে পারিনে, না খবর রাখিনে! শহরে চলে, গাঁয়ে কিনবে কেডা?

 তুলসী বললে-টেঁকি কিনা! স্বগ্‌গে মেলেও ধান ভানে। ব্যবসা আর কেনা-বেচা। এখানে এসেও তাই।


 এই তাজ্জব ভ্রমণের গল্প নালু পালকে কতদিন ধরে করতে হয়েছিল গ্রামের লোকদের কাছে। কিন্তু এর চেয়েও একটা তাজ্জব ব্যাপার ঘটে গেল একদিন। শীতকালের মাঝামাঝি একদিন দেওয়ান হরকালী সুর আর নরহরি

২৮২