পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
১০০৫

কোনোদিন তাহারা পায় নাই। লেজকাটা কুকুরটা অনেক ভাত দেখিয়া এতই ব্যস্ত হইয়া উঠিল যে সে পারিলে সব ভাত একাই খায়। সে তাহার নিজের ভাগ পায়ে ঢাকিয়া অন্য দুটা কুকুরের ভাগ খাইতে লাগিল। কাজেই শেষটা তাহার ভাগ খাইবার বেলা আর তাহার পেটে স্থান রহিল না।

 পরদিন বড় কুকুরটা আসিয়া উপস্থিত। সে কোথায় যেন গিয়াছিল, সে অবধি তাহার কিছুই খাওয়া হয় নাই। যাহা হউক, তাহার জন্য খাবার যথেষ্ট রাখা হইয়াছিল।

 সেবারে পুরীর ব্যাঙ আর উইয়ের কথা বলিয়াছিলাম। এ বাড়িটিতে এই দুই জন্তু দেখিতে পাইনাই। টিকটিকি আর গিরগিটি অনেকগুলি ছিল। আমাদের বারান্দায় একটা তালপাতার বেড়া ছিল। রাত্রিতে বাহিরের বাতাস আর শীতের তাড়ায় যত গিরগিটি আসিয়া এই বেড়ায় আশ্রয় লইত। তাহাদের ঘুমাইবার ভঙ্গির কথা মনে হইলে এখনো আমার হাসি পায়। শরীরটাকে যত উৎকৃষ্ট রকমের বাঁকাইতে পারে ততই বোধহয় উহাদের ঘুমাইবার সুবিধা। কেহ যদি দড়ির আগায় ঝুলিতে ঝুলিতে পা ঘাড়ে তুলিয়া মাথা নীচের দিকে দিয়া ডিগবাজি খাইবার মাঝখানে ঘুমাইয়া পড়ে, তবে হয়তো সে গিরগিটির নিদ্রার মর্ম খানিকটা বুঝিতে পারে।

 পুরীর বিড়ালগুলি এবারে আমাদিগকে বড়ই জ্বালাতন করিয়াছে। আমরাও যে তাহাদের সহিত বন্ধুতা করিতে পারি নাই, এ কথা বলাই বাহুল্য। আমার লাঠিটার কথা কহিবার শক্তি থাকিলে এ বিষয়ে তোমরা অনেক আশ্চর্য সংবাদ শুনিতে পাইতে। দুঃখের বিষয়, করিয়াও উহাদের সংশোধন হয় নাই। এরূপ নির্লজ্জ জন্তু আর বেশি আছে কি না সন্দেহ। যত মার খায়, ততই আরো বেশি করিয়া দৌরাত্ম্য করে। মারের চোটে কোমরও যদি ভাঙ্গি য়া যায়, তবুও সামনের দুপায় হিচড়াইয়াই ছুট দিবে। খানিক দূর যাইতে না যাইতেই দেখিবে তাহার কোমর সোজা হইয়া গিয়াছে। আর খানিক গেলে হয়তো বেদনার কথা একেবারেই ভুলিয়া যাইবে। কাজেই আর বেশি দূর যাইবার পূর্বেই সে ফিরিয়া আসিয়া রান্নাঘরের কোণে উকিঝুকি মারিবে। সেখানে যদি কেহ থাকে, তবে হয়তো তাহাকে বলিবে মিঞাও! কি মিঞা? বড় যে মারিয়াছিলে? আর যদি কেহ না থাকে, তবে তো বুঝিতেই পার। বল দেখি, এমন অবস্থায় নিতান্ত সাধু মহাপুরুষ ভিন্ন সাধারণ লোকের রাগ হয় কিনা?

 সাধু লোকের কথায় পরলোকগত পূজ্যপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী মহাশয়ের জীবজন্তুর প্রতি অসাধারণ দয়ার কথা মনে পড়ে। পুরীতে নরেন্দ্র সরোবরের ধারে গোস্বামী মহাশয়ের সমাধির স্থানে একটি আশ্রম আছে। সেই আশ্রমের তত্ত্বাবধায়ক মহাশয়ের নিকট এ বিষয়ে অনেক আশ্চর্য কথা শুনিয়াছি। ইতর প্রাণীরা অনেক সময় যথার্থ দয়ালু লোককে চিনিতে পারে, এবং অন্য লোক দেখিয়া তাহাদের মনে যেরূপ ভয় আর অবিশ্বাস হয়, ঐসকল দয়ালু লোকের সম্বন্ধে তাহা হয় না। গোস্বামী মহাশয়ের জীবনে ইহার অনেক দৃষ্টান্ত দেখা গিয়াছে। বিড়ালের জন্য দুধ রোজ বরাদ্দ করা, গরু ছাগলকে নিয়মিত আহার দেওয়া এ সকল তো তাঁহার ছিল। ইদুর আরশুলাগুলি পর্যন্ত নাকি ক্ষুধার সময় তাহার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইত। উহারা আসিয়া তাহার গা খুঁটিতে আরম্ভ করিলেই উনি বলিতেন, ‘ওহে, ইহাদের আহার চাই, কিছু খাইতে দাও। খাবার দেওয়া হইলে পর উহারা সন্তুষ্ট হইয়া যথাস্থানে চলিয়া যাইত। যে সাপকে আমরা দেখিবামাত্র তাহার মাথা গুঁড়া করিয়া দিই, গোস্বামী মহাশয় সেই সাপকে পর্যন্ত যত্ন করিয়া রোজ দুধ-ভাত খাওয়াইছে। একটা সাপ