পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তাহার পরেই তাহারা বলাবলি করিতে লাগিল, “এ ব্যক্তি কে? স্ত্রীলোকের মতো কতকটা চেহারা বটে, কিন্তু আবার পুরুষের মতোও দেখিতেছি। মাথা, ঘাড়, আর হাত ঠিক অর্জুনের মতে। এ ব্যক্তি নিশ্চয় অর্জুন, নহিলে এমন তেজীয়ান চেহারা কাহার? আর এমন সাহসই বা কাহার যে একেলা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে আসিয়াছে?”

 এদিকে অর্জুন একশত পা গিয়াই উত্তরের চুল ধরিয়াছেন। তখন যে উত্তরের কান্না! “ও বৃহন্নলা। শীঘ্র ঘরে চল। তোমাকে মোহর দিব, হীরা দিব, ঘোড়া দিব, রথ দিব, হাতি দিব, আমাকে ছাড়িয়া দাও!”

 অর্জুন তাহাকে সাহস দিয়া বলিলেন, “রাজপুত্র, তোমার কোনো ভয় নাই। তুমি যুদ্ধ করিতে না চাহ আমার সারথি হও। আমি যুদ্ধ করিয়া গোরু ছাড়াইব৷”

 এইরূপে উত্তরকে শান্ত করিয়া অর্জুন তাঁহাকে রথে তুলিয়া লইয়া সেখান হইতে প্রস্থান করিলেন৷

 এদিকে দ্রোণ ভীষ্মকে বলিতেছেন, “ভীষ্ম। আজ কিন্তু অর্জুনের হাতে আমাদের রক্ষা নাই। যুদ্ধে শিবকে খুশি করিয়াছে তারপর এতদিন ক্লেশ পাইয়া রাগিয়া আছে, ও কি আমাদিগকে সহজে ছাড়িবে?”

 একথায় কর্ণ বলিলেন, “আমার আর দুর্যোধনের যে ক্ষমতা, অর্জুনের তাহার একআনাও নাই৷”

 দুর্যোধন বলিলেন, “এ যদি অর্জুন হয়, তবে তো ভালোই হইল। অজ্ঞাতবাস শেষ না ইতেই আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে, কাজেই আবার বারো বৎসর ইহাদিগকে বনবাস করিতে হইবে৷”

 ইহাদের এইরূপ কথাবার্তা চলিয়াছে। ততক্ষণে অর্জুন উত্তরকে লইয়া সেই শমীগাছের নিকটে উপস্থিত হইয়াছে। শমীগাছের তলায় আসিয়া তিনি বলিলেন, “রাজপুত্র, গাছে উঠিয়া ঐ অস্ত্রগুলো নামাও৷”

 এ কথায় উত্তর ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “ও গাছে মড়া বাঁধা রহিয়াছে, হইলে অশুচি হইবে যে৷

 অজুর্ন বলিলেন, “উহা মড়া নহে, অস্ত্র। মড়া ছুইতে আমি তোমাকে কেন বলিব?”

 অর্জুন বলিলেন, “এসব অস্ত্র পাণ্ডবদিগের৷”

 পাণ্ডবদিগের নাম শুনিয়া উত্তর আরো আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “এ-সব যদি পাণ্ডবদিগের অল্প হয়, তবে তাহারা এখন কোথায়?”

 অর্জুন বলিলেন, “তাঁহারা তোমাদের বাড়িতেই আছে। আমি অর্জুন, তোমার পিতার যে কঙ্ক নামে সভাসদ আছে, তিনি যুধিষ্ঠির, বল্লভ নামক ঐ ষণ্ডা পাচকটি ভীম, গ্রন্থিক নামক যে লোকটি ঘোড়াশালে কাজ করে সে নকুল, আর গোশালা্র কর্তা তন্ত্রিপাল সহদেব, তোমাদের বাড়িতে যিনি সৈরিন্ধ্রীর কাজ করেন, তিনি দ্রৌপদী৷”

 উত্তরের নিকট এসকল কথা স্বপ্নের ন্যায় বোধ হইতে লাগিল। পাণ্ডবদিগের ন্যায় মহাপুরুষেরা তাহাদের বাড়িতে সামান্য চাকরের মতো বাস করিতেন, এ কথা কি সহজে বিশ্বাস হয়।কাজেই উক্ত অর্জুনেরকথা পরীক্ষা করিবার জন্য বলিলেন, “শুনিয়াছি অর্জুনের দশটি নাম আছে আপনি যদি সেই অর্জুন, তবে সেই দশটি নাম আর তাদের অর্থ