পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩১৫

ভালো মতে যুদ্ধ আরম্ভ না করিতেই সহদেবের বাণে তাহার ধনুক কাটা যায়। তখন অসি গদা শক্তি প্রভৃতি যে অস্ত্রই তিনি হাতে করেন, সহদেব তাহাই কাটিয়া ফেলেন। কাজেই শকুনি আর এক মুহূর্তও সেখানে অপেক্ষা করিলেন না।

 কিন্তু পলাইয়া তিনি যাইবেন কোথায়? সহদেব তাহার পিছু পিছু তাড়া করিয়া, বাণে বাণে তাহাকে ক্ষত-বিক্ষত করিতে লাগিলেন। তখন শকুনি একটা প্রাস লইয়া সহদেবকে আক্রমণ করিতে গেলে, সহদেব তাহার দুখানি হাতসুদ্ধ সেই প্রাস কাটিয়া, সিংহনাদ করিতে করিতে তাহার মাথায় এক ভয়ানক ভল্ল ছুঁড়িয়া মারিলেন। সে ভল্ল তাহার মাথা কাটিয়া, প্রাণ বাহির করিয়া দিল।

 ইহার পর আর যুদ্ধের বড় বেশি বাকি রহিল না। দেখিতে দেখিতে কৌরবদিগের মধ্যে কেবলমাত্র দুর্যোধন, কৃপ, অশ্বত্থামা আর কৃতবর্মা অবশিষ্ট রহিলেন। তাহাদের এগারো অক্ষৌহিণী সৈন্যের সমস্তই মরিয়া শেষ হইল।

 তখন রাজা দুর্যোধন, চারিদিক শূন্য দেখিয়া, প্রাণের ভয়ে পলায়নপূর্বক রণভূমির নিকটেই দ্বৈপায়ন নামক একটা হ্রদের জলে লুকাইতে চলিলেন। তখন তাহার মনে হইল যে, বিদুর পূর্বেই বলিয়াছিলেন, এইরূপ হইবে।

 ইতিমধ্যে বেচারা সঞ্জয়, সাত্যকি আর ধৃষ্টদ্যুম্নের হাতে পড়িয়া প্রায় মারাই গিয়াছিলেন। তাহারা তাহাকে কাটিতে যাইবেন, ইত্যবসরে ব্যাসদেব সেখানে আসিয়া বলিলেন, “ইহাকে ছাড়িয়া দাও।”

 এইরূপে মুক্তি পাইয়া, সঞ্জয় তথা হইতে নগরের দিকে চলিয়াছে, এমন সময়, রণস্থলের এক ক্রোশ দূরে, দুর্যোধনের সহিত তাহার দেখা হইল। দুই চক্ষু জলে পূর্ণ থাকায়, দুর্যোধন প্রথমে সঞ্জয়কে দেখিতে পান নাই। তারপর তাহার কণ্ঠস্বরে তাহাকে চিনিয়া বলিলেন, “সঞ্জয়, বাবাকে বলিও, আমি হ্রদের নিকট লুকাইয়া, প্রাণ বাঁচাইয়াছি।” এই বলিয়া তিনি গদা হাতে দ্বৈপায়ন হ্রদে লুকাইয়া রহিলেন।

 সঞ্জয় সেখান হইতে চলিয়া যাইবার কিঞ্চিৎ পরেই কৃপ, অশ্বত্থামা আর কৃতবর্মা তাহার নিকট দুর্যোধনের সংবাদ পাইয়া, সেই হ্রদের তীরে আসিয়া উপস্থিত হলেন। হ্রদের তীরে দাঁড়াইয়া তাহারা বলিলেন, “মহারাজ! জল হইতে উঠিয়া আইস, আমরা তিনজনে তোমাকে লইয়া পাণ্ডবদিগের সহিত যুদ্ধ করিব। আজ উহারা নিশ্চয় পরাজিত হইবে।”

 তাহা শুনিয়া দুর্যোধন বলিলেন, “বড় ভাগ্য যে, আপনাদিগকে জীবিত দেখিলাম। কিন্তু আমি অতিশয় ক্ষত-বিক্ষত হইয়াছি আর পাণ্ডবদিগের অনেক সৈন্য এখনো বাঁচিয়া আছে। সুতরাং আজ আমি যুদ্ধ করিতে পারি না। আজিকার রাত্রিটি বিশ্রাম করি, কাল আপনাদিগকে লইয়া যুদ্ধ করিব।”

 তখন অশ্বত্থামা বলিলেন, “মহারাজ! তুমি উঠিয়া আইস! আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, রাত্রি প্রভাত না হইতে তোমার শত্রুদিগকে বিনাশ করিব।”

 এই সময়ে কয়েকজন ব্যাধ সেই হ্রদের ধারে বিশ্রাম করিতেছিল। কৃপ, অশ্বথামা আর কৃতবর্মা তাহাদিগকে দেখিতে পান নাই, কিন্তু তাহারা তাহাদের কথাবার্তা সকলই শুনিতে পাইল। সুতরাং দুর্যোধন যে সেই হ্রদের জলে লুকাইয়া রহিয়াছে, এ কথা আর তাহাদের বুঝিতে বাকি রহিল না। একটু আগেই তাহারা পাণ্ডবদিগকে তাহার অন্বেষণ করিতে দেখিয়াছিল,