পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৩৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দুর্গা বলিতে বলিতে সে তাহার দিকেও এক-একবার তাকাইতেছে।

 ইহার মধ্যে জলের পাখিরা সকলে মিলিয়া একবার টুপ করিয়া ডুব মারিল। আর অমনি হাঁস-ঠাকুর খপ করিয়া একটি ডিম লইয়া মুখে পুরিল। তারপর সেটিকে গিলিয়া আবার খুব জোরের সহিত বলিতে লাগিল, “দুর্গা, দুর্গা, দুর্গা, দুর্গা।”

 সেই পাখিটির এ-সকলের কিছুই দেখিতে বাকি রহিল না। সেদিন রাত্রিতে তাহার নিকট এ কথা শুনিতে পাইয়া আটটা খুব ষণ্ডা আর ধারাল ঠোঁটওয়ালা পাখি বলিল, “কাল আমরা পাহারা দিব।”

 পরদিনও হাঁস-ঠাকুর সকলকে খেলা করিতে পাঠাইয়া তাহাদের ডিমের উপর পাহারা দিতে লাগিল। সে জানিত না যে তাহার উপর আবার আটটা পাখি পাহারা দিতেছে। তাই সেদিনও, জলের পাখিরা ডুব দেওয়া মাত্র যেই সে একটি ডিম খপ্ করিয়া মুখে পুরিয়াছে অমনি আটটা পাখি আটদিক হইতে আসিয়া ঠকাঠক শব্দে তাহার মাথায় ঠোকর মারিতে আরম্ভ করিয়াছে। সে ডিম আর হাঁস-ঠাকুরের গেলা হইল না। তাহার আগেই সেই আট পাখির ঠোকরের চোটে তিনি হাঁ করিয়া মরিয়া গেলেন।

 তখন একটা খুব গোলমাল হইল। তাহা শুনিয়া সকল পাখি তাড়াতাড়ি জল হইতে উঠিয়া আসিয়া দেখিল যে, হাঁস-ঠাকুর হাঁ করিয়া মরিয়া রহিয়াছেন, তাঁহার মুখের ভিতরে একটি গাং-শালিকের ডিম!

 যখন সকলেই বুঝিল, কি হইয়াছে।


নিতান্ত প্রাচীন কচ্ছপ

 যখন প্রলয় হয়, মার্কণ্ডেয় মুনি তখন উপস্থিত ছিলেন, তিনি অনেক দিনের মানুষ। আবার তাঁহারও আগের মানুষ ছিলেন মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন। মহারাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন যে কত দান,কত ধর্ম, কত যজ্ঞ করিয়াছিলেন, আর তাতে তাঁহার যে কত পুণ্য হইয়াছিল, তাহা বলিবার আমার সাধ্য নাই।

 সেই পুণ্যের ফলে মহারাজ স্বর্গে গিয়া হাজার হাজার বৎসর বাস করিয়াছিলেন। হাজার হাজার বৎসর পরে তাঁহার পুণ্য ফুরাইয়া গেল, কাজেই তখন আবার তাঁহাকে এই পৃথিবীতে ফিরিয়া আসিতে হইল।

 ততদিনে পৃথিবীর লোকে তাঁহার কথা একেবারেই ভুলিয়া গিয়াছিল এত দান, এত ধর্ম, এত যজ্ঞ যে তিনি করিয়াছিলেন, সেসকলের কথা জানা দূরে থাকুক, তাঁহার নামটি পর্যন্ত কাহারো মনে ছিল না।

 রাজা ভাবিলেন, ‘মার্কণ্ডেয় মুনি খুব পুরানো মানুষ, তাঁহার নিকট যাই তাঁহার হয়ত আমার কথা মনে থকিতে পারে।’

 তাই তিনি মার্কণ্ডেয় মুনির নিকট গিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “মুনি-ঠাকুর আমার কথা ত সকলেই ভুলিয়া গিয়াছে। আপনি কি আমাকে চিনিতে পারেন?”

 মার্কণ্ডেয় মুনি বলিলেন, “আমরা তীর্থে তীর্থে ঘুরিয়া বেড়াইতে ব্যস্ত থাকি, তাহাতে নিজের কথাই কতবার ভুলিয়া যাই। আপনাকে আবার কি করিয়া চিনিতে পারিব?”