পাতা:ঔপনিষদ ব্রহ্ম - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঔপনিষদ ব্রহ্ম
৩৩

যেমন করিয়াই পাইয়াছি এই ওঁ শব্দে তাহা সমস্তই ব্যক্ত করে—এবং ব্যক্ত করিয়াও সেইখানেই রেখা টানিয়া দেয় না। সঙ্গীতের স্বর যেমন গানের কথার মধ্যে একটি অনির্ব্বচনীয়তার সঞ্চার করে তেমনি ওঁ শব্দের পরিপূর্ণ ধ্বনি আমাদের ব্রহ্মধ্যানের মধ্যে একটি অনির্ব্বচনীয়তা অবতারণা করিয়া থাকে। বাহ্য প্রতিমা দ্বারা আমাদের মানস ভাবকে খর্ব্ব ও আবদ্ধ করে—কিন্তু এই ওঁ ধ্বনির দ্বারা আমাদের মনের ভাবকে উন্মুক্ত ও পরিব্যাপ্ত করিয়া দেয়।

 সেইজন্য উপনিষদ বলিয়াছেন—ওমিতি ব্রহ্ম। ওম্ বলিতে ব্রহ্ম বুঝায়। ওমিতীদং সর্ব্বং, এই যাহা কিছু সমস্তই ওঁ। ওঁ শব্দ সমস্তকেই সমাচ্ছন্ন করিয়া দেয়। অর্থবন্ধনহীন কেবল একটি সুগম্ভীর ধ্বনিরূপ ওঁ শব্দ ব্রহ্মকে নির্দেশ করিতেছে। আবার ওঁ শব্দের একটি অর্থও আছে—সে অর্থ এত উদার যে তাহা মনকে আশ্রয় দান করে অথচ কোন সীমায় বন্ধ করে না।

 আধুনিক সমস্ত ভারতবর্ষীয় আর্য ভাষায় যেখানে আমরা হাঁ বলিয়া থাকি প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় সেইখানে ওঁ শব্দের প্রয়োগ। হাঁ শব্দ ওঁ শব্দেরই রূপান্তর বলিয়া সহজেই অনুমিত হয়। উপনিষদও বলিতেছেন ওমিত্যেতদ্ অনুকৃতির্হম্ম— ওঁ শব্দ অনুকৃতিবাচক, অর্থাৎ ইহা কর বলিলে, ওঁ অর্থাৎ হাঁ বলিয়া সেই আদেশের অনুকরণ করা হইয়া থাকে। ওঁ স্বীকারোক্তি।