পাতা:কথা-চতুষ্টয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সমাপ্তি।
৫৩

হইল না। পিণ্ডাকার কন্যাটি কোন মতে পুনশ্চ দীর্ঘাকার হইয়া দাসী সহকারে অন্তঃপুরে চলিয়া গেল। অপূর্ব্ব পরম গম্ভীরভাবে বিরল গুম্ফরেখায় তা দিতে দিতে উঠিয়া ঘরের বাহিরে যাইতে উদ্যত হইল। দ্বারের নিকটে গিয়া দেখে বার্ণিশ-করা নূতন জুতাযোড়াটি যেখানে ছিল সেখানে নাই এবং কোথায় আছে তাহাও বহুচেষ্টায় অবধারণ করা গেল না।

 বাড়ির লোক সকলেই বিষম বিব্রত হইয়া উঠিল এবং অপরাধীর উদ্দেশে গালি ও ভৎসনা অজস্র বর্ষিত হইতে লাগিল। অনেক খোঁজ করিয়া অবশেষে অনন্যোপায় হইয়া বাড়ির কর্ত্তার পুরাতন ছিন্ন ঢিলা চটিযোড়াটা পরিয়া প্যাণ্টলুন চাপকান পাগড়ি সমেত সুসজ্জিত অপূর্ব্ব কর্দমাক্ত গ্রামপথে অত্যন্ত সাবধানে চলিতে লাগিল।

 পুষ্করিণীর ধারে নির্জ্জন পথপ্রান্তে আবার হঠাৎ সেই উচ্চকণ্ঠের অজস্র হাস্যকলোচ্ছ্বাস। যেন তরুপল্লবের মধ্য হইতে কৌতুকপ্রিয়া বনদেবী অপূর্ব্বর ঐ অসঙ্গত চটিজুতাযোড়ার দিকে চাহিয়া হঠাৎ আর হাসি ধারণ করিয়া রাখিতে পারিল না।

 অপূর্ব্ব অপ্রতিভভাবে থমকিয়া দাঁড়াইয়া ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতেছে এমন সময় ঘন বন হইতে বাহির হইয়া একটি নির্লজ্জ অপরাধিনী তাঁহার সম্মুখে নুতন জুতাযোড়াটা রাখিয়াই পলায়নোদ্যত হইল। অপূর্ব্ব দ্রুতবেগে দুই হাত ধরিয়া তাহাকে বন্দী করিয়া ফেলিল।