পাতা:কথা ও কাহিনী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
কাহিনী

শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে,  আনি তার টিকি ধরে;
বলি তারে, “পাজি, বেরো তুই আজই,  দূর করে দিনু তােরে।”
ধীরে চলে যায়, ভাবি গেল দায়ু;  পরদিনে উঠে দেখি,
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে  বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি-
প্রসন্ন মুখ, নাহি কোনাে দুখ,  অতি অকাতর চিত্ত।
ছাড়ালে না ছাড়ে, কী করিব তারে-  মাের পুরাতন ভৃত্য!

সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা  করিয়া দালালগিরি।
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন  বারেক আসিব ফিরি।
পরিবার তায় সাথে যেতে চায়,  বুঝায়ে বলিনু তারে-
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য,  নহিলে খরচ বাড়ে।
লয়ে রশারশি করি কষাকষি  পোঁটলা-পুঁটলি বাঁধি
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে  গৃহিণী কহিল কাঁদি,
“পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে  কষ্ট অনেক পাবে।”
আমি কহিলাম, “আরে রাম রাম!  নিবারণ সাথে যাবে।”
রেলগাড়ি ধায়; হেরিলাম হায়  নামিয়া বর্ধমানে—
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত,  তামাক সাজিয়া আনে!
স্পর্ধা তাহার হেনমতে আর  কত বা সহিব নিত্য!
যত তারে দুষি তবু হনু খুশি  হেরি পুরাতন ভৃত্য!

নামিনু শ্রীধামে— দক্ষিণে বামে  পিছনে সমুখে যত
লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্রাণটা  করিল কণ্ঠাগত।