পাতা:কপালকুণ্ডলা (দ্বিতীয় সংস্করণ).pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫০
কপালকুণ্ডলা।

 “ভগিনি! তুমি যে কার্য্য করিলে তাহার প্রতিশোধ করিবার আমার ক্ষমতা নাই, তবু যদি আমি চিরদিন তোমার মনে থাকি সেও আমার সুখ। যে অলঙ্কার গুলিন দিয়াছিলাম, তাহা শুনিয়াছি তুমি দরিদ্রকে বিতরণ করিয়াছ। এক্ষণে নিকটে কিছুই নাই, কল্যকার অন্য প্রয়োজন ভাবিয়া কেশ মধ্যে একটী অঙ্গুরীয় আনিয়াছিলাম, জগদীশ্বরের কৃপায় সে পাপপ্রয়োজনসিদ্ধির আবশ্যক হইল না। এই অঙ্গুরীয়টী তুমি রাখ। ইহার পরে অঙ্গুরীয় দেখিয়া যবনী ভগিনীকে মনে করিও। আজি যদি স্বামী জিজ্ঞাসা করেন, অঙ্গুরীয় কোথায় পাইলে, কহিও, লুৎফ-উন্নিসা দিয়াছে।” ইহা কহিয়া লুৎফ-উন্নিসা আপন অঙ্গুলি হইতে বহু ধনে ক্রীত এক অঙ্গুরীয় উন্মোচিত করিয়া কপালকুণ্ডলার হস্তে দিলেন। নবকুমার তাহাও দেখিতে পাইলেন; কাপালিক তাঁহাকে ধরিয়াছিলেন, আবার তাঁহাকে কম্পমান দেখিয়া পুনরপি মদিরা সেবন করাইলেন। মদিরা নবকুমারের মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়া তাঁহার প্রকৃতি সংহার করিতে লাগিল; স্নেহের অঙ্কুর পর্যন্ত উন্মূলিত করিতে লাগিল।

 কপালকুণ্ডলা লুৎফ্-উন্নিসার নিকট বিদায় হইয়া গৃহাভিমুখে চলিলেন। তখন নবকুমার ও কাপালিক লুৎফ্-উন্নিসার অদৃশ্য পথে কপালকুগুলার অনুসরণ করিতে লাগিলেন।