পাতা:কাদম্বরী.djvu/৭৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭২
কাদম্বরী৷

নির্ম্মলা শশিকলার ন্যায় ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইয়া এরূপ রূপবতী ও গুণবতী হইলেন যে, সকলেই তাঁহাকে দেখিলে আনন্দিত হইত ও অত্যন্ত ভাল বাসিত। শৈশবাবধি একত্র শয়ন, একত্র অশন, একত্র অবস্থান প্রযুক্ত আমি কাদম্বরীর প্রণয়পাত্র ও স্নেহপাত্র হইলাম। সর্ব্বদা একত্র ক্রীড়া কৌতুক করিতাম, এক শিক্ষকের নিকট নৃত্য, গীত, বাদ্য, বিদ্যা শিখিতাম, এক শরীরের মত দুই জনে একত্র থাকিতাম। ক্রমে এরূপ অকৃত্রিম সৌহার্দ্দ জন্মিল যে, আমি তাঁহাকে সহোদরার ন্যায় জ্ঞান করিতাম; তিনিও আমাকে আপন হৃদয়ের ন্যায় ভাবিতেন। এক্ষণে আমার এই দুরবস্থা শুনিয়া প্রতিজ্ঞা করিলেন, যাবৎ মহাশ্বেতা এই অবস্থায় থাকিবেন তাবৎ আমি বিবাহ করিব না। যদি পিতা মাতা অথবা বন্ধুবর্গ বলপূর্ব্বক আমার বিবাহ দেন তাহা হইলে অনশনে, হুতাশনে অথবা উদ্বন্ধনে প্রাণ ত্যাগ করিব। গন্ধর্ব্বরাজ চিত্ররথ ও মহাদেবী মদিরা পরম্পরায় কন্যার এই প্রতিজ্ঞা শুনিয়া অতিশয় দুঃখিত হইয়াছেন। কিন্তু এক অপত্য, অত্যন্ত ভাল বাসেন, সুতরাং তাঁহার প্রতিজ্ঞার বিরুদ্ধে কোন কথা উত্থাপন করিতে পারেন নাই। যুক্তি করিয়া অদ্য প্রভাতে ক্ষীরোদনামা এক কঞ্চুকীকে আমার নিকট পাঠাইয়াছিলেন। তাহার দ্বারা আমাকে বলিয়া পাঠান, “বৎসে মহাশ্বেতে! তোমা ব্যতিরেকে কেহ কাদম্বরীকে সান্ত্বনা করিতে সমর্থ নয়। সে এইরূপ প্রতিজ্ঞা করিয়াছে; এক্ষণে যাহা কর্ত্তব্য হয় কর।” আমি গুরুজনের গৌরবে ও মিত্রতার অনুরোধে ক্ষীরোদের সহিত তরলিকাকে কাদম্বরীর নিকট পাঠাইয়াছি। বলিয়া দিয়াছি, সখি! একেই আমি মরিয়া আছি, আবার কেন যন্ত্রণা বাড়াও? তোমার প্রতিজ্ঞা শুনিয়া অত্যন্ত দুঃখিত হইলাম। আমার জীবিত থাকা যদি অভিপ্রেত হয়, তাহা হইলে, গুরুজনের অনুরোধ কদাচ উল্লঙ্ঘন করিও না। তরলিকাও তথায় গেল; আপনিও এখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন।