এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ।
৮৯

চতুর্দ্দশ পরিচ্ছেদ।


 একই রকমে দিন কাটিতে লাগিল। প্রতিদান পাইবার আশা নাই, ভরসা নাই, ইচ্ছাও নাই; নিরাশীর মধ্যেও তথাপি অন্তঃশীলা অংশ প্রবাহিতা, ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাসনা বিদ্রোহী, মনের বিরুদ্ধে মন সংগ্রামরত, নিজের সহিত অনবরত যুদ্ধে হৃদয় রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত। এমন অবস্থায় তোমরা কেহ কি কখনো পড়িয়াছ! জানিনা; কিন্তু মনে হয়, এ বিশাল সংসারে এ জ্বালা শুধু আমিই জানি।

 ভাবিতে গেলে মহা বিষ্ময়ের মধ্যে মগ্ন হইয়া পড়ি!—কেবল দুই চারি দিনের দেখা, কেবল দুই চারিট কথা বার্ত্তা; তাহাতেই কিরূপে আমাকে এমনতর পাগল করিয়া তুলিল! সেই ক্ষণিক মিলনের মধ্যে জগতের যত কিছু সৌন্দর্য্য-মধুরতা আনন্দ-উচ্ছাস, যত কিছু হলাহলভরা অভাব বেদনার অভিজ্ঞানে জীবনের অভিজ্ঞতা যেন সম্পূর্ণ।

 তাঁহাকেও ত ভাল বালিয়াছিলাম; কিন্তু এখন বুঝিতেছি, সে এ রকমের অনুভাব নহে।—সেশুধু গানের মোহ, স্মৃতির ব্যথা; এমন মর্ম্মবিজড়িত আকুল আকাঙ্খাময় আত্মদান নছে। সে শুধু বিশ্বাসের উচ্ছাস, প্রীতির অনুভবে মর্ম্মান্তিক সহানুভূতি, তাই যখন বিশ্বাস ফুরাইল, যখন মনে হইল তাঁহার ভালবাসা সত্য নহে, তখন সে ভালবাসাও ফুরাইল। কিন্তু এ সন্দেহে, এ অবিশ্বাসে সে ক্রোধ কোথা? সে বিরক্তি কোথা! সে বিস্মৃতিই বা কোথা? নৈরাশাসিঞ্চনে এ প্রেম আরো কেবল মনে দৃঢ় বদ্ধমূল হইয়া বসিতে লাগিল।