পাতা:কুরু পাণ্ডব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কুরু পাণ্ডব
২১

পারিয়া তাহারা বিস্তর বিলাপ পরিতাপ করিতে করিতে বলিতে লাগিল–

 অহো! ইহা নিশ্চয়ই কুরুকুলকলঙ্ক, দুর্য্যোধনের কার্য্য। তাহারই আদেশে পুরোচন এই গৃহ নির্মাণ করাইয়া তাহার অসদভিপ্রায় সিদ্ধ করিয়াছে। কিন্তু ধর্ম্মের কি অনির্ব্বচনীয় মহিমা। দেখ সে নরাধমের গৃহেও অগ্নি লাগিয়া সে দগ্ধ হইতেছে। দহ্যমান জতুগৃহের চতুর্দ্দিকে পৌরজন সমস্ত রাত্রি এরূপ বিলাপ করিতে লাগিল।

 ইত্যবসরে মাতাকে লইয়া পঞ্চপাণ্ডব দ্রুতগমনে নিরাপদ স্থানে উত্তীর্ণ হইবার বিশেষ যত্ন করিলেন। কিন্তু রাত্রিজাগরণ ও দাহভয়ে পরিশ্রান্ত হইয়া সকলেই পদে পদে স্খলিত হইতে লাগিলেন। তখন একাকী ভীমসেন কাহাকেও স্কন্ধে কাহাকেও ক্রোড়ে লইয়া এবং কাহারও বা হস্তধারণপূর্বক নির্ভর দান করিয়া চলিলেন।

 হস্তিনাপুরে–পাণ্ডবদের বিনাশাবার্ত্তায় সকলে পাণ্ডব-নির্বাসনের প্রকৃত অর্থ বুঝিয়া ঘোর শােকাকুল হইলেন। কিন্তু দুর্য্যোধনের চতুরতায় ইতিমধ্যে পৌরবর্গ বশীভূত হওয়ায় কেহ কিছু করিতে পারিলেন না।

 ওদিকে দুর্য্যোধনের ভয়ে প্রচ্ছন্নবেশ ধারণপূর্বক পাণ্ডবগণ নক্ষত্রদ্বারা দিঙ্নিরূপণ করিয়া স্থলপথে ক্রমাগত দক্ষিণদিকে গমন করিতে লাগিলেন। ভীম পূর্ব্ববৎ সকলকে আশ্রয়দানপূর্বক উচ্চনীচ স্থলে মাতাকে পৃষ্ঠে বহন করিতে লাগিলেন।