পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఫి$ গল্প-গ্রন্থাবলী চতুদশবষীরা কন্যা অমলার বিবাহের জন্য ছটি লইয়া তিনি সপরিবারে সবগ্রামে আসিয়াছেন। ২৫ বৎসর পাবে উমাচরণ ওকালতী কারবার অভিপ্রায়ে রাজপতোনায় গমন করেন; মাঝে একবার মাত্র দেশে আসিয়াছিলেন, সেও ১o॥১২ বৎসরের কথা। এই উমাচরণ ছিলেন শ্যামাচরণের বাল্যবন্ধ ও সহপাঠী। নামসাম্যের জন্য বাল্যকালেই ইহারা “বন্ধ" পাতাইয়াছিলেন। এখন উভয়েরই চলে পাকিলেও, পরপর সেই • বন্ধ” সভাষণই চলিয়া থাকে। উমাচরণ ক্ৰমে শ্যামাচরণের সাংসারিক ব্যাপারের সমস্ত কথাই শুনিলেন। শনিয়া বড়ই দঃখিত হইলেন ; বন্ধর সঙ্গে গোপনে কি একটা পরামর্শ করিতে লাগিলেন। সরেনকে পাবে তিনি ১০১১ বৎসরের বালকটি মাত্র দেখিয়াছিলেন। একদিন কলিকাতায় যাইয়া, নিজে অপ্রকাশ থাকিয়া সরেনকে দেখিয়া আসিলেন। তাহার স্বভাবচরিত্র সম্বন্ধে গোপনে একট অনুসন্ধানও করিলেন। বুঝিলেন, সে যবেকের চরিত্র অনিন্দনীয়। ফিরিয়া আসিয়া উমাচরণ বললেন, “বন্ধ তোমার ছেলেটিকে দেখে এলাম। আমার ত বেশ পছন্দই হয়েছে। আমার আমলাকে তা হ’লে তুমি নাও—সে তোমার ছেলের অনুপযুক্ত হবে না।” শ্যামাচরণ বলিলেন, “তা হলে, সেই পরামশাই রইল ত ? ছেলের যা কোট, বিয়ের সময় শুধ শাঁখা-শাড়ী পরিয়ে, একটি হত্তকী দিয়ে তুমি কন্যাদান করবে ; তার পরদিন চপি চাপি এসে আমি টাকাটা নিয়ে যাব। দেনাটাও ফেলে দেবো, বউমার জন্যে গয়নাগটিও গড়াতে দেবো।” উমাচরণ কিছুক্ষণ ভাবিলেন ; তাহার পর বলিলেন, “সে যেন হ’ল, কিন্তু তোমার যে দেনাশোধ হয়ে গেল, তুমি যে পত্রবধর অলঙ্কার গড়াচ্ছ, এ সব কা’র টাকাতে, সে কথা জানতে কি খোকার বাকী থাকবে ? তখন যদি সে বেকে বসে ? যদি বলে আমায় ঠকিয়ে বিবাহ দেওয়া হয়েছে, ও সন্ত্রীকে আমি গ্রহণ করবো না ?” শ্যামাচরণ বলিলেন, “না নী—তা কি আর সে করতে পারে? একবার বিয়ে হয়ে গেলে, তার পর বিবাহিতা সন্ত্রীকে কি সে ত্যাগ করতে পারে ? লেখাপড়া শিখেছে, একটা কত্তব্যজ্ঞান ত আছে।” উমাচরণ বলিলেন, “কি জানি ভাই, আজকালকার ছেলেদের কত্তব্যজ্ঞান যে ভীষণ । কোনটা যে তাদের কত্তব্য আর কোনটা যে নয়, তা আমরা, সেকেলে মানুষ, বুঝিও না ছাই! কৰ্ত্তব্যের অনুরোধে সাপকে যে জেলে পাঠাতে প্রস্তুত, সে সাঁকে ত্যাগ করবে, তা আর আশচষ্য কি ?” এই সময় ডাকওয়ালা একখানা চিঠি দিয়া গেল। সরেনের চিঠি। সরেন লিখিয়াছে, আগামী ১২ই এপ্রিল তাহাদের ল’ কলেজ গ্রীষ্মাবকাশের জন্য বন্ধ হইবে। যে ফারমে সে চাকরী করে, তাঁহারা দাজিলিঙে তাঁহাদের একটি ব্রাঞ্চ খলিতে মনস্থ করিয়াছেন। সেই কারণে ছোটসাহেবের সঙ্গে তাহাকেও দাজিলিঙে গিয়া মাসখানেক থাকিতে হইবে t মাসখানেক সে এখন বাড়ী আসিতে পারবে না, ইত্যাদি—পাখানি পড়িয়া, শ্যামাচরণ সেখানি খন্ধর হাতে দিলেন। পত্র পড়িয়া, উমাচরণ বলিলেন, “ভালই হ’ল!” শ্যামাচরণ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ভাল হ’ল ?” “দাঁড়াও, একটা ভেবে চিতে দেখি, তার পর তোমার বলবো এখন।”—বলিয়া হাসিতে হাসিতে তিনি প্রস্থান করিলেন।