পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

उन যে দিনের ঘটনা উপরে বর্ণিত হইল, সেই দিনই সন্ধ্যাবেলায় ডাক্তার সাহেব আসিয়া নিরঞ্জনের ব্যাধি টাইফয়েড বলিয়া নিন্দেশ করিয়াছিলেন এবং শিক্ষিত শাশ্রষাকারিণীদের বারা চব্বিশ ঘণ্টা শশ্রষার প্রয়োজন জ্ঞাপন করিয়া যান। যে বদ্ধ ভূতাকে রোগশয্যার প্রান্তে বসিয়া তাহার মনিবের পয়ে হাত বলাইতে দেখা গিয়াছিল, তাহার নাম রামকৃষ্ণ । —সে নিরঞ্জনের পিতার আমলের ভূতা—নিরঞ্জনকে সে কোলে পিঠে করিয়া মানুষ করিয়া*ছল। রালি ৯টার মধ্যে দুইজন নাস আসিবে, ইহা বলিয়া ডাক্তার সাহেব প্রস্থান করিবার পর, দেশে মাতুল মহাশয় রাজেন্দ্রবাবকে নিরঞ্জনের পীড়ার সংবাদ তারযোগে জানাইয়া তাঁহাকে আসিতে বলা হয়। অনিলই ট্যাক্সিতে গিয়া টেলিগ্রাম করিয়া আসিয়াছিল। তদনুসারে বন্ধ রাজেন্দ্ৰবাব তৃতীয় দিন প্রভাতেই কলিকাতায় আসিয়া পেপছিলেন। ডাক্তার সাহেব এবং অপর একজন খ্যাতিমান বাঙ্গালী ডাক্তার দুই বেলাই আসিয়া রোগীকে দেখিতেছেন, এবং তাঁহাদের উপদেশ অনুসারে জেসি এবং ডোরা কতৃক অক্লান্ত শুশ্ৰুষাও চলিতেছে। অনিলও প্রত্যহ আসে,—বন্ধকে দেখিয়া যায়। সঙ্কটের দিনগুলি একে একে উত্তীণ হইয়া যাইতে লাগিল। চারি সপ্তাহ পরে চিকিৎসকগণ বলিলেন, আর কোনও আশঙ্কা নাই—তবে পথ্য দিবেন আরও কয়েক দিন বিলবে। তাঁহারা ইহাও জনাইলেন যে, এখন আর দুইজন শশ্রেষাকারিণীর প্রয়োজন নাই—একজন থাকিলেই যথেষ্ট হইবে। ডোরা প্রথম প্রথম ছটী হইলে “নাসেস হোম"-এ গমন করত। তাহার পর এই বাড়ীতেই তাহাকে নিভৃত ও স্বতন্ত্র একটি ঘর দেওয়া হয়, বামনঠাকুরের রান্না ডাল, ভাত, তরকারী উপাদেয় জ্ঞানে আহার করিয়া, ছটাঁর সময়টা সে এই বাড়ীতেই যাপন করিতে থাকে। তা ছাড়া, ডোরা কোনও মৈমসাহেবগিরি ফলায় না বলিয়াও বটে এবং অতি যত্নে রোগীর শুশ্ৰষা করে বলিয়াও বটে, ইহাকে সকলেরই বড় ভাল লাগিয়াছে। রাজেন্দ্রবাব তাহাকে মাতৃ-সম্বোধন করেন, রামকৃষ্ণ ও অনন্য ভূত্যেরা তাহাকে অসকোচে দিদিমণি বলিয়া ডাকে,—সে যেন পরিবারস্থ একজনের মতই হইয়া পড়িয়াছে। সুতরাং মিস জেসিকে বিদাষ দিয়া ডোরাকে রাখাই সম্বর হইল। পরদিন রাজেন্দ্ৰবাব নিরঞ্জনকে বলিলেন, “বাবা এখন তুমি বেশ সেরে উঠেছ এইবার আমি ফিরে যাই না কেন ? দহপ্তার উপর হ’ল এসেছি—সেখানে কাজকম কি ভাবে চলছে না চলছে কিছুই ও বুঝতে পারছি না। একবার মনে করেছিলাম তুমি পথ্য পেলে তার পর যাব—কিন্তু তা হলে আরও ৩৪ দিন দেরী হয়ে যায়।” নিরঞ্জন বলিল, “আমার জন্যে বেশী কিছ ভাববেন না মামাবাব। আমি ত এখন বেশ ভাল হয়ে উঠেছি—ক্ষিদেও খুব হয়েছে—দটি ভাত পেলেই এখন বচি। আপনি সবে যেতে চান ?” “আজই সন্ধ্যার গাড়ীতে রওয়ানা হই ।” “আচ্ছা বেশ, যা ভাল হয় তাই করন মামাবাব।” এই সময় ডোরা প্রবেশ করিল। রাজেন্দ্ৰবাব বলিলেন, “ডোরা মা, তোমার চা খাওয়া হ’ল ?” “না মামাবাব; আমি যে আজ আপনার সঙ্গে চা খাব কাল আপনি বলেছিলেন।” “হা—িহ্যাঁ, বেশ ত। চল, তোমার ঘরে বসেই দুজনে চা খাইগে।” নিরঞ্জন বলিল, “ডোরা, তুমি চ খেয়ে এসে আমায় খবরের কাগজ পড়ে শোনাবে ত?” ' “শোনাব বইকি”—বলিয়া ডোরা রাজেন্দ্রবাবরে সহিত চলিয়া গেল। এক টেবিলে, ডোরার সহিত একত্র বসিয়া চা পান করিতে করতে রাজেন্দ্রবাব বুলিলেন, “তোমার সঙ্গে নিজনে একটা কথাবাত্ত কইবার জন্যেই তোমাকে এখানে