পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O8 - গল্প-গ্রন্থাবলী খাদ্য বাহা পাইলাম, সারাদিন অভুক্ত ছিলাম বলিয়াই সে সমস্ত উদরসাৎ করিয়া ফেলিলাম, নাহলে সাধ্য হইত না। wo ভিম হারদাদার আশ্রয়ে এই ভাবে বাস করিতে লাগিলাম। কি ভাবে, কাহার কাছে গিয়া চাকরির চেষ্টা করিতে হইবে, হারদাদাকে সে পরামশ জিজ্ঞাসা করিলাম, তিনি তাহাতে উত্তর করিলেন, বড় বড় আফিসে গিয়া বড়বাবদের সহিত আমার দেখা-সাক্ষাৎ করা উচিত। কোথায় আফিস, তাও চিনি না, বড়বাবরা কোথায় থাকেন, তা-ও জানি না। হারদা একদিন অবসর মত আমায় আফিস অঞ্চলে লইয়া গিয়া কয়েকটি অফিস চিনাইয়া দিলেন। প্রতিদিন আহারের পর আমি চাকরির চেষ্টায় আফিস অঞ্চলে যাই, ঘুরি ফিরি, বিকালে পদব্রজেই ভবানীপুরের বাসায় ফিরিয়া আসি। যেখানেই যাই, সেইখানেই তাড়া খাই। দেশে থাকিতে মনে করিতাম, পাস করিয়া আমি মন্সত একটা "কেউকেটা হইয়াছি। এখন দেখিলাম, আমি ত একটা মাত্র পাস, কত বি-এ, এম-এ চাকরির জন্য ফ্যা-ফ্যা করিয়া বেড়াইতেছে, কেহ তাহাদের ডাকিয়াও জিজ্ঞাসা করে না। কিছ দিন এই ভাবে হাঁটাহাঁটি করিয়া আমার ভরি বিরক্তি ধরিয়া গেল। বাবা ছিলেন অত্যন্ত সেকেলে, ভালমানষে লোক। আজকাল চাকরির বাজার যে কিরুপ, তাহা তিনি জানিতেন না বলিয়াই আমার সম্বন্ধে মনে তিনি ওরপে অভিপ্রায় পোষণ করিতেন। ভাবিলাম, আসিয়াছি যখন, আরও দিনকতক না হয় দেখি । তার পর দেশে ফিরিয়া যাইব । m হঠাৎ এক অচিন্তনীয় বিপদের মধ্যে পতিত হইলাম। দিনান্তে বাসায় ফিরিতেছিলাম। সে দিন একটা বিলম্বই হইয়া গিয়াছিল। ময়দানের পথ ধরিয়া আসিতেছিলাম, একটা রাস্তা পার হইবার সময় অতকিতে একটা মোটরগাড়ী আমার উপর আসিয়া পড়িল। ভীষণ একটা ধাক্কা খাইলাম. এইটুকুমাত্র আমার সমরণ আছে--তার পর সব অষ্টধকার ! प्रा যখন চক্ষ খলিলাম, দেখিলাম, আমি এক পালঙ্কের উপর শয়ন করিয়া রহিয়াছি। মাথার উপব বিদ্যুৎ পাখা মদভাবে ঘুরিতেছে। পট দিবালোক, কিন্তু ঘরে মনুষ্য নাই । পাশ ফিরিবার চেষটা করিলাম, কিন্তু পারিলাম না। পিঠে-কোমরে অত্যন্ত ব্যথা। কি করিয়া ষে আমি এখানে আসিলাম, তাহা কিছু সমরণ করিতে পারিলাম না; তবে এটুকু মনে পড়িল যে, আমি নগেন্দ্র মণ্ডল, ম্যাট্রিক পাস করিয়াছি, চাকরির চেন্টায় কলিকাতায় আসিয়াছিলাম। আমি যে মোটব চাপা পড়িয়াছিলাম, এ কথা আমার তখন কিছুমার স্মরণ হইল না। , কক্ষটির চারিদিকে আমি চাহিয়া দেখিতে লাগিলাম। আসবাবপত্রগুলি সমস্তই মল্যবান । ইহা কোনও ধনী ব্যক্তির গহ, তাহা বেশ কঝিলাম। কিন্তু আমি এখানে আসিয়া এ বিছানায় শুইলাম কি করিয়া : শইয়া শুইয়া এইরুপ ভাবিতেছি, এমন সময় কাহার পদশব্দ শুনিতে পাইলাম। দেখিলাম, একজন সুবেশা রমণী, বয়স আন্দাজ ৩০ বৎসর চটিজতো পায়ে দিয়া পালঙ্কের নিকট আসিতেছেন। আমি বিশ্চিমত হইয়া তাঁহার মুখপানে চাহিয়া রহিলাম।” নিকটে আসিয়া মহিলাটি বলিলেন, “এই যে, জেগেছেন আপনি ? কেমন আছেন বলন দেখি ?"