পাতা:গল্প-গ্রন্থাবলী (প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়) তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

• నిషి ty গল্প-গ্রন্থাবলী স্বামী বলিয়া চিনিতে পারলেন না। সেদিন বড় গরম। কোথাও গাছের পাতাটিও নড়িতেছে না। গ্রীষ্মবোধ করিয় রাজকন্যা সখিগণ সহ অল্পে অলেপ সরোবরের নিকটবৰ্ত্তিনী হইলেন। দেখিলেন, জলে অনেকগলি পদ্মফল—কোনটি কলিকা-এখনও ফটে নাই, কোনটি ফটিয়া আছে, কোনটি গতকল্যকার বাসি ফল-মদিত হইয়া রহিয়াছে। রাজকন্যা দেখিলেন সেইরুপ একটি মুদ্রিতদল পদ্ম ধীরে ধীরে দলিতেছে। ইহা দেখিয়া বিচ্ছিমত হইয়া তিনি সখিগণকে জিজ্ঞাসা করিলেন— অনিলস্য গমো নাস্তি বিপদো নৈব দশ্যতে। জলমধ্যে স্থিতং পদ্মং কল্পিতং কেন হেতুনা ॥ – বাতাস নাই, কোন পাখীও দেখিতেছি না (যে বলিব, হয়ত পমের উপর বসিয়াছিল, এইমাত্র উড়িয়া গিয়াছে, তাই দলিতেছে ) তবে জলমধ্যে পিথত পদ্মটি কাঁপিতেছে কেন ?" সখিগণ পরম্পরের মখাবলোকন করিতে লাগিল—কেহই রাজকন্যার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিল না। কালিদাসের জপকাল কয়েক মহত্তে পাবে শেষ হইয়াছিল। রাজকন্যার শেলাকটি তাঁহার কর্ণগোচর হইল। তিনি চাহিয়া দেখিলেন, দেখিয়াই রাজকন্যাকে চিনিতে পারিলেন। সখীরা কেহ কোনও উত্তর দিল না দেখিয়া কালিদাস বলিলেন,— পাবকোচ্ছিন্টবৰ্ণস্য শব্বষাং বন্ধনং কৃতং। মোক্ষং ন লভতে কান্তে কম্পিতং তেন হেতুনা৷ —“হে কান্তে, অগ্নির উচ্ছিণ্ট ( অথৰ্ণং কালো ) বর্ণ যার, তাকে (অর্থাৎ ভ্রমরকে— পদ্ম ) রাত্রিকালে (মাদ্রিত হইয়া ) বন্ধন করিয়াছে, (ভ্রমর বাহির হইবার জন্য ভিতরে ছটফট করিতেছে) বাহির হইতে পারিতেছে না, তাই (পদ্ম ) কাঁপিতেছে।” এই উত্তর শনিয়া, প্রথমেই রাজকন্যার বিসময়বোধ হইল যে, এ ব্যক্তি আমাকে “কাতা" সম্বোধন করিতেছে কেন ? এবং শেলাকরচয়িতার পন্ডিত্য ও কবিত্বশক্তি দেখিয়াও তিনি অত্যন্ত মগধ হইলেন। কিয়ৎক্ষণ অাড়চোখে লোকটির পানে চাহিয়া, শেষে চিনিতে পারলেন—ইনিই আমার সেই একরারির স্বামী । তখন রাজকন্যা স্বামীর সমীপবত্তি’নী হইয়া, বিনয়নম্নমস্তকে, মিনতির স্বরে বলিলেন, “আমি তোমার মল্য না বুঝিয়া, তোমায় চিনিতে না পারিয়া, তোমার সহিত অতি অন্যায় ব্যবহার করিয়াছিলাম। আমার অপরাধ তুমি মাতজনা কর।” কালিদাস বলিলেন, “রাজকুমারী, তুমি কোনও অপরাধ কর নাই—তোমায় মাজনা করিবার কিছুই নাই। তুমি আমার মহা উপকার করিয়াছ। তুমি যদি সেদিন আমার সহিত ওরাপ কঠোর ব্যবহার না কবিয়া, আমায় অাদর যত্ন করিতে, তবে আমি যেমন মখে* ছিলাম, চিরজীবন সেইরাপই থাকিয়া যাইতাম। তোমার নিকট ওরপে ব্যবহার প্রাপ্ত হইয়া মনের দুঃখে আমি এই বনে আসি, এবং মহাযোগীর সাক্ষাৎ পাই। তাঁহার অচ্চনা করিয়া আমি কবিত্ব-বরলাভ করিয়াছি—কিন্তু তুমিই এ সকলের মালীভূত কারণ। সুতরাং যাবজীবন তোমার নাম কৃতজ্ঞতাপবেক আমি স্মরণ করিব।” রাজকন্যা স্বামীকে ফিরাইয়া নিজ পিতৃ-গহে লইয়া যাইবার জন্য অনেক চেষ্টা করিলেন, কিন্তু কালিদাস কিছতেই সন্মত হইলেন না। তিনি বললেন, “তোমা হইতেই আমার জ্ঞানচক্ষ ফটিয়াছে; সতরাং তুমি আমার গ্রন্থানীয়া। কল্যাণি, তুমি গহে যাও—তোমার সহিত আমার পতি-পত্নী ভাব এখন আর সম্ভব নহে।" অবশেষে দুঃখিত চিত্তে রাজকন্যা গহে প্রত্যাগমন করিলেন।