পাতা:গীতবিতান.djvu/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৮
পূজা

৫৭৯

মোর পথিকেরে বুঝি এনেছ এবার মোর করুণ রঙিন পথ!
এসেছে এসেছে আহা অঙ্গনে এসেছে, মোর দুয়ারে লেগেছে রথ॥
সে যে সাগরপারের বাণী মোর পরানে দিয়েছে আনি, আহা
তার আঁখির তারার যেন গান গায় অরণ্যপর্বত॥
দুঃখসুখের এ পারে, ও পারে, দোলায় আমার মন—
কেন অকারণ অশ্রুসলিলে ভরে যায় দু’নয়ন।
ওগো নিদারুণ পথ, জানি— জানি পুন নিয়ে যাবে টানি, আহা, তারে—
চিরদিন মোর যে দিল ভরিয়া যাবে সে স্বপনবৎ॥

৫৮০

ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা—
আন্‌মনা যেন দিক্‌বালিকার ভাসানো মেঘের ভেলা॥
যেমন হেলায় অলস ছন্দে কোন্ খেয়ালির কোন্ আনন্দে
সকালে-ধরানো আমের মুকুল ঝরানো বিকালবেলা॥
যে বাতাস নেয় ফুলের গন্ধ, ভুলে যায় দিনশেষে,
তার হাতে দিই আমার ছন্দ— কোথা যায় কে জানে সে।
লক্ষ্যবিহীন স্রোতের ধারায় জেনো জেনো মোর সকলই হারায়,
চিরদিন আমি পথের নেশায় পাথেয় করেছি হেলা॥

৫৮১

না রে, না রে, হবে না তোর স্বর্গসাধন—
সেখানে যে মধুর বেশে ফাঁঁদ পেতে রয় সুখের বাঁধন॥
ভেবেছিলি দিনের শেষে তপ্ত পথের প্রান্তে এসে
সোনার মেঘে মিলিয়ে যাবে সারা দিনের সকল কাঁদন॥
না রে, না রে, হবে না তোর, হবে না তা—
সন্ধ্যাতারার হাসির নীচে হবে না তোর শয়ন পাতা।
পথিক বঁধু পাগল ক’রে পথে বাহির করবে তোরে—
হৃদয় যে তোর ফেটে গিয়ে ফুটবে তবে তাঁর আরাধন॥