পাতা:গীতবিতান.djvu/৬৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১৪
প্রকৃতি

২১৮

দখিন-হাওয়া জাগো জাগো, জাগাও আমার সুপ্ত এ প্রাণ।
আমি বেণু, আমার শাখায়  নীরব যে হায় কতনা গান।  জাগো জাগো।
পথের ধারে আমার কারা  ওগগা পথিক বাঁধন-হারা,
নৃত্য তোমার চিত্তে আমার  মুক্তি-দোলা করে যে দান।  জাগো জাগো।
গানের পাখা যখন খুলি  বাধা-বেদন তখন ভুলি।
যখন আমার বুকের মাঝে  তোমার পথের বাঁশি বাজে
বদ্ধ ভাঙার ছন্দে আমার  মৌন-কাঁদন হয় অবসান।  আগো জাগো।

২১৯

সহসা  ডালপালা তোর উতলা যে  ও চাঁপা,  ও করবী!
কারে তুই  দেখতে পেলি আকাশ-মাঝে জানি না যে।
কোন্ সুরের মাতন হাওয়ায় এসে  বেড়ায় ভেসে  ও চাঁপা,  ও করবী!
কার নাচনের নূপুর বাজে  জানি না যে।
তোরে  ক্ষণে ক্ষণে চমক লাগে।
কোন্ অজানার ধেয়ান তোমার মনে জাগে।
কোন্  রঙের মাতন উঠল দুলে  ফুলে ফুলে  ও চাঁপা,  ও করবী!
কে সাজালে রঙিন সাজে  জানি না যে।

২২০

সে কি ভাবে গোপন রবে লুকিয়ে হৃদয় কাড়া।
তাহার আসা হাওয়ায় ঢাকা, সে যে সৃষ্টিছাড়া।
হিয়ায় হিয়ায় জাগল বাণী,  পাতায় পাতায় কানাকানি—
‘ওই এল যে’ ‘ওই এল যে’ পরান দিল সাড়া।
এই তো আমার আপ্‌নারই এই ফুল-ফোটানোর মাঝে
তারে দেখি নয়ন ভ’রে নানা রঙের সাজে।
এই-যে পাখির গানে গানে  চরণধ্বনি বয়ে আনে,
বিশ্ববীণার তারে তারে এই তো দিল নাড়া।