দিতে পারি নে— সে তোমাদেরই ভালোর জন্যে।”
মহিম নিষ্ঠুরভাবে কহিলেন, “আমাদের ভালোর কথা ভাববার ভার যদি আমাদেরই 'পরে দাও তা হলে তোমাকেও কোনো কথা শুনতে হয় না, আর আমাদেরও হয়তো ভালোই হয়। বরঞ্চ শশিমুখীর বিয়েটা হয়ে গেলে তার পরে আমাদের ভালোর চিন্তা কোরো। কী বল?”
আনন্দময়ী ইহার পরে কোনো উত্তর না করিয়া একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন এবং মহিম পকেটের ডিবা হইতে একটি পান বাহির করিয়া চিবাইতে চিবাইতে চলিয়া গেলেন।
৪৬
ললিতা পরেশবাবুকে আসিয়া কহিল, “আমরা ব্রাহ্ম বলে কোনো হিন্দু মেয়ে আমাদের কাছে পড়তে আসতে চায় না— তাই মনে করছি হিন্দুসমাজের কাউকে এর মধ্যে রাখলে কাজের সুবিধা হবে। কী বল বাবা?”
পরেশবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “হিন্দুসমাজের কাউকে পাবে কোথায়?”
ললিতা খুব কোমর বাঁধিয়া আসিয়াছিল বটে, তবু বিনয়ের নাম করিতে হঠাৎ তাহার সংকোচ উপস্থিত হইল; জোর করিয়া সংকোচ কাটাইয়া কহিল, “কেন, তা কি পাওয়া যাবে না? এই-যে বিনয়বাবু আছেন— কিংবা—"
এই কিংবাটা নিতান্তই একটা ব্যর্থ প্রয়োগ, অব্যয় পদের অপব্যয় মাত্র। ওটা অসমাপ্তই রহিয়া গেল।
পরেশ কহিলেন, “বিনয়! বিনয় রাজি হবেন কেন?”
ললিতার অভিমানে আঘাত লাগিল। বিনয়বাবু রাজি হবেন না! ললিতা এটুকু বেশ বুঝিয়াছে, বিনয়বাবুকে রাজি করানো ললিতার পক্ষে অসাধ্য নহে।
ললিতা কহিল, “তা তিনি রাজি হতে পারেন।”
পরেশ একটু স্থির হইয়া বসিয়া থাকিয়া কহিলেন, “সব কথা বিবেচনা করে দেখলে কখনোই তিনি রাজি হবেন না।”