পাতা:চিঠিপত্র (দশম খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনুভব করিয়া প্রাচীন শাস্ত্র অন্বেষণে প্রবৃত্ত হন। যদিচ প্রচলিত ধর্ম্ম-সংস্কার তিনি পরিত্যাগ করিয়াছিলেন, তথাপি স্বদেশের শাস্ত্রকেই দেশের ধর্ম্মোন্নতির ভিত্তিরূপে তিনি গ্রহণ করিয়াছিলেন।

 তিনিই তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় বেদ উপনিষদের আলোচনা ও বিলাতী বিজ্ঞানতত্ত্ব প্রভৃতির প্রচার বাংলা ভাষায় প্রবর্তন করেন। আদি ব্রাহ্মসমাজ বিদেশী ধর্ম্ম হইতে স্বধর্ম্মে ও বিদেশী ভাষা হইতে মাতৃভাষায় শিক্ষিত সম্প্রদায়কে আকর্ষণ করিবার চেষ্টা করেন।

 কেশববাবুরা যখন ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করিয়া ব্রাহ্মধর্ম্মের সহিত হিন্দুসমাজের বিচ্ছেদ-সাধনের উপক্রম করিলেন তখন দেবেন্দ্রনাথ হিন্দুসমাজকে ত্যাগ করিলেন না— ব্রাহ্মধর্ম্মকে হিন্দু-সমাজেরই অঙ্গ বলিয়া গণ্য করিলেন। আধুনিক শিক্ষিত চিত্তকে স্বদেশের অভিমুখী করিবার এই প্রয়াস।

 দেবেন্দ্রনাথের পরিবারে আধুনিক শিক্ষার সহিত স্বদেশী ভাবের সমন্বয় চেষ্টা বরাবর কাজ করিতে লাগিল। হিন্দুমেলা এই স্বদেশী ভাবের আর একটি অভ্যুত্থান। দ্বিজেন্দ্রনাথ, গণেন্দ্রনাথ, নবগোপাল মিত্রকে সাহায্য করিয়া এই মেলার প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে স্বদেশী শিল্পের, স্বদেশী মল্লবিদ্যার, স্বদেশী games এর প্রদর্শনী হইত—স্বদেশী গান গীত ও স্বদেশী কবিতা আবৃত্ত হইত।

 তাহার পর বঙ্কিমের বঙ্গদর্শন বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকভাবে পরিপুষ্ট করিয়া দেশের শিক্ষিতগণকে মাতৃভাষায় জাতীয় সাহিত্য রচনায় উৎসাহিত করিয়া তুলিল। ইহার কিছুকাল পরে শশধরের প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য। ইতিমধ্যে বৃদ্ধ রাজনারায়ণ বস্তুকে লইয়া আমাদের পরিবারে সাধারণের অগোচরে স্বদেশীভাবের বিশেষরূপ চর্চ্চা হইতেছিল। গোপনে স্বদেশী দেশালাই ও উৎকর্ষপ্রাপ্ত তাঁত প্রভৃতি নির্মাণের জন্য চেষ্টা চলিতেছিল। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ এই স্বদেশী

৩১