পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, ৪ঠা জুলাই, ১৮৯৩ । আজ সকালবেলায় অল্প অল্প রৌদ্রের আভাস দিচ্চে । কাল বিকেল থেকে বৃষ্টি ধরে গেছে কিন্তু আকাশের ধারে ধারে স্তরে স্তরে এত মেঘ জমে আছে যে বড় আশা নেই। ঠিক যেন মেঘের কালে কার্পেটট সমস্ত আকাশ থেকে গুটিয়ে নিয়ে একপ্রান্তে পাকিয়ে জড় করেচে, এখনি একটা ব্যস্তবাগীশ বাতাস এসে আবার সমস্ত আকাশময় বিছিয়ে দিয়ে যাবে, তপন নীলাকাশ এবং সোনালি রৌদ্রের কোনো চিহ্নমাত্র দেখা যাবে না । এবারে এত জলও আকাশে ছিল ! আগমণদের চরের মধ্যে নদীর জল প্রবেশ করেছে । চাষার নেীকে বোঝাই করে র্কাচ ধান কেটে নিয়ে আসচে— আমার বোটের পাশ দিয়ে তাদের নেীকে যাচ্চে আর ক্রমাগত হাহাকার শুনতে পাচ্চি—যখন আর কয়দিন থাকলে ধান পাকত তখন কাচা ধান কেটে আন চাষার পক্ষে যে কি নিদারুণ তা বেশ বুঝতেই পারা যায়। যদি ঐ শীষের মধ্যে দুটাে চারটে ধান একটু শক্ত হয়ে থাকে এই তাদের আশা । প্রকৃতির কার্য্যপ্রণালীর মধ্যে দয়া জিনিষটা কোনো এক জায়গায় আছে অবশু, নইলে আমরা পেলুম কোথা থেকে— কিন্তু সেটা যে ঠিক কোনখানে আছে খুজে পাওয়া শক্ত । এই শত সহস্র নির্দোষ হতভাগ্যের নালিশ কোন জায়গায় গিয়ে পেচচ্ছে না, বৃষ্টি যেমনি পড়বার তেমনি পড়চে, নদী যেমন বাড়বার তেমনি বাড়চে, বিশ্বসংসারে এ সম্বন্ধে করে কাছে কোনো দরবার পাবার যে নেই। মনকে বোঝাতে হয় যে কিছু বোঝবার যে নেই—কিন্তু জগতে যে দয়া এবং ন্যায়বিচার আছে এটুকু বোঝা নিতান্ত আবশ্বক। কিন্তু এ সমস্ত মিথ্যে খুংখুং মাত্ৰ—কেনন। স্বষ্টি কখনই সম্পূর্ণ সুখের হতে পারে না। যতক্ষণ অপূর্ণত। ততক্ষণ অভাব ততক্ষণ দুঃখ থাকবেই। জগৎ যদি জগৎ না হয়ে ঈশ্বর হত তাহলেই কোথাও কোনো খুং থাকৃত না –কিন্তু ততটা দূর পর্য্যন্ত দরবার করতে সাহস হয় না । ভেবে দেখলে সকল কথাই গোড়ায় গিয়ে ঠেকে যে, সৃষ্টি হল কেন—