পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৫১

খাটুনির একটা কাজ টাজ তুমি করতে পারবে। আমি আর কতকাল চালাব?

 বাড়ির টাকা পেলে, বাড়িটা কার?—শীতল বলে।

 বটে। তাই তবে শীতল মনে করিয়াছে, তার বাড়ির টাকায় এতকাল চলিয়াছে, আর তাহার কিছু করিবার প্রয়োজন নাই। এতকাল সেই সংসার চালাইয়াছে এই কথা ভাবিয়া রাখিয়াছে শীতল? এবার তাই তাহার বসিয়া থাকার অধিকার জন্মিয়াছে।

 এসব জ্ঞান তো টনটনে আছে দেখি বেশ—শ্যামা বলে।

 কুকুরটা উঠিয়া যায়। শীতলের দৃষ্টি তাহাকে অনুসরণ করে। তারপর আবার কাতর কণ্ঠে সে বলে, আমার অসুখ যে গো!

 একদিনে হাল ছাড়িবার পাত্রী শ্যামা নয়। বার বার শীতলকে সে তাহাদের অবস্থাটা বুঝাইবার চেষ্টা করে। কড়া কথা সে বলে না, লজ্জা দেয় না, অপমান করে না। আবার বাহির হইয়া ঘরে টাকা আনা শীতলের পক্ষে এখন কত কঠিন সে তা বোঝে পারুক না পারুক গা ঝাড়া দিয়া উঠিয়া শীতল একবার চেষ্টা করুক এইটুকু শুধু তার ইচ্ছা।

 রাখালকে শ্যামা একদিন বলিয়াছিল, ঠাকুরজামাই, আবার তো আমি নিরুপায় হলাম?

 কেন? অতটাকা কি করলে বৌঠান? বলেছিলাম টাকা তুমি রাখতে পারবে না—

 ঠাকুরজামাই ছেলেকে আমার বি-এটা আপনি পাশ করিয়ে দিন।

 পড়ার খরচ দেবার কথা বলছ বৌঠান?

 হ্যাঁ, রাখাল এবাএ রাগ করিয়াছিল। সে কি রাজা না জমিদার? কতটাকা মাহিনা পায় সে শ্যামা জানে না? একি অন্যায় কথা যে শ্যামা ভুলিয়া যায় ক্ষমতার মানুষের একটা সীমা আছে। আজ কতবছর শ্যামা সকলকে লইয়া এখানে আছে, কত অসুবিধা হইয়াছে রাখালের। কত টানাটানি গিয়াছে তাহার কিন্তু কিছু সে বলে নাই। বলে নাই এই ভাবিয়া যে যতদিন তার দুমুঠো ভাত জুটিবে শ্যামার ছেলেমেয়েকে একমুঠা তাকে দিতে হইবে, সেটা তার কর্তব্য। তাই কি শ্যামা যথেষ্ট মনে করে না একটা ছাঁপোষা মানুষের পক্ষে?