গান্ধীর কার্য্যাবলীর উদ্দেশ্য যে ভারতের ‘স্বাধীনতা’-লাভ, এই ভ্রান্ত বিশ্বাসের বশে সুভাষচন্দ্র তাঁহার ঐ গ্রন্থে গান্ধীর কর্ম্ম-পন্থার সদর্থ করিতে পারেন নাই; কখনও তাঁহাকে অতিশয় সরল, রাজনীতিঅনভিজ্ঞ, আত্মমতনিষ্ঠ ভাবিয়া দুঃখ করিয়াছেন, কখনও বা, তাঁহার স্পষ্ট দ্বৈতাচার ও সংগ্রাম-ভীরুতা দেখিয়া বিস্মিত ও মর্ম্মাহত হইয়াছেন। তিনি যদি গান্ধীর সেই নিজস্ব দৃঢ় প্রত্যয় ও তদনুযায়ী একটা গভীর গোপন নীতির প্রয়োগ-চাতুর্য্য বুঝিতে পারিতেন, তবে নিজেই ভুল করিয়া বারবার বিড়ম্বনা ভোগ করিতেন না। প্রথম দশ বৎসর অর্থাৎ ১৯২০ হইতে ১৯৩০ পর্য্যন্ত, গান্ধী তাঁহার সেই বিশ্বাস ত্যাগ করেন নাই―আশা ছিল যে, ইংরেজের মতি-পরিবর্ত্তন করিয়া, তিনি ভারতবাসীর জন্য এমন একটু প্রজাস্বত্ব আদায় করিতে পারিবেন, যাহা বর্ত্তমানের পক্ষে যথেষ্ট। তাই “স্বাধীনতা”, “স্বরাজ” প্রভৃতির অর্থ লইয়া কংগ্রেসে এত বাদ-বিতণ্ডা হইত; গান্ধী সে সময়ে অতিশয় সতর্ক থাকিতেন, অতিশয় সাবধানে পক্ষ-সমর্থন করিতেন। “পূর্ণ স্বরাজ” বলিতেও তিনি “Substance of Independence” এইরূপ বাক্যের আড়ালে আশ্রয় লইতেন। তিনি জানিতেন, প্রজাসাধারণ ঐরূপ স্বরাজের মর্ম্ম বুঝে না, কেবল ভাত-কাপড়ের দুঃখ ঘুচিলেই হইল। ব্রিটিশ একথা বুঝিবেই, না বুঝিলে ঐ স্বরাজের দাবী উত্তরোত্তর বাড়িতে থাকিলে তাহারেরই সমূহ বিপদ―গোলটেবিল-বৈঠকে তিনি তাহাদিগকে সেই ভয় দেখাইয়াছিলেন; তিনি যে তাহাদের কত বড় হিতৈষী বন্ধু, তাহা বারবার প্রমাণ করিতে ক্লান্তিবোধ করেন নাই। ইহার জন্য, অর্থাৎ ইংরেজ যাহাতে তাঁহাকে বিশ্বাস করে তজ্জন্য, তিনি ঐ বিপ্লবীদিগের প্রতি কিছুমাত্র পক্ষপাত বা সহানুভূতি প্রকাশ করিতে বিরত ছিলেন। বড়লাট আরউইনের সহিত সেই চুক্তি করিবার কালে
পাতা:জয়তু নেতাজী.djvu/২৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২৬
জয়তু নেতাজী
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/7e/%E0%A6%9C%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A4%E0%A7%81_%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%80.djvu/page266-1024px-%E0%A6%9C%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A4%E0%A7%81_%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%80.djvu.jpg)