পাতা:জীবনানন্দ দাশের কাব্যগ্রন্থ (দ্বিতীয় খণ্ড).pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমাদের পৃথিবীর হে আদিম উষাপুরুষেরা, তোমরা দাড়িয়েছিলে, মনে আছে, মহাত্মার ঢের দিন আগে ; কোথাও বিজ্ঞান নেই, বেশি নেই, জ্ঞান আছে তবু ; কোথাও দর্শন নেই, বেশি নেই, তবুও নিবিড় অস্তর্ভেদ। দৃষ্টিশক্তি রয়ে গেছে ঃ মানুষকে মানুষের কাছে ভালো স্নিগ্ধ আন্তরিক হিত মানুষের মতো এনে দাড় করাবার ; তোমাদের সে-রকম প্রেম ছিল, বহ্নি ছিল, সফলত ছিল । তোমাদের চারপাশে সাম্রাজ্য রাজ্যের কোটি দীন সাধারণ পীড়িত রক্তাক্ত হয়ে টের পেত কোথাও হৃদয়বত্ত নিজে নক্ষত্রের অনুপম পরিসরে হেমস্তের রাত্রির আকাশ ভ’রে ফেলে তারপর আত্মঘাতী মানুষের নিকটে নিজে ব দয়ার দানের মতো একজন মানবীয় মহানুভবকে পাঠাতেছে,—প্রেম শান্তি আলে৷ এনে দিতে,—মানুষের ভয়াবহ লৌকিক পৃথিবী ভেদ ক’রে অন্তঃশীল করুণার প্রসারিত হাতের মতন । তারপর ঢের দিন কেটে গেছে ;--- অাজকের পৃথিবীর অবদান আরেক রকম হয়ে গেছে ; যেই সব বড়-বড় মানবের আগেকার পৃথিবীতে ছিল তাদের অন্তর্দান সবিশেষ সমুজ্জ্বল ছিল, তবু আজ আমাদের পৃথিবী এখন ঢের বহিরাশ্রয়ী । যে সব বৃহৎ আত্মিক কাজ অতীতে হয়েছে— সহিষ্ণুতায় ভেবে সে-সবের যা দাম তা দিয়ে তবু আজ মহাত্মা গান্ধীর মতো আলোকিত মন মুমুক্ষর মাধুরীর চেয়ে এই আশ্রিত আহত পৃথিবীর কল্যাণের ভাবনায় বেশি রত ; কেমন কঠিন ব্যাপক কাজের দিনে নিজেকে নিয়োগ ক’রে রাখে অ লেল অন্ধকারে রক্তে—কেমন শান্ত দৃঢ়তায় ।